ওঁরা যখন খেলতেন তখনই ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ জেতেন গর্ডন ব্যাঙ্কস। তাঁরা যখন ভারতীয় ফুটবলে আলো ছড়াচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ই বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপারকে নিয়ে আলোড়িত হচ্ছে ফুটবল মহল।
বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি গোলকিপার গর্ডন ব্যাঙ্কসকে ভারতের তিন প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার চুনী গোস্বামী, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসীদাস বলরাম সামনাসামনি কখনও দেখেননি। ভিডিয়ো ক্যাসেট, সিনেমা, বই বা খবরের কাগজ থেকেই তাঁকে চেনা তিনজনের। সেই ব্যাঙ্কসের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিন প্রাক্তন বলে দিয়েছেন, ‘‘ওঁকে টপকে গোল করতে তো স্বয়ং পেলেকেই হিমশিম খেতে হয়েছে।’’ তবে তিন জনেই একটি ব্যাপারে একমত। যত অবিশ্বাস্য সেভই করুন, রাশিয়ার লেভ ইয়াসিনের পরেই থাকবেন ব্যাঙ্কস।
‘‘ইয়াসিন ভারতে এসেছিলেন বলেই সামনে থেকে দেখেছিলাম। ইংল্যান্ড গেলেও গর্ডন ব্যাঙ্কসকে দেখিনি। তবে ক্যাসেট বা ফিল্মে ওঁকে যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে, অনুমান ক্ষমতাই ব্যাঙ্কসের সব চেয়ে বড় শক্তি ছিল,’’ বলে দিলেন একাশি পেরিয়ে আসা চুনী। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমি মনে করি ববি মুর যতই ভাল খেলুন বা জেফ হার্স্ট যতই গোল করুন না কেন, ব্যাঙ্কস গোলে না থাকলে জার্মানিকে ফাইনালে হারাতে পারত না ইংল্যান্ড।’’
বাড়িতে অসুস্থ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাঙ্কসের মৃত্যু সংবাদ শোনা সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, ‘‘খুব খারাপ খবর শুনলাম। আমাদের সমবয়সি। অসাধারণ গোলকিপার, কিন্তু তাও ওঁকে লেভ ইয়াসিনের আগে রাখতে পারব না। ব্যাঙ্কসের সব চেয়ে বড় গুণ ছিল, উনি গোলের মুখ ছোট করে ফেলতেন। যাতে বিপক্ষের বল পায়ে থাকা ফুটবলার থমকে যায়। পেলে বা ফ্রানৎস বেকেনাবাউয়ারের মতো ফুটবলার ওঁর প্রশংসা করেছেন মুক্তকণ্ঠে।’’
বিরাশির পি কে এখন বাড়ি থেকে কম বেরোন। এ দিন বিকেলে তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘অনেক কিছুই দেখেছি। অনেক কিছু দেখিনি। যা দেখিনি তার মধ্যে পড়বে ব্যাঙ্কসের খেলা। ভারতে এলে হয়তো দেখা হত। তবে ইংল্যান্ডের স্টেডিয়ামে ওঁর বিশ্বকাপ হাতে ছবি দেখেছি।’’
চুনী-পিকের চেয়ে বছরখানেকের বড় তুলসীদাস বলরাম। তিরাশি বছর বয়সি বলরাম বললেন, ‘‘তখন তো টিভিতে এত ভালভাবে বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ ছিল না। তবে বন্ধুদের বাড়িতে বা ক্লাবে ভিডিয়ো ক্যাসেট চালিয়ে বা প্রজেক্টর মেশিনে গর্ডন ব্যাঙ্কসের অনেক খেলা দেখেছি। কয়েকটা অবিশ্বাস্য সেভও করতে দেখেছি ওঁকে। তা দেখে একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে আমার মনে হয়েছে, উনি ফরোয়ার্ডদের প্রলোভিত করতেন। এমনভাবে তা করতেন যে, ওর সামনে চলে যেতেন পায়ে বল থাকা ফুটবলার। কোণ ছোট করে এর পর বলটা রুখতেন। এই অনুমান বা প্রলোভন দেখানোর ক্ষমতা বিশ্বে খুব কম গোলকিপারেরই আছে।’’ ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ দেখে ফেরার পথে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন বলরাম। বলছিলেন, ‘‘অনেক কিছু দেখার আশায় গিয়েছিলাম, তার মধ্যে একটা ছিল গর্ডন ব্যাঙ্কসের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সেটা আর হয়নি। এখন তো মানুষটাই চলে গেলেন।’’