এখনও ঝুলিয়ে রেখেছেন হিডিঙ্ক

এক দিকে জোসে মোরিনহো প্রসঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ফুটবলারদের অভিনব ডিগবাজি। অন্য দিকে, সম্ভাব্য কোচ খুস হিডিঙ্কের ঝুলিয়ে রাখা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০১
Share:

এক দিকে জোসে মোরিনহো প্রসঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ফুটবলারদের অভিনব ডিগবাজি। অন্য দিকে, সম্ভাব্য কোচ খুস হিডিঙ্কের ঝুলিয়ে রাখা।

Advertisement

মোরিনহো বিদায়ের চব্বিশ ঘণ্টা পর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের ছবি অনেকটা এ রকমই।

‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ চেলসি থেকে যে ভাবে বিদায় নিলেন, তা তাঁর চরিত্রের মতোই এক কথায় নাটকীয়। ক্লাব থেকে এ দিন নিজের ছবির একটা কাটআউট আর নিজেরই ছবি বসানো কফি মগ নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় মোরিনহোকে। কে জানত, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ঘিরেও অভিনব সব ঘটনা ঘটতে শুরু করবে!

Advertisement

হিডিঙ্ক বলে দেবেন, চেলসি যতই তাঁকে ম্যানেজার হিসেবে ভাবতে শুরু করুক, তিনি এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় নেই!

টিমের ফুটবলাররা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে বলে দেবেন, মোরিনহোর চলে যাওয়াটা চেলসির দুঃখের দিন। পোস্টে লিখে ফেলবেন সশ্রদ্ধ শব্দগুচ্ছ।

ইংরেজ মিডিয়া লিখে দেবে, সান্ডারল্যান্ডের বিরুদ্ধে চেলসি যদি জেতে তখন মানেটা কী দাঁড়াবে? তখন লোকে তো বলবে যে, টিমটা ভালই ছিল। মোরিনহো জমানায় ইচ্ছে করে খারাপ খেলেছে!

এবং জোসে মোরিনহো— তাঁর ভবিষ্যৎ গন্তব্যস্থল নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে যাবে। আগামী বছর তিনি নাকি রিয়াল মাদ্রিদ যাচ্ছেন।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় নাটক অবশ্য মঞ্চস্থ করলেন চেলসি ফুটবলাররা। যে ফুটবলারদের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল মোরিনহোর, যাঁদের পর্তুগিজ কোচ বলে বসেছিলেন ‘বিশ্বাসঘাতক’, যাঁরা আড়ালে-আবডালে কোচ সম্পর্কে গালিগালাজ, কুৎসিত নামকরণ করে বেড়াতেন, শুক্রবার তাঁদেরই অবস্থানে ভোলবদল। কোচের প্রতি অসূয়া দেখানো দূরের ব্যাপার, লাইনে-লাইনে শ্রদ্ধা। অনুশীলনে আসার আগে অধিনায়ক জন টেরি যেমন টুইট করেন, ‘‘আপনার জন্য ধন্যবাদ শব্দটা যথেষ্ট নয়। মিস করব আপনাকে। যে সব কোচের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের মধ্যে আপনিই সেরা। অবিশ্বাস্য সব মুহূর্ত দিয়েছেন আপনি।’’ টিমের লেফট ব্যাক সিজার আজপিলিকুয়েটার পোস্ট, ‘‘জোসে মোরিনহো, আপনাকে ধন্যবাদ অনেক কিছু শেখানোর জন্য।’’

যার পরপর কেউ কেউ বিস্ময়ে বলাবলি করছেন, দিয়েগো কোস্তা, এডেন হ্যাজার্ডদের নেতৃত্বে এই টিমই এক দিন কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। আর আজ এই টিমই বিদায়ী কোচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে পড়ছে! লুই ফান গলের মতো কেউ কেউ এখনও স্তম্ভিত। বলে দিয়েছেন, ‘‘এতে এটাই প্রমাণ হয় যে, ফুটবলে কোনও কিছুই স্থায়ী নয়। মোরিনহো চলে যাওয়ায় আমি স্তম্ভিত।’’ চেলসি কর্তাদের কেউ কেউ আবার ঘুরিয়ে ফুটবলারদের কাঠগড়ায় তুললেন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মাইকেল এমানালো বলেছেন, ‘‘ফুটবলারদের বিভেদের জন্য মোরিনহোকে সরতে হল। যা চলছিল, একটা না একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হত।’’

তা যে নয়, তা ইপিএলে ক্লাবের অবস্থান দেখলেই পরিষ্কার হবে। তার মধ্যে ক্লাব যাঁকে ‘এমার্জেন্সি ম্যান’ হিসেবে ভাবছিল, তিনি যে আসতে একশো শতাংশ ইচ্ছুক কথাবার্তায় পরিষ্কার নয়। এ দিনই লন্ডনে পৌঁছে গিয়েছেন হিডিঙ্ক। বলেও দিয়েছেন, ‘‘আমাকে বললেই যে চেলসি কোচ হয়ে যাব, তার কোনও মানে নেই। আগে টিমের অবস্থা দেখতে হবে। আমি হয়তো চেলসির পরের ম্যাচটা মাঠে গিয়ে দেখব। এখন লন্ডনেই আছি। কথাবার্তা হবে।’’

চেলসি ভেবে রেখেছিল, এ মরসুম হিডিঙ্ক দিয়ে কাজ চালিয়ে পরের মরসুমে নিয়ে আসবে পেপ গুয়ার্দিওলা বা দিয়েগো সিমিওনের মতো কাউকে। কিন্তু হিডিঙ্ক যে আসছেনই, এখনও নিশ্চিত নয়। উল্টো দিকে মোরিনহোকে নিয়ে রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ নাকি এখন থেকেই আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের দায়িত্বে ফের তাঁকে আগামী বছর দেখা গেলে অবাক হওয়ার নেই।

অবাক শুধু তাঁর চলে যাওয়ার দিনটা। না, নিজের কাটআউট বা ছবি-সহ কফি মাগ হাতে বেরিয়ে আসাটা নয়। চুক্তি মাঝপথে বাতিল হয়ে যাওয়ায় চেলসি থেকে চার কোটি পাউন্ড প্রাপ্য ছিল মোরিনহোর। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, মোরিনহো নাকি বলে দিয়েছেন ওটা তাঁর দরকার নেই! রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে আসার সময় পেমেন্ট নিয়ে রিয়াল কর্তাদের কী রকম নাকানিচোবানি তিনি খাইয়েছিলেন, বিশ্ব জানে। অথচ সেই একই লোক কিনা এ দিন চেলসি কর্তাদের বলে দিয়েছেন, চার কোটি রাখুন। ক্লাবের ফুটবলের উন্নতিতে খরচ করবেন!

ফুটবলাররা জোসে মোরিনহোর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই জিতলেন। কিন্তু ক্লাবের প্রতি ভালবাসার লড়াইটা কোচের বিরুদ্ধে জিতলেন কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন