সেরা: অসমের গ্রাম থেকে বিশ্বসেরার মঞ্চে। ফিনল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারে সোনা জেতার পরে ভারতের হিমা দাস। ছবি: এপি
বছর চারেক আগেও অসমের নগাঁও জেলার ধিঙ গ্রামে ফুটবল নিয়ে দাপাতে দেখা যেত মেয়েটিকে। বাবা-মা বারণ করলেও তা কানে তুলতেন না। বৃহস্পতিবার রাতে সুদূর ফিনল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারে সোনা জিতে ইতিহাস গড়েছেন কৃষক পরিবারের সেই মেয়ে হিমা দাস।
আর তার পরে ১৮ বছরের সেই হিমাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে গোটা ভারত। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ক্রীড়ামন্ত্রী তো শুভেচ্ছা জানিয়েছেনই। হিমার কৃতিত্বে গর্বিত বিরাট কোহালি, সচিন তেন্ডুলকরও।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফর চলার মাঝেই অধিনায়ক বিরাট কোহালি হিমার সাফল্য নিয়ে টুইট করেছেন, ‘অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। দেশের সবাই তোমার জন্য গর্বিত।’ অসমিয়া অ্যাথলিট কন্যার কৃতিত্ব হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে মাস্টারব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরেরও। তিনিও টুইটারে ১৮ বছরের এই মেয়েটির সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করেছ। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে তার সুফলই পেলে। পরিশ্রম থামিয়ো না। সামনে আরও উজ্জ্বল পথ অপেক্ষা করছে। অভিনন্দন।’’ ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌরও বলছেন, ‘‘ভারতীয় অ্যাথলিটদের কাছে এই জয় বিশেষ পরিচয় এনে দেবে। ধন্যবাদ হিমা। সারাজীবন গর্ব করার মতো কাজ করে দেখালে তুমি।’’
আরও পড়ুন: ‘এস’-যুদ্ধে শেষ হাসি সেই অ্যান্ডারসনের
ট্র্যাক ইভেন্টে প্রথম ভারতীয় হিসেবে জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী হিমার প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। আমি বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন। দেশের সম্মান বাড়াতে পেরেছি। আর কী চাই?’’
বাবা রণজিৎ দাসের সম্বল মাত্র দুই বিঘা জমি। সেখানেই চাষ-আবাদ করে সংসার চলে দাস পরিবারের। মা জোমালি গৃহবধূ। চার ভাইবোন-সহ ছয় জনের সংসার। সংসারে প্রায় নুন আনতে পান্তা ফোরানোর মতো অবস্থা। সেখান থেকেই উঠে আসা হিমার। যে প্রসঙ্গে হিমা বলছেন, ‘‘পরিবারের আর্থিক সঙ্গতির কথা ভুলিনি কখনও। তাই পরিশ্রমে ফাঁকি দিইনি।’’ মেয়ের সাফল্য পাওয়ার দিনে রণজিৎবাবু বলছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই হিমা খুব অবাধ্য। যা একবার করবে ভাবে, সেটা করেই ছাড়ে। শারীরিক ও মানসিক ভাবে দারুণ শক্ত আমার মেয়ে।’’
গ্রামের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলার সময় স্কুলের এক শিক্ষকের চোখে পড়েছিল হিমার প্রতিভা। তিনিই হিমাকে ফুটবল মাঠ থেকে টেনে আনেন অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে। দু’বছর আগে হিমার দুরন্ত গতি আন্তঃজেলা মিটে চোখ টানে অসমের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের অ্যাথলেটিক্স কোচ নিপন দাসের। নিপন সেই প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘সে দিন সস্তা দামের স্পাইক পরে দৌড়াচ্ছিল হিমা। কিন্তু তাও সোনা পেয়েছিল। মনে হচ্ছিল হাওয়ার বেগে এগিয়ে যাচ্ছে।’’
দরজায় কড়া নাড়ছে এশিয়ান গেমস। সেখানেও হিমা দেশকে পদক দিতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অষ্টাদশী বলছেন, ‘‘পদকের কথা ভেবে ট্র্যাকে নামি না। জোরে, আরও জোরে দৌড়াতে চাই। জানি তা হলেই পদক আসবে।’’