Football

ফরাসি বনাম ফরাসির লড়াই ইতিহাস গড়বে রবিবাসরীয় সন্ধ্যা

রবিবার সন্ধ্যায়, ইন্দিয়া গাঁধী স্টেডিয়ামে প্রথম খেলায় ফ্রান্স বনাম নিউ ক্যালেডোনিয়ার লড়াই তাই মাঠের বাইরেও বহুমাত্রিক। এই প্রথম দুই পক্ষের হয়ে উড়বে একই দেশের পতাকাও।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ১২:৩৪
Share:

প্রস্তুতিতে নিউ ক্যালেডোনিয়া দল। ছবি: এপি।

মুখোমুখি শাসক ও শাসিত। যুযুধান দুই পক্ষের হয়ে উঠছে একই দেশের পতাকা! মানচিত্র খুঁজলে চোখেই পড়বে না- এমনই অজ্ঞাতকূলশীল একটি দ্বীপের খেলা ঘিরে এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল বিশ্ব ফুটবল তথা গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়াম।

Advertisement

১৭৭৪ সালে ব্রিটিশ অভিযানকারী ক্যাপ্টেন জেমস কুক নিউ ক্যালেডোনিয়া দ্বীপ আবিষ্কার করেন। কানাক আদিবাসীদের বাসভূমি ছিল ওই দ্বীপ। চন্দন কাঠের জন্য বিখ্যাত ওই দ্বীপের সব কাঠ শেষ করার পরে ইংরেজরা সেখানকার বাসিন্দাদের দাস বানিয়ে অন্যত্র পাঠানো শুরু করে। পরে তৃতীয় নেপোলিয়ানের আমলে ১৮৫৩ সালে ইংরাজ ও অস্ট্রেলীয়দের তাড়িয়ে দ্বীপের দখল নেয় ফরাসিরা। নতুন নাম হয় ‘ন্যুভেল ক্যালিদোনি’। সেই থেকেই দ্বীপের দখল ফ্রান্সের হাতে। পরে ওই দ্বীপকে কালাপানি হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে তারা। ২০ হাজার রাজনৈতিক বন্দীকে পাঠানো হয়েছিল সেখানে। সাজা শেষেও অনেকে সেখানে থেকে যান। কানাকদের সঙ্গে দফায়-দফায় ইউরোপীয়দের সংঘাত চলতে থাকে। উনিশশো কুড়ির দশকে ব্যাপক মহামারিতে দ্বীপের ২৫ হাজার বাসিন্দা মারা যান। ১৯৫৪ সালে ফ্রান্স সরকার নিউ ক্যালেডোনিয়ার বাসিন্দাদের ফরাসি নাগরিকত্ব প্রদান করে। এখনও কানাকরা স্বাধীনতার জন্য বিক্ষিপ্ত আন্দোলন চালাচ্ছে। ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ অ-স্বশাসিত অঞ্চলের তালিকায় ওই দ্বীপকে অন্তর্ভুক্ত করে। কানাক পরিচিতিকে সামনে আনতে ২০১০ সালে নিউ ক্যালেডোনিয়া নতুন কানাক পতাকাকে স্বীকৃতি দেয়। অবশ্য একই সঙ্গে বহাল থাকে ফরাসি পতাকাও। দ্বীপের নতুন প্রতীক, জাতীয় সঙ্গীত, স্লোগান এবং টাকার নতুন নকশাও গৃহীত হয়। দ্বীপের নাম বদলের চিন্তা চলছে। পরের বছর সেখানে গণভোট হবে। জিতলে স্বাধীন দেশের মর্যাদা পেতে পারে নিউ ক্যালেডোনিয়া। ২০০৪ সালে ফিফার অন্তর্ভুক্ত হয় মাত্র ২,৬৮,৭৬৭ জন বাসিন্দার ওই দ্বীপ।

বিশ্বকাপের খেলার ড্র হওয়ার সময়ও কেউ জানত না, প্রথম ম্যাচে ফ্রান্স বনাম নিউ ক্যালেডোনিয়ার খেলা পড়বে। তেমনই কাকতালীয় একই দিনে, একই স্টেডিয়ামে জাপানের খেলা পড়াও। নিউ ক্যালেডোনিয়ার অর্থনীতিতে অন্যতম নির্ণায়ক ভূমিকা জাপানের। ডায়াহোট নদীর পাশে নিকেল ও অন্যান্য খনিজ আহরণের জন্য ফরাসিরা জাপানিদের নিয়ে আসে। পরে জাপানিরাই দ্বীপে বাণিজ্য বিস্তার করে। জাপানিদের সঙ্গে অবশ্য কানাকদের কোনও বিরোধ হয়নি। পার্ল হারবারের ঘটনার পরে অনেক জাপানি নিউ ক্যালেডোনিয়া ছাড়লেও এখনও সেখানে ৮ হাজার জাপানির বাস।

Advertisement

আজ, রবিবার সন্ধ্যায়, ইন্দিয়া গাঁধী স্টেডিয়ামে প্রথম খেলায় ফ্রান্স বনাম নিউ ক্যালেডোনিয়ার লড়াই তাই মাঠের বাইরেও বহুমাত্রিক। এই প্রথম দুই পক্ষের হয়ে উড়বে একই দেশের পতাকাও। এত দিন দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতও ছিল একই। এখন নিউ ক্যালেডোনিয়া ফ্রান্সের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেদের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত ব্যবহার করে। সেটি কিন্তু তাদের আনুষ্ঠানিক জাতীয় সঙ্গীত নয়।

এমন ব্যতিক্রমী খেলায় নামার আগে নিউ ক্যালেডোনিয়ার কোচ ডমিনিক ওয়াসালি বলেন, “শুধু গুয়াহাটির মাঠে নয়, স্বভূমিতেও আজকের দিনটি আমাদের কাছে ঐতিহাসিক। ফরাসি অধিকৃত দ্বীপ হয়ে, ফিফার স্বীকৃতি পাওয়ার পরে প্রথম আন্তর্জাতিক খেলায় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লড়ার তাৎপর্যই আলাদা। অপরিচিত, আনকোরা, অনভিজ্ঞ দল হলেও আমাদের লড়াইতে থাকবে অন্য জোর।” ফরাসি কোচ লিওনেল রক্সেলের মতে, “ফ্রান্সের পক্ষে এ এক আবেগের খেলা। কখনও না খেলার দলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় প্রথম ম্যাচে নামা সবসময়ই চ্যালেঞ্জ। জানি নিউ ক্যালেডোনিয়া আমাদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন