‘কিছু করলে তো আইসিসি কথা বলত’
Sports News

যুদ্ধের আগে বল-বিকৃতির অভিযোগকে শীতল শাসন

বিরাট কোহালির পিছনে লাগলে যে কী হয়, হাড়ে-হাড়ে টের পেয়ে গেল ব্রিটিশ মিডিয়া! এত দিন কোহালিকে অহেতুক খোঁচাখুঁচির অর্থ ছিল ইটের বদলে পাটকেল। অস্ট্রেলীয়রা যা খুব ভাল জানেন।

Advertisement

চেতন নারুলা

মোহালি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৪
Share:

গন্তব্য মোহালির নেট। শুক্রবার। -পিটিআই

বিরাট কোহালির পিছনে লাগলে যে কী হয়, হাড়ে-হাড়ে টের পেয়ে গেল ব্রিটিশ মিডিয়া!

Advertisement

এত দিন কোহালিকে অহেতুক খোঁচাখুঁচির অর্থ ছিল ইটের বদলে পাটকেল। অস্ট্রেলীয়রা যা খুব ভাল জানেন। শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ককে ‘স্পয়েলড ব্র্যাট’ বলে মানসিক আক্রমণ করার অপচেষ্টা হয়েছিল। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররাই করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টে মিচেল জনসনকে বাউন্ডারি হজমের পর কোহালির ‘ফ্লাইং কিসের’ অপমান সহ্য করতে হয়েছে, গোটা অস্ট্রেলিয়া টিমটাকে দেখতে হয়েছে পরপর চার টেস্টে কোহালির সেঞ্চুরি-শাসন। ব্রিটিশ মিডিয়ার ও রকম দুম করে বল-বিকৃতির ভিডিও বার করে দেওয়ার পিছনে আসল উদ্দেশ্য কী, বলা যায় না। কিন্তু শুক্রবারের মোহালির পর একটা কথা অনায়াসে বলা যায়।

এত করেও কোহালির ডিফেন্স এতটুকু নড়ানো গেল না!

Advertisement

বরং ব্রিটিশ মিডিয়া দেখে ফিরল এক অন্য কোহালিকে। যে কোহালি অপমানজনক প্রশ্ন শুনে আগের মতো রেগে যান না। বরং শান্ত থেকে জবাব দেন, উত্তরে মিশিয়ে দেন শ্লেষ। যে কোহালি প্রতিপক্ষকে প্রতি-অপমানের ফ্লাইং কিস আর ছোড়েন না, উল্টে প্রভাবহীন থেকে চুরচুর করে দেন বিপক্ষ মিডিয়ার মানসিক ডিফেন্স। করে দেন পাল্টা প্রশ্নে। তির্যক মন্তব্যের পর মন্তব্যে।

মোহালিতে সংশ্লিষ্ট ইংরেজ সাংবাদিক বেশ বাড়াবাড়িই শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রাক্-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত অধিনায়ককে বল-বিকৃতি নিয়ে ব্রিটিশ মি়ডিয়ার প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে, আন্দাজ করা যাচ্ছিল। কিন্তু এতটা হবে, ভাবা যায়নি। বিশাখাপত্তনম টেস্ট ভারত জেতার পর এক ইংরেজ ট্যাবলয়েড একটা ভিডিও পেশ করে দাবি করতে থাকে যে, রাজকোট টেস্টে কোহালি বল-বিকৃতি ঘটিয়েছেন। বলা হয়, কোহালিকে মুখের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে সেই আঙুল বলের উপর ঘষতে দেখা গিয়েছে।

প্রশ্নটা তাই আসত, এসেওছে। কোহালি প্রথমে সপাটে স্টেপ আউট করলেন। পরিষ্কার বলে দিলেন, পুরো ঘটনাটা সিরিজ থেকে তাঁদের ফোকাস সরানোর চেষ্টা বলেই তাঁর মনে হচ্ছে। ‘‘দেখে অবাক লাগছে যে, পুরো ব্যাপারটা বেরোল বিশাখাপত্তনম টেস্টের পর। আমি যা শুনেছি, ব্যাপারটা তো রাজকোটে হয়েছে। তা হলে?’’ প্রশ্নকর্তার দিকে পাল্টা শীতল বাউন্সার ছুড়ে দেন কোহালি।

পরেরটাও উড়ে আসে কয়েক মুহূর্তে। কোহালি জুড়ে দেন, ‘‘আমার সত্যি সত্যি কী মনে হয় জানেন? এটা স্রেফ সিরিজ থেকে আমার ফোকাস সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। আমার কাছে কোন কাগজে কী বেরোল না বেরোল, কিছু যায় আসে না। আইসিসি কী বলল, সেটা যায় আসে। আমরা শুধু সেটাকে সম্মান করি। আর এ সব অভিযোগ? এ সব জল্পনা? কাগজ-টাগজ বিশেষ পড়ি না, বলতেও পারব না। তবে একজন আমাকে এটা বলায় শুনে খুব হেসেছিলাম। আসলে কিছু লোক চায় সিরিজ থেকে আমাদের ফোকাস সরাতে। শুভেচ্ছা থাকল তাদের জন্য!’’

সারমর্ম জলবৎ তরলং— ওহে ইংল্যান্ড, আমাকে ভাঙার চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই। বরং সে চেষ্টায় গেলে তোমাদের নিজেদেরই গুঁড়ো-গুঁড়ো হয়ে যেতে হবে!

কিন্তু ব্রিটিশ মিডিয়া তো, এত সহজে হাল ছাড়ে নাকি? ওই সাংবাদিক ফের প্রশ্ন তুললেন। বিষয় একই, শুধু তীক্ষ্মতায় আরও চড়া। কোহালিকে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করা হল— ফাফ দু’প্লেসি যা করেছেন, আপনিও তাই করেছেন কি না? ‘বল-বিকৃতি’ শব্দগুচ্ছ শুধু ব্যবহার না করে। কে জানত, কোহালি উত্তরটা পাল্টা এক প্রশ্নে দেবেন। ওই সাংবাদিককেই জিজ্ঞেস করে বসবেন, তিনি ঠিক কী করেছেন?

‘‘আমি কী করছিলাম? যদি কিছু করে থাকতাম, আইসিসি তো আমার সঙ্গে কথা বলত, তাই না?’’ বলে পুরো প্রসঙ্গে যবনিকা পতন ঘটিয়ে দেন ভারত অধিনায়ক। অতীব নম্র থেকে। এক বারের জন্যেও মেজাজ না হারিয়ে।

ঘটনা হল, ইংল্যান্ড মিডিয়া যতই ব্যাপারটা নিয়ে ভারতীয় শিবিরকে ক্রমাগত উত্যক্ত করতে ব্যস্ত থাকুক, এক প্রখ্যাত প্রাক্তন ইংরেজ ক্রিকেটারই এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি, নাসের হুসেন। এক সাক্ষাৎকারে হুসেন বলে দিয়েছেন, বিরাটের বল-বিকৃতি নিয়ে ফালতু সময় নষ্ট না করে ইংল্যান্ড অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ভাবুক। যা করলে কাজের কাজ হবে।

ভুল বলেননি নাসের। এমনিতেই সিরিজে ০-১ পিছিয়ে ইংল্যান্ড। মোহালিতে হেরে গেলে সিরিজে ফিরে আসা কঠিন নয়, কঠিনতম হয়ে যাবে। মোহালি উইকেটও অ্যালিস্টার কুকের টিমকে বিশেষ স্বস্তিতে রাখবে না। পিচে বেশ কিছু ফাটল আছে। সাম্প্রতিক ইতিহাস ধরলে মোহালি পিচ স্পিনার-বন্ধু। সেখানে অশ্বিন-জা়ডেজা সামলে যুদ্ধে ফিরতে হবে কুকদের।

ইংল্যান্ড টিমের খোলনলচেও বদলাচ্ছে কিছুটা। যেমন, বেন ডাকেট বাদ পড়ছেন। তাঁর জায়গায় ঢুকছেন জস বাটলার। এ সবের বাইরেও ইংরেজ টিমের সামনে থাকছেন এক চলমান অশনিসংকেত, যাঁকে নিয়ে একটার পর একটা প্ল্যান করে চলেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের অতীত থেকে বর্তমান। প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন তিনটে টোকটা ছেড়েছেন। অ্যালিস্টার কুক আবার ধরছেন, প্রথম তিরিশটা বল। যা করার নাকি তার মধ্যেই করতে হবে।

ক্রিকেটারের নাম কী, সবাই জানে। বিরাট কোহালি। এটা নতুন কিছু নয়। নতুনটা হল, এই বিতর্কিত পরিস্থিতিতে কোহালি কী করেন, সেটা।

কোনও এক ফাফ দু’প্লেসি একই বিতর্কের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি করবেন আর তিনি ছেড়ে দেবেন, হয়?

টিভিতে মোহালি টেস্ট

ভারত বনাম ইংল্যান্ড, তৃতীয় টেস্ট, প্রথম দিন,

সকাল ৯-২০, স্টার স্পোর্টস ওয়ান, স্টার স্পোর্টস থ্রি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন