দুই কোচ, দুই মেজাজ। হাবাস ও রিকি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস ও উজ্জ্বল দেব
দুই মেরুতে দুই কোচ।
স্প্যানিশ মন্ত্র? নাকি ব্রাজিলীয় খোলামেলা পরিবেশ? গুয়াহাটিতে বৃহস্পতিবার কার ফুটবল দর্শন বাজিমাত করবে সেটাই প্রশ্ন আটলেটিকো বনাম নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ম্যাচের আগে।
কেন?
স্প্যানিশ মন্ত্রের নেপথ্যে কলকাতার কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। যিনি প্রথমে প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলন ব্যাপারটাই তুলে রাখতে চেয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছিলেন আটলেটিকো মাদ্রিদের কোচ দিয়েগো সিমিওনেকে। বলেন, “ম্যাচের আগে সিমিওনে বেশি কথা নিজেও বলেন না। ফুটবলারদেরও বলতে দেন না। কাজেই এত কথা বলার কী প্রয়োজন।”
সেখানে নর্থইস্ট ইউনাইটেড কোচ রিকি হারবার্টের মুখে যেন খই ফুটছে। সকালের অনুশীলনের পর সোজা এসে বসে পড়লেন হোটেলের লবিতে। সেখানে বসেই ফুটবল সংক্রান্ত আড্ডা দিলেন খোশমেজাজে। বলছিলেন, “মনোসংযোগটা দরকার ফুটবলারদের। ওদের ম্যাচের আগে কথা বলতে না দিলেই হল। বিরাশির বিশ্বকাপে তেলে সান্তানাকেই দেখেছি ম্যাচের আগে সাংবাদিকদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে। আমি সেটাই পছন্দ করি।”
হাবাস অবশ্য দিয়েগো সিমিওনে টেনে আনলেও ম্যাচের দিন সকালে এখানে আসার সাহস শেষ পর্যন্ত দেখাতে পারেননি। ব্যারেটোর ইনপুটে ঘাসের মাঠে অনুশীলন এর যদি একটা অন্যতম কারণ হয়, তা হলে এর চেয়েও বড় কারণ টিম ম্যানেজমেন্টের পাল্টা যুক্তি। তাঁরা সরাসরি স্প্যানিশ কোচকে বলে দেন, উত্তর-পূর্বের আকাশ মাঝে মাঝেই বিগড়ে যায়। সেক্ষেত্রে সকালে উড়ান বাতিল হয়ে গেলে দুর্ভোগ বাড়বে বই কমবে না। কারণ ইউরোপের মতো এখানে চার-পাঁচ ঘণ্টার জার্নিতে কলকাতা থেকে গুয়াহাটি পৌঁছনো যায় না। এর পরেই মত বদল। তবে ম্যাচের আগের দিন এলেও এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে যাননি কলকাতা কোচ। হোটেলে ঢুকে ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেই মাঠে চলে যান প্র্যাকটিসের জন্য। স্প্যানিশ কোচের এই খামখেয়ালিপনায় দলের মধ্যে কেউ কেউ বেশ বিরক্ত ইতিমধ্যেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, “স্পেন আর ভারত যে এক নয় সেটা হয়তো উনি বুঝে উঠতে পারেননি।”
কলকাতার কোচ যখন মিডিয়া, সমর্থকদের এড়িয়ে কেবল দল নিয়ে ভাবতেই আগ্রহী তখন নর্থইস্ট কোচ রিকি হারবার্ট আবার প্র্যাকটিস সেরে হোটেলে ফেরার পথে টিকিটের লম্বা লাইন দেখে বলছেন, “আমার দ্বাদশ ফুটবলারও (সমর্থকরা) তৈরি বৃহস্পতিবারের ম্যাচের জন্য।”
ছ’দিনে তিন ম্যাচ খেলতে হবে কিউয়ি কোচকে। এ দিন সে কথাও মনে করিয়ে দিয়ে বলে যান, “কলকাতা প্রথম ম্যাচের পর কিন্তু এক দিন বেশি সময় পেল। দলের চোট-আঘাত এড়ানোটাই এখন বাড়তি চ্যালেঞ্জ।” সঙ্গে চিরাচরিত রসবোধ এনে কলকাতার দলকে তাঁর পাল্টা চিমটি, “হোম ম্যাচে স্টেডিয়ামে আমরা অনুশীলনের সুযোগটাই তো পেলাম না। সেখানে স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করে সুযোগটা তো নিয়ে গেল কলকাতাই।”
তবে এরই মাঝে কিউয়ি কোচের আক্ষেপ তাঁর একাশি বছরের ফুটবলপ্রেমী বাবা ক্লাইভ হারবার্ট ভিসা সমস্যায় কলকাতার ম্যাচ দেখতে আসতে না পারায়। বললেন, “গোয়া ম্যাচের আগে চলে আসবেন। বিরাশির বিশ্বকাপে জিকোর ব্রাজিলের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ দেখতে গিয়ে নিরাশ হয়েছিলেন বাবা। কাল কলকাতা আর তার পর জিকোর গোয়াকে হারালে বাবার মনের পুরনো খচখচানিটা পুরো চলে যাবে।”