ধোনিকে পাঁচ নম্বরে নামানো যেতেই পারত

বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সঙ্গে সেখানেই প্রথম দেখা। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭২ বলে ৫০ রান করে রান আউট হয়ে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরছিল। ওর চোখ, মুখের অবস্থা দেখে সত্যি খারাপ লাগছিল।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

পরাস্ত ধোনির মুখেও যন্ত্রণা। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে। এপি

ঠিক সতেরো বছর আগের কথা। তখন আমি বাংলার কোচ। আগরতলায় বাংলা বনাম ঝাড়খণ্ড ওয়ান ডে ম্যাচ ছিল। দেখলাম একটি ছেলে ওপেন করতে নামল। মাথায় বড় চুল। প্রথম ওভার থেকেই রণদেব বসুদের প্রচণ্ড মারতে শুরু করল। প্রথম তিন ওভারেই প্রচুর রান তুলে দিয়েছিল ঝাড়খণ্ড। পূর্বাঞ্চলে এ ধরনের ব্যাটিং সাধারণত দেখা যায় না। স্কোরারকে জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেটা কে? বলল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

Advertisement

বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সঙ্গে সেখানেই প্রথম দেখা। বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭২ বলে ৫০ রান করে রান আউট হয়ে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরছিল। ওর চোখ, মুখের অবস্থা দেখে সত্যি খারাপ লাগছিল। সেই সময়ে ভারতের ফিরে আসার আর কোনও সুযোগ ছিল না। নায়ক হতে হতে অনেকের কাছে হয়তো খলনায়কে পরিণত হবে ধোনি। কিন্তু যারা ক্রিকেট বোঝে, তারা বলতে পারবে জাডেজার সঙ্গে সেই মুহূর্তে বড় জুটি না গড়লে এত দূর কিন্তু ম্যাচটি এগোয় না। অনেক আগেই জিতে যায় নিউজ়িল্যান্ড।

এই ধোনিই যদি সাত নম্বরে না নেমে খানিকটা উপরের দিকে নামত, তা হলে ম্যাচের ফল কিন্তু অন্য রকম হলেও হতে পারত। পাঁচ রানে তিন উইকেট হারানোর পরে সত্যি ভেবেছিলাম ধোনি নামতে চলেছে। প্রাক্তন অধিনায়ক সেই মুহূর্তে নামলে উইকেটে থিতু হওয়ার অনেক বেশি সময় পেত। সঙ্গ দিতে পারত ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ড্যদের মতো অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের। কিন্তু ক্রিকেট বড়ই অনিশ্চয়তার খেলা। নিদাহাস ট্রফি জেতানো নায়ক দীনেশ কার্তিকের উপরেই ভরসা রাখল কোহালি। কিন্তু কার্তিক বড় ফর্ম্যাটের ক্রিকেটারই নয়। শেষের দিকে তিন চার ওভারে ও তফাৎ গড়ে দিতে পারে। বড় ম্যাচকে ঘোরানোর ক্ষমতা কার্তিকের আছে বলে মনে হয় না। প্রথম পাওয়ারপ্লে থেকে ধোনি ব্যাট করলে লকি ফার্গুসন, জিমি নিশামরা এতটা ভয়ডরহীন বোলিং করতে পারত না। ধোনির নামটাই ওদের চাপে রেখে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ধোনিকে যত ক্রিজে সময় দেবে, ততই ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বাড়বে।

Advertisement

এক দিনের ম্যাচ যখন দু’দিনের হয়ে যায়, অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। এ দিন সেটাই হয়েছে। মঙ্গলবার যদি ম্যাচ শেষ হত, ভারত ম্যাচটা জিতে যেতে পারত। কিন্তু হাতে এক রাত সময় পেয়ে ছন্দ হয়তো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বিরাট-বাহিনীর। ব্যতিক্রম ধোনি ও জাডেজা। একাধিক ম্যাচ জেতানোর অভিজ্ঞতা থেকেই ওরা বুঝতে পেরেছিল সেই মুহূর্তে রানের চেয়েও বেশি প্রয়োজন উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার। ভারত ম্যাচ জিতলে ধোনি-জাডেজার এই ইনিংসই কিন্তু উদাহরণ হিসেবে রয়ে যেতে পারত ক্রিকেটের মানচিত্রে।

ধোনির ইনিংসের বেশ কিছু সমালোচনার জায়গাও রয়েছে। বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার যদি ৫৯ বলে ৭৭ রানের ইনিংস উপহার দিতে পারে, সে জায়গায় ধোনি অন্তত ৯৫ স্ট্রাইক রেট রেখে ইনিংস সাজাতে পারত। তাতে জাডেজার খানিকটা চাপ কমে যেত। ধোনির এই হাফসেঞ্চুরির ইনিংসে মাত্র একটি চার ও একটি ছয়। বলের গতি ধোনিকে কখনও সমস্যায় ফেলে না। সমস্যা তৈরি করে মন্থর গতির বোলিং। লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, এ দিন নিউজ়িল্যান্ড পেসারেরা ধোনির বিরুদ্ধে একাধিক স্লোয়ার বল করেছে। তার সেরা উদাহরণ অবশ্যই লকি ফার্গুসন। ১৪৮ কিমি/প্রতি ঘণ্টায় বল করে। কিন্তু ধোনিকে ছ’টি বলের মধ্যে চারটিই স্লোয়ার দিচ্ছিল। মিচেল স্যান্টনারেরও প্রশং‌সা করতেই হচ্ছে। ও হয়তো বুঝেছে বাঁ-হাতি স্পিনারের বিরুদ্ধে ধোনি একেবারেই শক্তিশালী নয়। তাই ক্রমশ ফ্লাইট দিয়ে বল ঘোরানোর চেষ্টা করে স্যান্টনার। ওকে অতিরিক্ত সম্মান দিয়ে ফেলেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা। ব্যতিক্রম জাডেজা। স্পিনারের বিরুদ্ধে স্টেপ-আউট করে বলের উপরে গিয়ে খেললে কতটা সহজ হয়ে যায় তা কিন্তু দেখিয়ে দিল জাডেজা। ওর সঙ্গে ধোনি যদি খানিকটা ভাল স্ট্রাইক রেটে খেলত, তা হলে এই দিন দেখতে হত না।

এই হার থেকেও অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়া উচিত বিরাট কোহালির। প্রথম একাদশ নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কিন্তু দলের মিডল অর্ডারে কোন দু’জন খেলবে, তা ঠিক করে ফেলা উচিত ওর। আমার পছন্দ শ্রেয়স আইয়ার ও অজিঙ্ক রাহানে। টেকনিকের দিক থেকে শ্রেয়সের কোনও বিকল্প হয় না। রাহানের অভিজ্ঞতাই বলে দেবে ও কত বড় ক্রিকেটার। ম্যাঞ্চেস্টারে ওর মতো ব্যাটসম্যান থাকলে মাঝের ওভারগুলোতে পার্থক্য গড়ে দিতে পারত ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন