সেরা সম্মান দিতে চায় সরকার, দীপা বলছেন, আমি যোগ্য নই

বইগুলো সঙ্গে করেই এনেছিলেন রিওয়। জিমন্যাস্টিক্সে বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে, যখন যেটুকু সময় বের করতে পেরেছেন, ডুব দিয়েছেন পড়াশোনায়। দেশে ফিরেই যে এমএ পরীক্ষা, মাথায় সেটা ঘুরছে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

বইগুলো সঙ্গে করেই এনেছিলেন রিওয়। জিমন্যাস্টিক্সে বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে, যখন যেটুকু সময় বের করতে পেরেছেন, ডুব দিয়েছেন পড়াশোনায়। দেশে ফিরেই যে এমএ পরীক্ষা, মাথায় সেটা ঘুরছে।

Advertisement

কিন্তু সব চিন্তা ছাপিয়ে মাঝেমধ্যেই গ্রাস করছে আক্ষেপটা। খালি হাতে দেশে ফেরার আক্ষেপ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর ছাত্রী রিও ছাড়ার আগের দিন বলছিলেন, ‘‘দেশে ফিরে কোনও সংবর্ধনায় যেতে চাই না।’’ জিমন্যাস্ট আর তাঁর কোচ অবশ্য স্বীকার করলেন, ‘‘চাপে পড়ে কয়েকটা জায়গায় হয়তো যেতে হবে। কিন্তু কোথাও যেতে মন চাইছে না।’’ দীপা যোগ করলেন, ‘‘এত কাছে পৌঁছেও পদক নিয়ে ফিরতে পারছি না। কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে দেশে ফিরতে। কী বলব সবাইকে? সেই সময়টা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। বুকের ভেতরটা উথাল-পাথাল করছে। বারবার মনে হচ্ছে ব্রোঞ্জটা পেতে পারতাম!’’ বলতে বলতে আবেগে আটকে আসে দীপার গলা।

Advertisement

দেশকে পদক দিতে পারেননি বলে তাঁর ‘অস্বস্তি’। এ দিকে দেশে এ দিনই খেলাধুলায় ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান খেলরত্নের জন্য নাম উঠেছে তাঁর। কথাটা বলতেই ত্রিপুরার জিমন্যাস্টের অস্বস্তি যেন শতগুণ বেড়ে গেল মুহূর্তে। বললেন, ‘‘আমার কোনও পুরস্কার চাই না। পরের অলিম্পিক্সে একটা পদক আমি পাবই। তার পর আমাকে কিছু দিতে চাইলে দিতে পারে সরকার।’’

তবে নিজে কিছু না চাইলেও কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর জন্য যথাযোগ্য সম্মানের দাবিটা আবার তুললেন। বললেন, ‘‘কোচ আমাকে যে ভাবে এই জায়গায় তুলে এনেছেন তাতে ওঁর দ্রোণাচার্য পাওয়া উচিত। আমি ওঁর ছাত্রী, এটা আমার কাছে গর্বের।’’

আজ, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় রিও ছাড়ছেন ভারতীয় খেলাধুলায় ইতিহাস তৈরি করা মেয়ে। ২০ অগস্ট ভোরে তাঁদের দিল্লি পৌঁছনোর কথা। সেখানে সাইয়ে কিছু কাজ সেরে সোজা ত্রিপুরা। ২১ অগস্ট থেকে পরীক্ষা যে!

আগের দিন শপিংয়ে বেরিয়ে ছিলেন কোচের সঙ্গে। কিন্তু দু’জনে এতটাই আনমনা যে, কার্ড নিতে ভুলে যান। জানতেন না, এখানে সরাসরি ডলার দিয়ে কিছু কেনা যায় না। এ দিন আবার কার্ড নিয়ে বেরোলেন। ‘‘কত দিন বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই। দেখি কী পাওয়া যায়। যা দাম,’’ বলছিলেন দীপা।

গোটা দেশ আপনাদের অপেক্ষায়। কী বলবেন সবাইকে দেশে ফিরে? ‘‘বলব, এ বার পারলাম না। পরের বারের টোকিও বা অন্য টুনার্মেন্ট থেকে পদক আনার চেষ্টায় ত্রুটি থাকবে না।’’ দীপার পাশে বসে কোচ বিশ্বেশ্বর বললেন, ‘‘আমি আমৃত্যু অলিম্পিক্স পদকের জন্য লড়ে যাব। দু’জনে মিলে ঠিক করেছি অলিম্পিক্সের পোডিয়ামে এক বার উঠতেই হবে।’’ দীপা তখন কোচকে অভয় দিচ্ছেন, ‘‘স্যার আমি হারিয়ে যাব না। দেখবেন, পারবই।’’

রিও থেকে কী শিক্ষা নিয়ে ফিরছেন? দীপার মন্তব্য, ‘‘আত্মবিশ্বাস। যে দিন রিওয় প্রথম অলিম্পিক্স টিকিট পেলাম সে দিন ভেবেছিলাম এটাই শেষ। হয়তো আর এগনো যাবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, চেষ্টা করলে আমিও অলিম্পিক্স পদক পেতে পারি।’’

বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলতে গেলেও বিদেশি কোচ না-পসন্দ দীপার। বললেন, ‘‘বিদেশি কোচ কী শেখাবে? আমার কোচ যা শিখিয়েছেন সেটা করেই এত দূর এলাম। একটুর জন্য পদক ফস্কাল।’’ আর বিদেশে ট্রেনিং? দীপার মন্তব্য, ‘‘সাই বলেছে আরও সুযোগ-সুবিধা দেবে। ফোম পিট করে দেবে। অন্যরা তিন-চার বছর ধরে যে ভাবে তৈরি হয়ে আসে সে ভাবে তৈরি হয়ে যাব এখান থেকে। সাইয়ের পরিকাঠামো বিদেশের চেয়ে কম কিছু নয়।’’ ঠিক করেছেন পরীক্ষার পর কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে ফের নেমে পড়বেন অনুশীলনে।

বোঝাই যায়, ধন্যি মেয়ে টোকিওয় পদক জিততে কতটা মরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন