Sports News

শিল্টনের সেভ, কিংসলের গোলে ডার্বি জয় মোহনবাগানের

প্রথমার্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও গ্যালারিতে সমর্থক ঢোকার ঢল চলছিলই। বাইরে থাকা মোহনবাগান সমর্থকরা তত ক্ষণে জেনে গিয়েছে কিংসলের গোলে এগিয়ে গিয়েছে তাঁদের দল। উৎসবটা তাই মাঠে ঢোকার আগে থেকেই শুরু করে ফেলেছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৪৬
Share:

ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোলের পর কিংসলের উচ্ছ্বাস। ছবি: এআইএফএফ।

মোহনবাগান ১ (কিংসলে)

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল ০

শেষ বাঁশি বাজতেই গোল ছেড়ে রিজার্ভ বেঞ্চের দিকে ছুটে এলেন শিল্টন পাল। শেষ বেলায় তাঁর হাতেই তো রক্ষা হল মোহনবাগানের দুর্গ!

Advertisement

অসাধারণ একটা সেভ। সেখানেই শেষ হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের সব আশা। দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় ফিরেও শেষ রক্ষা হল না। শুধুমাত্র গোল করতে না পেরে।

বাজিমাত মোহনবাগানের। ডার্বি জিতে আই লিগে অনেকটাই এগিয়ে গেল তারা। সঞ্জয় সেনের বিরুদ্ধে জেতাটা কঠিন, শনিবার বলেছিলেন খালিদ জামিল। তিনি যে সত্যি ছিলেন সেটাও প্রমাণ হয়ে গেল।

৬৮ হাজারের গ্যালারি প্রায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন সমর্থকরা। সরকারি হিসেব বলছে ৬৪ হাজার ৬৩০। ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি ফাঁকা হয়ে গেল ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই। মোহনবাগান গ্যালারিতে তখন অসময়ের উৎসব। নিয়ম ভেঙে বাজির শব্দ। সনি, কিংশুকরা ছুটে গেলেন গ্যালারির দিকে। গ্যালারিতে তখন হাজার তারার সমাগম। জ্বলে উঠেছে মোবাইল-টর্চ।

রবিবার মোহনবাগান গ্যালারি।

প্রথমার্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও গ্যালারিতে সমর্থক ঢোকার ঢল চলছিলই। বাইরে থাকা মোহনবাগান সমর্থকরা তত ক্ষণে জেনে গিয়েছে কিংসলের গোলে এগিয়ে গিয়েছে তাঁদের দল। উৎসবটা তাই মাঠে ঢোকার আগে থেকেই শুরু করে ফেলেছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। মাঠে তখন আগাম হোলি। যদিও তখন ম্যাচ বাকি অনেকটাই। ৯০ মিনিট শেষে যদিও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হল না।

৩৮ মিনিটে পর পর কর্নার পেয়ে যাওয়াটাই কাজে লাগিয়ে ফেললেন সনি, কিংসলেরা। তার ঠিক দু’মিনিট আগেই কাতসুমির কর্নার থেকে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন এডু। দ্বিতীয়ার্ধে সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও কিছু। গোলের নীচে একবার অপ্রতিরোধ্যও হয়ে উঠতে দেখা গেল শিল্টন পালকে। বাঁ দিক থেকে যে ভাবে রালতের শট মাথার উপর দিয়ে বাঁচালেন সেটাই এ দিনের ম্যাচের সেরা।

একমাত্র গোলের আগেই সনির কর্নার ঘিরে বক্সের মধ্যে বচসায় জড়িয়েছে দুই দল। হাল্কা ধাক্কাধাক্কি। সনির কর্নার বাইরে গেল কর্নারের বিনিময়েই। আবারও কর্নার। সেই সনি। কর্নার উড়ে এসেছিল বাঁ দিক থেকে। ইস্টবেঙ্গল বক্সের মধ্যে তখন পায়ের জঙ্গল। সনির মাপা কর্নার বক্সের মধ্যে ড্রপ করে উঠে আসে বেশ খানিকটা উচ্চতায়। সেই বলে হেড দিতে লাফিয়েছিলেন ডিকা কিন্তু তিনি নাগাল পাননি। বল পেয়ে যান কিংসলে। তাঁর হেড চলে যায় গোলে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল বক্সের সব চাঞ্চল্য, সব উত্তেজনা মোহনবাগানের উৎসবে পরিণত হয়।

শুরুতেই সুযোগ এসে গিয়েছিল মোহনবাগানের সামনে। ম্যাচ তখন ১৪ মিনিটে পা দিয়েছে। ক্রোমার একটা নিশ্চিত গোলের শট ক্রসপিসে লেগে ফিরে আসে বক্সের মধ্যে। ফিরতি বলে ডিকার শট সহজেই নিজের দখলে নেন ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার লুই ব্যারেটো। এর পর একাধিক বার ক্রোমাকে দেখা গিয়েছে আক্রমণে উঠতে। এর মধ্যেই ২১ মিনিটে অনূর্ধ্ব-২২ ফুটবলার মেহতাবকে তুলে রক্ষণকে পোক্ত করতে চুলোভাকে নামিয়ে দিলেন খালিদ। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সঞ্জয় সেনও হাঁটলেন একই পথে। নরহরিকে তুলে নামালেন ফৈয়াজকে।

হতাশ হয়েই ফিরতে হল ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিকে।

সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনেও। ৩০ মিনিটে যখন চুলোভার ক্রস থেকে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন প্লাজা। ১৪ মিনিটে ক্রোমার শট ক্রসবারে লাগার পর ৩২ মিনিটে আবারও মোহনবাগানের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াল পোস্ট। সনির কর্নার থেকে কিংসলের হেড পোস্টে লেগে ফেরে। ডার্বির উত্তাপে অল্প-বিস্তর ধাক্কাধাক্কি, হলুদ কার্ড তো ছিলই। ৫৬ মিনিটে গুরুতর আহত হয়ে মাঠ ছাড়লেন ডিকা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। তিনি না থাকলেও দল জিতেছে স্বস্তি দেবে এই বিদেশিকে।

আরও পড়ুন

ডার্বি আঁচে গা সেঁকছে আজ কলকাতা

শিলিগুড়ি থেকে ডার্বি শহরে ফিরল এক পক্ষকে উৎসবে ভাসিয়ে, অন্য পক্ষকে কাঁদিয়ে। দু’বছর পরের যুবভারতীতে ডার্বির বোধন হল মোহনবাগানের জয় দিয়েই। খুব উচ্চমানের ফুটবল উপহার দিয়েছে দুই দল এমনটা বলা যাবে না। তবে, আই লিগের প্রথম দুই ম্যাচের তুলনায় অনেকটাই সংঘবদ্ধ। সে আক্রমণই হোক বা রক্ষণ। মাঝমাঠেও খেলা তৈরি হল দুই দলেরই। এখনও পড়ে পুরো লিগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে অনেক হিসেব।

তবে, একটা ডার্বি একটা দলকে কতটা বদলে দিতে পারে সেটাই এখন দেখার। সঞ্জয় সেনের নামের পাশে আরও একটা আই লিগ লেখা হবে, না দীর্ঘ ক্ষরা কাটিয়ে আই লিগ পাবে ইস্টবেঙ্গল, তার জন্য অপেক্ষাও বেশ দীর্ঘ।

মোহনবাগান: শিল্টন, কিংসলে, কিংশুক, রিকি, অরিজিৎ, ডিকা (শিল্টন ডিসিলভা), ইউতা, রেনিয়ের (নিখিল), সনি, ক্রোমা, নরহরি (শেখ ফৈয়াজ)।

ইস্টবেঙ্গল: ব্যারেটো, এডু, গুরবিন্দর, মেহতাব (চুলোভা), দীপক, আমনা, কাটসুমি, বাজি (চার্লস), রালতে, ব্রেন্ডন (লোবো), প্লাজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন