ছবি-উৎপল সরকার।
আন্তোনিও হাবাস রীতিমতো পাগল করে ছাড়ছেন আটলেটিকো দে কলকাতার কর্তাদের। প্রায় প্রতিদিনই মাদ্রিদ থেকে মেল পাঠাচ্ছেন তিনি, যুবভারতীর পরিস্থিতি জানতে। জানতে চাইছেন অনুশীলনের মাঠ ঠিক হল কি না?
স্টেডিয়ামের অফিসে হাজির থাকা এটিকের কর্মীরা তাই নিয়মিত মাঠের ছবি তুলে পাঠাচ্ছেন হাবাসকে। নতুন তৈরি ঘাসের ছবি দেখে কলকাতা কোচ পাল্টা লিখছেন, ‘‘ঘাস শক্ত নয় তো? বল গড়াবে তো?’’ কলকাতা ডার্বি দিয়ে নতুন যুবভারতীর মাঠের উদ্বোধন হবে বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। ফলে এটিকে কর্তারা নিশ্চিত যুবভারতীতে অক্টোবরে ম্যাচ করা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। হাবাসকে সে রকমই জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু ষোলোই সেপ্টেম্বর মাদ্রিদ থেকে ফেরার পর পোস্তাগো-রহিম নবিরা কোথায় অনুশীলন করবেন? তা নিয়েই রাতের ঘুম ছুটেছে কলকাতার কর্তাদের। কারণ ঘাসের হয়ে যাওয়ায় সেপ্টেম্বর থেকে মাঠ ভাড়া নিলেও সেখানে অনুশীলন করার অনুমতি নেই। বাধ্য হয়ে আই এসএলের জন্য মাস তিনেক সাই-এর মাঠ ভাড়া নিতে চাইছেন হাবাসের দলের কর্তারা। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার মাঠ পাওয়া গেলেও সেখানে লকার রুম নেই। সে ক্ষেত্রে অবশ্য যুবভারতীতে পোশাক বদলে বোরহা-নাতোদের টিম বাসে করে সাইতে আনা হবে বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু ফ্লাড লাইট কোথায়? আইএসএলের সব ম্যাচ আলোয় হবে বলে হাবাস রাতে টিমকে অনুশীলন করতে চান। এটিকে সচিব সুব্রত তালুকদার বুধবার বললেন, ‘‘অনুশীলনের মাঠ নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। সাই কর্তৃপক্ষকে মাঠ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। হয়তো হয়ে যাবে। কিন্তু সেখানে আবার ফ্লাডলাইট নেই। আমাদের এখানে কোনও মাঠে ফ্লাড লাইটের মাঠ-ই তো নেই। আমরা কী করব? অথচ কোচ রাতেই অনুশীলন করাতে চান।’’ আর যা জেনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হাবাস। বিরক্তও।
মাদ্রিদ থেকে প্রাক মরসুম প্রস্তুতি সেরে ফেরার পর পোস্তিগারা চলে যাবেন শিলিগুড়িতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে খেলা হবে ২০ সেপ্টেম্বর। সেখানে নেপাল বা বাংলাদেশের কোনও টিমের সঙ্গে কলকাতা মরসুমের প্রথম ম্যাচটি খেলবে। এর পরই প্রাক মরসুম অনুশীলন শুরু করবেন হাবাস।
অনুশীলনের মাঠই নয়, এটিকের ম্যাচ সংগঠন করা নিয়েও নানা সমস্যা আছে। আইএসএল সংগঠকরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, মাঠে কোথাও আগুন লাগলে, আলো নিভে গেলে বা কোনও গণ্ডগোল হলে বিপর্যয় মোকাবিলার সব রকম ব্যবস্থা রাখতে হবে। আইএসএল দেখতে বহু স্কুল ছাত্র-ছাত্রী ও মহিলা আসছেন। তাঁদের সুরক্ষা দিতে চান সংগঠকরা। কিন্তু যুবভারতীতে সেই ব্যবস্থা নেই। স্টেডিয়ামের সিইও জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করলেন, ‘‘আইএসএলের চিঠি দেখেছি। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কাজ চলছে।’’
হাবাসের টিম যখন অনুশীলনের মাঠ খুঁজতে জেরবার, তখন কলকাতা লিগের মাঠ নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা আইএফএ-র। বৃষ্টি আর গঙ্গার জলে দফরফা ময়দানের মাঠগুলো। লিগ বন্ধ হয়ে আছে। কোনও মাঠকে মনে হচ্ছে নদী, কোনও মাঠের অর্ধেক জুড়ে আবার হাঁটুসমান জল। লিগের উত্তেজনা ফিরিয়ে আনতে বহুদিন পর ময়দানে তিন ঘেরা-মাঠে তিন প্রধানের খেলা হবে বলে সূচি বেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ দিন বিকেলে তিনটি মাঠ ঘুরে দেখা গেল হাল সত্যিই খুব খারাপ। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান—তিন প্রধানের মূল গেট ছাড়িয়ে তাঁবুর চারপাশ জল থইথই। সব মাঠেই ঘাসের নীচে থকথকে কাদা। যা শুকিয়ে গেলেই মাঠ অসমান হয়ে যাবে। ফুটবলারদের বল রিসিভ করতে সমস্যা হবে।
নতুন মাটি ফেলা হয়েছে বলে মহমেডান মাঠে রোলার চালানো যাচ্ছে না। কাটা যাচ্ছে না ঘাস। প্রেস বক্স তৈরির কাজ শুরু হয়েছে দিন দু’য়েক হল। মোহনবাগানে অবশ্য প্রেস বক্স বলে কিছু নেই। সদস্য গ্যালারির একটা অংশ ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে। ঘাস কাটা হয়েছে অর্ধেক। ডিমের আকৃতি বলে বৃষ্টি বা ভরা কোটালের জল বেরিয়ে যায় বাগানের মাঠে। ইস্টবেঙ্গলে সেই সুবিধা কম। ঘাসের নীচে বালি। খেলা শুরু হলেও কত দিন তিন প্রধানের মাঠে তা চলবে, সন্দেহ আছে। আইএফএ-ও এ নিয়ে চিন্তিত। এ দিকে বারাসতে সঞ্জয় সেনের দলের সঙ্গে মহমেডানের প্রথম ম্যাচ ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। ওটিই মরসুমে দুই প্রধানের প্রথম ম্যাচ ছিল। রবিবারের ওই ম্যাচটিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড-সহ নানা জিনিস তৈরি করতে বলেছে আইএফএ-কে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তিন দিনের মধ্যে তা করার চেষ্টা হচ্ছে বলে খবর। যদি সমস্যা না মেটে তা হলে খেলা পিছিয়ে যেতে পারে সপ্তাহখানেক। জট পাকাবে লিগ।