ভূস্বর্গের বাগানে সবুজ-মেরুন ফুল ফোটালেন বেইতিয়ারা

হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়া তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তিন দিন আগেই দল নিয়ে শ্রীনগর পৌঁছে গিয়েছিলেন কিবু ভিকুনা। গত বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসি ভূস্বর্গের প্রবল ঠান্ডার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫১
Share:

উন্মাদনা: প্রবল ঠান্ডা ও তুষারপাত উপেক্ষা করেই গ্যালারিতে ভিড় শ্রীনগরের ফুটবলপ্রেমীদের। পিটিআই

জোসেবা বেইতিয়া-নংদাম্বা নওরেম যুগলবন্দিতে রিয়াল কাশ্মীরকে হারিয়ে আই লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে এল মোহনবাগান।

Advertisement

হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়া তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তিন দিন আগেই দল নিয়ে শ্রীনগর পৌঁছে গিয়েছিলেন কিবু ভিকুনা। গত বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসি ভূস্বর্গের প্রবল ঠান্ডার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছিল। রিয়াল কাশ্মীরের বিরুদ্ধে সমতা ফিরিয়েও হার বাঁচাতে পারেনি। কিবু ভিকুনার নিখুঁত রণনীতিতে রবিবার ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল শ্রীনগরে।

প্রবল ঠান্ডার জন্যই রবিবার সকালে ম্যাচের সময় আধ ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছিল। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মোহনবাগান দল যখন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হোটেল ছেড়ে স্টেডিয়ামের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে, তখন তুষারপাত চলছে। কৃত্রিম ঘাসের উপরে বরফের আস্তরণ সরানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন মাঠের কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ হওয়া নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। যদিও তুষারপাত, প্রবল ঠান্ডা দমাতে পারেনি ফুটবলপ্রেমীদের। সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের গেটের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁরা। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখতে মাঠে এসেছিলেন মাত্র ১৭০০ দর্শক। এ দিন এক লাফে সেই সংখ্যাটা প্রায় দশ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় হাজার দু’য়েক মহিলা ও শিশু। রবিবার সকালে তাঁদের প্রিয় দলের জয় দেখার আশা পূরণ না হলেও সাক্ষী থাকলেন নওরেমদের অনবদ্য ফুটবলের।

Advertisement

কলকাতা ছাড়ার আগেই মোহনবাগানের স্পেনীয় কোচ কাশ্মীর-জয়ের রণনীতি চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। রিয়াল কাশ্মীরের কোচ ডেডিড রবার্টসনের জন্ম স্কটল্যান্ডে। দীর্ঘ দিন খেলেছেন ইংল্যান্ডে। তাঁর কোচিংয়ে ব্রিটিশ ঘরনার ফুটবলই খেলছেন দানিশ ফারুখেরা। অর্থাৎ, প্রচণ্ড গতিতে লম্বা ও উঁচু পাসে আক্রমণের ঝড় তোলা। এবং সেট-পিস থেকে গোল করা।

কিবুর রণনীতিতে স্কটিশ কোচের যাবতীয় পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। মোহনবাগান ফুটবলারদের লক্ষ্য ছিল— এক) বল নিজেদের দখলে রেখে বিপক্ষের ছন্দ নষ্ট করে দেওয়া। ঠিক সেটাই ম্যাচের শুরু থেকেই নিখুঁত ভাবে করে গিয়েছেন ফ্রান গঞ্জালেস, শেখ সাহিল, নওরেম, পাপা বাবাকর জিওয়াহারা। ৬২ শতাংশ বল ছিল তাঁদের দখলে। দুই) ডিফেন্ডারদের কিবু বলে দিয়েছিলেন, নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে ফাউল করা চলবে না। রিয়াল কাশ্মীর কোনও ভাবেই ফ্রি-কিক যেন না পায়। তিন) বিপক্ষের কর্নার কিকের সময় সতর্ক থাকা। ম্যাচের পরে তৃপ্ত কিবু বলছিলেন, ‘‘আমরা জানতাম, এই ম্যাচটা একেবারেই সহজ হবে না। রিয়াল কাশ্মীর কঠিন প্রতিপক্ষ। লম্বা পাসে খেলে। মেসন রবার্টসনের ফ্রি-কিক ও কর্নার ভয়ঙ্কর। তাই কোনও ঝুঁকি নিইনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেই সফল হয়েছি।’’

মোহনবাগানের তিকিতাকার ভুলভুলাইয়ায় হারিয়ে গিয়ে একের পর এক পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে আরও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন দানিশেরা। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই যেন ছিল মোহনবাগান। ৭২ মিনিটে ধনচন্দ্র সিংহেক লম্বা থ্রো থেকে উড়ে আসা বল ড্যানিয়েল সাইরাসের পিঠে লেগে বেইতিয়ার কাছে যায়। ডান পায়ের শটে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন স্পেনীয় তারকা। দু’মিনিটের মধ্যেই ২-০ করেন নওরেম। সুহের ভি পি-র পরিবর্তে নামা ব্রিটো পি এম রিয়াল কাশ্মীরের বক্সে ঢুকে পাস দেন। বল না থামিয়েই জালে জড়িয়ে দেন নওরেম। জোড়া গোলের ধাক্কা সামলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি রিয়াল কাশ্মীর। সঙ্গে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছিলেন গোলরক্ষক শঙ্কর রায়ও।

রবিবার ম্যাচ চলাকালীন দেখা গিয়েছিল, দু’দলেরই রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারেরা কম্বল দিয়ে শরীর ঢেকে বসে রয়েছেন। বেইতিয়ারাও গ্লাভস ও জার্সির নীচে গরম পোশাক পরে নেমেছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়ায় এই জয় কতটা তাৎপর্যপূর্ণ? কিবু বলছেন, ‘‘এই আবহাওয়ায় আমরা খেলতে অভ্যস্ত নই ঠিকই। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সব ধরনের পরিবেশেই খেলতে হবে।’’ যদিও এই ম্যাচকে সেরা বলতে রাজি নন তিনি। বললেন, ‘‘চার্চিলের বিরুদ্ধে আমরা এর চেয়েও ভাল খেলেছিলাম। আজ জিতে লিগ টেবলের শীর্ষ স্থানে উঠেছি। এই ছন্দটা ধরে রাখাই এখন লক্ষ্য।’’

এই মুহূর্তে ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট মোহনবাগানের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সের পয়েন্ট এক ম্যাচ কম খেলে ৯। তৃতীয় পঞ্জাব এফসির পয়েন্ট ৬ ম্যাচে ৯। চারে থাকা ইস্টবেঙ্গলের ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট।

শীর্ষ স্থান দখল করেও উচ্ছ্বসিত নন কিবু। বলছেন, ‘‘সবে মাত্র পাঁচটা ম্যাচ খেলেছি। শুধু আজকের দিনটাই এই জয় উপভোগ করব। সোমবার থেকে পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়ান অ্যারোজকে নিয়ে ভাবা শুরু করব।’’

রিয়াল কাশ্মীর: পুর্বা টেম্পা লাচেনপা, মেসন লি রবার্টসন, অ্যারন কাটবি, লাভডে ওকেচুকাও, আর্শপ্রীত সিংহ, নবীন গুরুং, বাজি আর্মান্ড (নোহেরে ক্রিজ়ো), ফারহান গনি, কালাম মাইকেল, দানিশ ফারুখ ও সুভাষ সিংহ (চেস্টারপল লিংডো)।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তো, ড্যানিয়েল সাইরাস, ধনচন্দ্র সিংহ, শেখ সাহিল, গঞ্জালেস, ফ্রান গঞ্জালেস, নংদাম্বা নওরেম (শেখ ফৈয়জ), সুহের ভি পি (ব্রিটো পি এম) ও পাপা বাবাকর জিওয়াহা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন