হেরে গেলে অজুহাত খাড়া করতে চেতলার সঞ্জয় সেন থেকে মোরিনহোর মতো ‘স্পেশ্যাল’ কোচ— কেউ কম নয়।
রবিবার খবরের কাগজে হাবাসের একটা মন্তব্যে বুঝলাম হাবাসও সেই দলে। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকো কলকাতা কোচ শনিবারের হোম ম্যাচ হেরে বলেছেন, কেন হারলাম রেফারিকে প্রশ্ন করুন।
যা পড়ে মনে হতেই পারে, রেফারির ভুল সিদ্ধান্তেই এটিকে হেরেছে যুবভারতীতে। কিন্তু আমার মতে তা মোটেই নয়।
নর্থ ইস্টের পক্ষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, তার মধ্যে ঢুকছি না। বরং বেশি জানতে ইচ্ছে করছে, ন’মিনিটে গোল হজম করে তার পর ইনজুরি টাইম ধরে ছিয়াশি মিনিটেও কেন গোল শোধ করতে পারল না হাবাসের কলকাতা?
একবার পিছিয়ে পড়লেই গোল করতে সমস্যা হচ্ছে কলকাতার। পুণে ম্যাচের শুরুতেও পিছিয়ে পড়েছিল। তার পর সারা ম্যাচ গোল করতে পারেনি শনিবারের মতোই। যে লিগে অবনমন নেই, সেখানেও এত নেতিবাচক ফুটবল কেন এটিকের? পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরতে হলে চাই খাঁটি আক্রমণাত্মক ফুটবল। সেখানে কলকাতার বিদেশি কোচের কাছ থেকে ফুটবলের সেই ধারাপাতের কিছু পেলাম না কিন্তু এ বার এখনও।
গত আইএসএলে হাবাস হেরেছিলেন তিনটে ম্যাচ। এ বার এখনই চারটেতে হার। সেমিফাইনালে যাওয়া অসম্ভব সেটা বলছি না। কিন্তু সম্ভাবনাটা ক্রমশই ফিকে দেখাচ্ছে।
আসলে হাবাসের সমস্যা দল তৈরিতেই। নর্থ ইস্ট ম্যাচে রফিককে চনমনে মেজাজে বেশ ভাল খেলতে দেখলাম। ফাইনালে যার গোলে যে হাবাস গতবার ট্রফি তুলেছিলেন, তার জন্য এ বার শুরুতেই গলা ফাটালেন না কেন তিনি? লোবোকেও রাখেননি। বিদেশিদের মধ্যে গত বার মাঠে বেটে আর গার্সিয়া তো ড্রেসিংরুমেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল। তারাও এ বার বাদ। কেন? হাবাস মোটা টাকা খরচ করে রিনোকে এনেছেন রাইট ব্যাকে। ডে়ঞ্জিলের ফর্মে কি তিনি সন্তুষ্ট নন। তা হলে শনিবার রিনো কেন প্রথম দলে ছিল না। চোট ছিল কি?
স্পেনে এক মাসের প্রি-সিজন শিবিরে কী হয়েছে? প্রথম আট ম্যাচেই এত চোট-আঘাত কেন? এমন তো হয়, বয়স্ক ফুটবলার যারা ফিট নয়, তাদের ক্ষেত্রে। হাবাস কেন তাদের বাছলেন? যারা ওঁর ট্রাম্প কার্ড হতে পারত সেই তিন জনই— পস্টিগা, জোসেমি, লারা চোট পেয়ে বাইরে। কেন? বোরহা আর নাতো বিদেশি-তুলনায় অতি সাধারণ। তা হলে ওরা টিমে কেন? শনিবার তো বোরহা-ই মাঝমাঠে বল কাড়ার বদলে বিপক্ষকে জায়গা তৈরি করে দিল
নর্থ ইস্ট ছিল মাস্ট উইন ম্যাচ। তা হলে সেই ম্যাচে কেন হাবাস আক্রমণ জোরদার করলেন না? যেখানে গ্যালারির সমর্থন রয়েছে সেখানে কোচ তো চাইবেন আরও বেশি আক্রমণ। ভালদোকে শুরু থেকেই আক্রমণে হিউমের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেত। উল্টে কোচ অর্ণবকে বসিয়ে স্টপারে দুই বিদেশি খেলিয়ে চরম রক্ষ্মণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিলেন।
আসলে হাবাস পড়ে রয়েছেন তাঁর গত বারের অঙ্কেই। আলট্রা ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি। ড্র করতে করতে শেষ চার। তার পর দু’টো নক আউট ম্যাচের জন্য অন্য অঙ্ক। কিন্তু এ বার যেখানে ডেভিড প্লাট, রবের্তো কার্লোস, ফারিয়াসের মতো কোচেরা রয়েছেন সেখানে একই অঙ্ক কষে রোজ রোজ ক্লাসে প্রথম থাকা যাবে, সেটা ভাবাই বোধহয় ভুল।
পুণে কোচ প্লাট বলেছেন, কলকাতার অঙ্কটা অনেক কোচই একটু চেষ্টা করলেই ধরে ফেলবেন। যেটা প্লাট সঙ্গে বলেননি— কলকাতাকে ফলো করলে দেখবেন, আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি দিয়ে তাড়া করলেই তারা রক্ষণের খোলসে গুটিয়ে যায়। ফারিয়াস সেটাই করেছেন শনিবার।
এত কথা, এত সমালোচনাও হাবাস তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবেন, যদি কোচি থেকেই ফের জিততে শুরু করেন। কারণ এখনও ছ’টা ম্যাচ বাকি। যার মধ্যে চারটে হোম ম্যাচ। লিগে এক নম্বর গোয়ার সঙ্গে কলকাতার পয়েন্টের তফাতও খুব বেশি নয়। পাঁচ পয়েন্ট। তবে সেইটুকুও টপকাতে গেলে হাবাসকে আক্রমণাত্মক হতেই হবে।