ধবনের ব্যাটে শিখরে ভারত

এই খিদেটাই আসল

কমেন্ট্রি করতে-করতে ব্যাপারটা দেখে বেশ ভালই লাগছিল আমাদের। দেখলাম, সানি ভাই, হেডেনেরও ব্যাপারটা মনে ধরেছে। মাঝেমধ্যেই আমরা বলছিলাম যে, ইন্ডিয়ান টিমের আজ খিদেটা দেখেছ? যেন শ্রীলঙ্কাকে প্রতি মিনিটে বোঝাতে চাইছে দ্যাখ এখানকার রাজা কে!

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

কমেন্ট্রি করতে-করতে ব্যাপারটা দেখে বেশ ভালই লাগছিল আমাদের। দেখলাম, সানি ভাই, হেডেনেরও ব্যাপারটা মনে ধরেছে। মাঝেমধ্যেই আমরা বলছিলাম যে, ইন্ডিয়ান টিমের আজ খিদেটা দেখেছ? যেন শ্রীলঙ্কাকে প্রতি মিনিটে বোঝাতে চাইছে দ্যাখ এখানকার রাজা কে!

Advertisement

আমি নিঃসন্দেহ যে, ব্যাপারটা আপনারাও খেয়াল করেছেন। ম্যাচের একদম প্রথম বল থেকে বিপক্ষের উপর এমন গরগরে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া, রোজ-রোজ তো দেখা যায় না। ভেবে অবাক লাগছিল যে, একটা হারকে এরা এত সিরিয়াসলি নিয়েছে দেখে। আমরা সবাই জানতাম, পুণের ম্যাচটা পুণেতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো নয়ই, পুণের প্রভাব এই সিরিজেও আর পড়বে না। উইকেট আলাদা হবে আর ভারতও ও রকম আর খেলবে না। কিন্তু এমএস ধোনির টিমকে দেখে মনে হয়নি, ওরা সে সব ভাবছিল বলে। সব সময় যেন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছটফট করছে, প্রতি মিনিটে যেন বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে পুণেটা অঘটন। ভারতীয় টিমের সঙ্গে ওটা হতে পারে না।

যে মনোভাব একটা চ্যাম্পিয়ন টিমের থাকে।

Advertisement

দেখুন, মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানে এখন ভারত যা-ই করবে, সবই বিশ্বকাপের বিচারে দেখা হবে। জিতলে ভাল দিকগুলো বলা হবে, হারলে খোঁজা হবে সমস্যার সমাধান। সেই থিওরি ধরে রাঁচি ম্যাচ থেকে ধোনিদের কোন কোন পজিটিভ দিক চোখে পড়ল, বলব। তবে পরে। আমার ক্রিকেটীয় খুঁটিনাটির থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগল টিম ইন্ডিয়ার মনোভাব। কোথাও একফোঁটা ঢিলে দিচ্ছে না, গোটা ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ এক আগুনে মেজাজে খেলে যাচ্ছে। এমন ভাবে জিততে চাইছে, যাতে শ্রীলঙ্কা বোঝে আসলে কারা সেরা। পুণেতে নিজেরা উড়ে গিয়েছে তো রাঁচিতে প্রতিপক্ষকে আরও নির্মম ভাবে উড়িয়ে দিতে চাইছে। যে আগুন একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে লাগে। যে আগুন একটা চ্যাম্পিয়ন টিমের থাকে।

আর টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে যে এ রকম অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে, তার কারণ একটাই— প্রত্যেককে নিজের ভূমিকা বুঝিয়ে দেওয়া। টি-টোয়েন্টি এমন একটা ফর্ম্যাট যেখানে মাঠে নেমে ক্রিকেটারদের দায়িত্ব বোঝাতে গেলে আপনি শেষ। ওটা করতে হবে ম্যাচের অনেক আগে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে যে ব্যাপারে একশোয় দু’শো দিতে হবে।

কেন? শিখর ধবনকে ধরুন। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে ওকে অন্য রকম লাগছে তো? কারণ, ওকে টিম বলে দিয়েছে তোমার কাজ শুরুতে নেমে স্ট্রাইক রেট ঠিক রাখা। উল্টো দিকে রোহিত ধরবে, চেষ্টা করবে শেষ পর্যন্ত থেকে যেতে। তোমাকে থাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। নিটফল— শিখর শুক্রবার স্রেফ ধ্বংস করে দিল শ্রীলঙ্কা বোলিংকে। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হাফসেঞ্চুরিটা করে গেল। ৫১ করতে নিল মাত্র ২৫ বল! আবার যুবরাজকে দেখুন। যুবি এ দিন যখন নেমেছিল, থিসারা পেরিরা হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে। একশোর মধ্যে নিরানব্বই জন স্রেফ একটা সিঙ্গলস নিয়ে সেটা আটকে দেবে। যুবি সেটা করলই না। ও আউট হল ঠিকই, কিন্তু ছয় মারতে গিয়ে। অর্থাৎ, ড্রেসিংরুম মেসেজ পরিষ্কার— উনিশ ওভারে নেমেছ, স্রেফ ওড়াতে হবে। থিসারার হ্যাটট্রিক তোমাকে আউট করে হল কি না, ভাবার দরকার নেই।

এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো একটা মেগা টুর্নামেন্টের আগে খুব দরকার। যেগুলো হয়তো এমনিতে চোখেই পড়বে না কিন্তু আদতে কাজে দেবে। যুবরাজের ব্যাপারটা যেমন বোঝালো, টিমে এখন নিঃস্বার্থ ক্রিকেটই শেষ কথা। কে কত বড় নাম, সেটা না দেখে। আবার হার্দিক পাণ্ড্যকে দেখুন। ধোনি হঠাৎ ওকে আজ পাঁচে পাঠিয়ে দিল। ছেলেটা খেললও অসাধারণ। ১২ বলে ২৭ রানের একটা দুর্দান্ত ইনিংস খেলে গেল। যার মধ্যে সেনানায়েকে-কে মারা পরপর দু’টো বিশাল ছক্কাও আছে। হার্দিককে আমি অনেক দিন থেকে দেখছি বলে জানি, ওর হাতে কী শট আছে, না আছে। একটা সময় ছেলেটা বরোদার অনূর্ধ্ব টিমে জায়গা পেত না। সেখান থেকে আজ এখানে। যুবরাজ-ধোনির আগে ওকে পাঠিয়ে এটা পরিষ্কার করা হল, টিম ওর উপর কতটা ভরসা রাখে। যে কুশনটা বড় টুর্নামেন্টে ভাল করতে হলে একজন জুনিয়রের দরকার।

বোলিংয়েও একই জিনিস দেখছি। অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ডে-তে আমরা বিশ্রী ভাবে হারছিলাম কারণ, ওখানে আমাদের কোনও ছ’নম্বর বোলার ছিল না। কেউ মার খেলেও কিছু করার নেই, হাতে পাঁচ জন বোলার। পঞ্চাশ ওভার করাতে হবে। এখানে কিন্তু পেসার তিন জন। বুমরাহ, পাণ্ড্য, নেহরা। আবার স্পিন অপশন চার— অশ্বিন, জাডেজা, রায়না, যুবরাজ। যে কারণে ধোনি অনেক ফুরফুরে মেজাজে বোলারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আনতে পারছে।

আজও শ্রীলঙ্কা ইনিংসের প্রথম ছ’ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাধারণত নেহরার সঙ্গে বুমরাহকে আনা যেতে পারত। কিন্তু ধোনি আনল অশ্বিনকে। কারণ ও জানে, বুমরাহকে পরে রাখলে লাভ বেশি। নতুন বলের চেয়ে ডেথে অনেক বেশি কাজে দেবে। ইয়র্ক করাবে, স্লোয়ার দিতে পারবে। আর নেহরার কামব্যাক তো অসাধারণ।

আমি একবারও বলছি না যে, ভারত এর পর থেকে রোজই জিতবে। ভারত হারবেও। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল তুমি কী ভাবে তৈরি হচ্ছ? আমি তো বলব টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির প্রথম থেকে শেষ আমাকে মুগ্ধ করছে। দল নির্বাচনের সময়, যে সব প্লেয়ারদের নির্বাচন করা হয়েছে, যে ভাবে আসল টুর্নামেন্টের আগে টিম তৈরি হচ্ছে— সব কিছু। সোজাসুজি বললে, প্রসেসটা ঠিক থাকছে। কথাটা আপনারা প্রচুর শুনেছেন জানি। কিন্তু মেগা টুর্নামেন্টের আগে ওটাই আসল।

পদ্ধতি ঠিক থাকলে কিন্তু ফলাফলে খুব ভুলের জায়গা থাকে না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ১৯৬-৬ (ধবন ৫১, রোহিত ৪৩, রায়না ৩০, পাণ্ড্য ২৭, থিসারা ৩-৩৩)।

শ্রীলঙ্কা ১২৭-৯ (কাপুগেদেরা ৩২, চণ্ডীমল ৩১, অশ্বিন ৩-১৪, বুমরাহ ২-১৭)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন