ম্যাচ শেষে ইডেন ড্রেসিংরুমে বিরাট-অনুষ্কার ‘হাই ফাইভ’

আরে, অনুষ্কা শর্মা আরসিবি কর্পোরেট বক্স থেকে নেমে কোথায় যাচ্ছেন? ক্লাবহাউস গেটের পাশ দিয়ে মাঠের দিকে। ড্রেসিংরুমের দিকে। বিরাট— বিরাট কোহলি এখন কোথায়? ওই তো, মাঠ থেকে ফিরছেন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ করে। অনুষ্কা আসছেন ক্লাবহাউস গেটের পাশ দিয়ে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

টেনশন আর টেনশন মুক্তি। শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার

আরে, অনুষ্কা শর্মা আরসিবি কর্পোরেট বক্স থেকে নেমে কোথায় যাচ্ছেন?

Advertisement

ক্লাবহাউস গেটের পাশ দিয়ে মাঠের দিকে। ড্রেসিংরুমের দিকে।

বিরাট— বিরাট কোহলি এখন কোথায়?

Advertisement

ওই তো, মাঠ থেকে ফিরছেন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ করে। অনুষ্কা আসছেন ক্লাবহাউস গেটের পাশ দিয়ে।

তার পর?

কী আবার, দু’জনে মুখোমুখি এবং ড্রেসিংরুমে ঢুকে ‘হাই ফাইভ’!

রাত সওয়া বারোটার কাছাকাছি ইনোভা করে ক্লাবহাউস গেট দিয়ে যখন বেরিয়ে গেলেন অনুষ্কা শর্মা, বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছিল তাঁকে। দেখে বোঝার উপায় নেই, গত সাড়ে তিন ঘণ্টা বিরাট-বান্ধবীর উপর দিয়ে কী গিয়েছে। টেনশন করেছেন। হাতে খাবারের প্লেট বারবার তুলেও আবার নামিয়ে রেখেছেন। গেইলের পরপর ছক্কা দেখেছেন লাফিয়ে উঠেছেন শিশুর আনন্দে। আবার চরম টেনশনের মুহূর্তে সামনে ভিড় জমানো দর্শকদের মোবাইল ক্যামেরার পরের পর ফ্ল্যাশে বিরক্তও হয়েছেন। টিম জিতেছে যখন, তখন ছিটকে বেরিয়য়ছে আব্দার—আমি ওদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। যেমন কথা, তেমন কাজ। আরসিবি মালিক বিজয় মাল্যর সঙ্গে সোজা ড্রেসিংরুমের দিকে এবং সেখানে ঢুকে উল্লাস সমেত দু’জনের ‘হাইফাইভ’।

অথচ একটা সময় পর্যন্ত কেউ টেরও পায়নি যে তাঁর আবির্ভাব ঘটছে বলে। যেটা ফাঁস করে দেন সুনীল গাওস্করের। টসের আগে দু’টো টিমের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে নিয়ম মেনে ক্রিকেটীয় কথাবার্তা বলা হয়ে থাকে। গাওস্করও সেটাই চালাচ্ছিলেন বিরাটের সঙ্গে। কথাবার্তা যখন প্রায় শেষের দিকে তখন আচমকাই বিরাটকে ‘লিটল মাস্টার’ জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘‘কী হে, সে আসছে নাকি?’’ হতচকিত, অপ্রস্তুত বিরাট বলে দেন, ‘‘আসার তো কথা আছে!’’

মানে, অনুষ্কা শর্মা আসছেন! ইডেনে প্রথম বারের জন্য। প্রেমিক বিরাট কোহলির ক্রিকেট দেখতে!

নাহ্, আজ আর ফ্লাইং কিস তাঁর দিকে উড়ে আসেনি ব্যাটে বিরাটের ঠোঁট ছুঁয়ে। সম্ভবও ছিল না। বিরাট ওপেন করতে নামলেন ঠিকই, তবে লাভ হল না। দ্রুতই ফিরে যেতে হল। কিন্তু তাতে কী? ইডেন গ্যালারির একটা গোটা ব্লক তাঁর দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থেকে, আগুনে লাল আরসিবি পতাকা উড়িয়ে, চিৎকার করে তাঁকে সমর্থন দিয়ে গেল। তাঁর প্রেমিকের টিমকে সমর্থন দিয়ে গেল। মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে, নেচে, গেইল-বিরাটের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে।

ইডেন বি ব্লকের প্রত্যক্ষদর্শী হলে যে দৃশ্য চোখে ঘোর লাগিয়ে দেবে। প্রিয় ক্রিকেটারের বান্ধবী-দর্শনের সমুদ্রগর্জন উপস্থিতকে বধিরও করে দিতে পারে সাময়িক। কী নয়, প্রশ্নটা হওয়া উচিত ইডেনে সাড়ে তিন ঘণ্টায় আজ কী করেননি অনুষ্কা? রাত যত বেড়েছে, ম্যাচ যত নাটকীয় থেকে মহানাটকীয় রূপ নিয়েছে, তত একের পর এক মোহিনী ফ্রেম তৈরি হয়েছে আরসিবি কর্পোরেট বক্সে বসা অনুষ্কাকে ঘিরে।

গৌতম গম্ভীর আউট— একগাল হাসিতে টিভি ক্যামেরায় প্রথম ধরা দেওয়া।

বিরাট কোহলি মিসটাইমড পুলে কিপারের হাতে— অভিনেত্রী স্তব্ধবাক। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে বসে।

নারিনকে মাঠের বাইরে ফেলে দিলেন গেইল— হাত যে মুঠো করে ঝাঁকাতে শুরু করলেন, থামাতে ভুলে গেলেন।

গেইল আউট, মুখের কাছে মোবাইল ক্যামেরার ভিড়— অসম্ভব টেনশনে একটু বিরক্ত। বলে চলেছেন, ‘‘প্লিজ ও দিকটায় দেখুন না আপনারা। ম্যাচটা ও দিকে হচ্ছে।’’

আবু নেচিমের জয়সূচক বাউন্ডারি—লাফ, নাচ ও নীচের দিকে দৌড়।

কিন্তু এত কিছুর পরেও বলা যাচ্ছে না, ইডেনে সাড়ে তিন ঘণ্টার অনুষ্কা শর্মা শো শহরের সার্বিক হৃদয় জিতে নিল। তাঁকে নিয়ে উৎসবের ছবিগুলো যেমন সত্যি, তেমন সত্যি ইডেনে উপস্থিত ভিভিআইপি থেকে সাধারণ দর্শকের প্রতিক্রিয়াগুলো। ইডেনে এ দিন ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়, কনীনিকা, অভিষেক দত্ত, পরমব্রত-সৃজিতরা। সৃজিত আবার রাত তিনটেয় উড়ে যাচ্ছেন ইউরোপ। কেকেআরের জয় দেখে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমী সৃজিত-পরমব্রতরা মনে করছেন, এই গেইলকে থামানো সম্ভব ছিল না। ঠিক তেমনই গভীর রাতের ইডেন দর্শকের অধিকাংশের মনে হল, অনুষ্কা এলেও তৃপ্তিটা হল না।

‘‘নারিন বোধহয় এ বার আর পারবে না রে। অ্যাকশন বদলে মার খাচ্ছে।’’

‘‘ধুর, টাকাটাই জলে গেল। ছুটির বিকেলটা নষ্ট হল।’’

‘‘অনুষ্কা এসেছে ভাল। শুধু কেকেআর যদি জিতত।’’

আইপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অনুষ্কা, ‘সম্রাজ্ঞী’ হয়ে শহর ছেড়েছিলেন। কিন্তু সেটা তো পাঁচ দিন আগের কথা। শহর তো এখন পুরোটাই ‘বাদশার’ হয়ে গিয়েছে। এবং যে‘ বাদশার’ নাম মোটেও বিরাট কোহলি নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন