ড্রেসিংরুমে জন্মদিন পালন হেনরি কিসেক্কার জন্মদিন। নিজস্ব চিত্র
রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা স্টপার জনি আকোস্তা রবিবারের ডার্বিতে লাল-হলুদ জার্সি পরে তাঁদের বিরুদ্ধে নামবেন। এটা জানার পরেও কোনও হেলদোল নেই মোহনবাগানে। বরং ম্যাচের দু’দিন আগে শুক্রবার বিকেলে সবুজ মেরুন ড্রেসিংরুম ব্যস্ত থাকল হেনরি কিসেক্কার জন্মদিন পালন নিয়ে। বড় ম্যাচের চাপ সরিয়ে রেখে বরং বন্ধ দরজার ভিতর থেকে আওয়াজ ভেসে এল, ‘‘হ্যাপি বার্থ ডে টু...হে-ন-রি!’’
মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে সাত গোল করে এই মূহুর্তের সর্বোচ্চ গোলদাতা দিপান্দা ডিকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রবিবার গোল করে কী হেনরিকে তা উপহার দেবেন? হাসতে হাসতে মোহনবাগান স্ট্রাইকার বলে দেন, ‘‘আমি নই, রবিবার হেনরি গোল করবে এবং আমাকে সেটা উপহার দেবে।’’
শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দলকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে দু’দিন পরেই ডার্বি। অনুশীলনে বড় কর্তারা অনুপস্থিত। যুবভারতীতে সংলগ্ন মাঠে ঘণ্টা খানেকের অনুশীলন হল শিল্টন পাল, মেহতাব হোসেনদের। কিন্তু অত্যন্ত সুচতুরভাবে একটা কাজ করলেন সবুজ-মেরুন কোচ। মিডিয়াকে জানানো হয়েছিল অনুশীলন শুরু হবে বিকেল চারটেয়। তার প্রায় আধ ঘণ্টা আগেই মাঠে নেমে পড়েছিলেন কিংগসলে ওবুমেনেমেরা। দলের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সবাইকে ডেকে নিয়েছিলেন মোহনবাগান কোচ। এবং সেখানে দলের রণনীতি যেমন তৈরি হল, তেমনই নানা বৈচিত্রের সেট পিসও অনুশীলন করানো হল ডিকাদের। ক্লোজড ডোর-এর চমক না দিয়ে, মিডিয়াকে এড়িয়ে ইস্টবেঙ্গল বধের এই ছক তৈরিতেই বোঝা গেল শঙ্করলাল কতটা সতর্ক।
এমনিতে ক্লাবে কর্তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে উঠলেও মোহনবাগান ফুটবলারদের ড্রেসিংরুমের রসায়ন এখনও পর্যন্ত মসৃণ। ফুটবলারদের কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ কথা বলতেই চাইছেন না। তা সত্ত্বেও টুকরো টুকরো মুখ খুলে ফেলছেন ডিকা থেকে শিল্টন পাল, মেহতাব হোসেন থেকে ব্রিটোরা। ডিকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রতিপক্ষ দলে বিশ্বকাপার, এটা কী আপনার কাছে চাপের? মোহনবাগান স্ট্রাইকার বলে দিয়েছেন, ‘‘বিশ্বকাপার বা অন্য যে কেউ আমাদের সামনে পড়ুক, তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা মাথায় রাখছি গোল করতে হবে, জিততে হবে। বহু দিন আমরা কলকাতা লিগ পাইনি। সেটা জেতাই লক্ষ্য।’’
ডার্বি ম্যাচ জেতার জন্য ডিকা এবং হেনরি যুগলবন্দির সাফল্যের দিকেই যে তাকিয়ে আছে সবুজ মেরুন শিবির তা সবারই জানা। কিন্তু শিল্টন পাল এবং মেহতাব হোসেনদের মতো অভিজ্ঞরাও যে মরসুমের প্রথম ডার্বির অনুঘটক, সেটা মানছেন মোহনবাগান কর্তা থেকে সমর্থক সবাই। তেরো বছর টানা সবুজ মেরুন জার্সি পরে খেলছেন শিল্টন। বলছিলেন, ‘‘আমরা একটা দল হিসাবে খেলছি এ বার। ইস্টবেঙ্গলও বেশ ভাল খেলছে। ওদের আসল শক্তি হল আল আমনা আর উইং প্লে। সেটা মাথায় রাখছি। ’’
শিল্টনের মতোই ডার্বিতে দারুণ অভিজ্ঞ মেহতাব হোসেন। তাঁর নিজস্ব হিসাব, প্রায় ষাটটির উপর ডার্বি খেলেছেন। ২০০৬-এ শেষ বার মোহনবাগান জার্সি পরে ডার্বি খেলেছেন মশালবাহিনীর বিরুদ্ধে। তারপর আবার এ বার। পনেরো বছর বড় দলে খেলছেন। তার মধ্যে দশ বছর লাল-হলুদ জার্সিতে। জীবনের শেষ বেলায় সেই দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলে বিতর্ক চান না তিনি। বলছিলেন, ‘‘ওদের বিশ্বকাপার আসায় শক্তি তো একটু বেড়েছেই। ইস্টবেঙ্গল ভালও খেলছে। তবে আমাদের ডিকা-হেনরিরাও গোলের মধ্যে আছে। জানি না শুরু থেকেই কোচ খেলাবেন কিনা। তবে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই ম্যাচে ভবিষ্যদ্বাণী করলে ঠকতে হবে।’’