বুমরাই সেরা অস্ত্র ভারতের, ছন্দে থাকলে দুর্ভোগ আছে

বিরাট কোহালিদের অস্ট্রেলীয় অভিযান শুরুর লগ্নে আনন্দবাজার-কে দীর্ঘ, একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জেফ থমসন সেই তাঁর পুরনো আগুনে মেজাজে। আজ শেষ কিস্তি।বিরাট কোহালিদের অস্ট্রেলীয় অভিযান শুরুর লগ্নে আনন্দবাজার-কে দীর্ঘ, একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জেফ থমসন সেই তাঁর পুরনো আগুনে মেজাজে। আজ শেষ কিস্তি।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৭
Share:

যশপ্রীত বুমরা। ইনসেটে জেফ থমসন। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: কারও কারও অভিযোগ, ক্রিকেট খেলাটা বড্ড বেশি করে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। সেটা কি এমন প্রতারণার দিকে বোলারদের ঠেলে দেওয়ার কারণ হতে পারে?

Advertisement

জেফ থমসন: আমি আপনার এই কথাটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে, খেলাটা বড্ড বেশি করে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। কিন্তু সেটা তো সব সময়েই ছিল। ক্রিকেটের সমস্ত নিয়মই যেন ওই ব্যাটাগুলোর কথা মাথায় রেখে তৈরি করা। আমি তো মাঝে এক বন্ধুকে বলছিলাম, ব্যাটসম্যানগুলোকে যদি গদা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, তা হলে আমাদেরও একটু-আধটু ওভারস্টেপ করতে দে না! আমাদেরই বা সব সময় বোলিং ক্রিজকে মেনে চলতে হবে কেন? তার পর দেখি ওই ভারী, গদার মতো ব্যাট দিয়ে ওরা কী করে!

প্র: ব্যাটের ওজন, গুণগত মানে অনেক তফাত। আজকের ব্যাটগুলো দেখে আপনার কী মনে হয়?

Advertisement

থমসন: আগে ভাল শট মারলে শুনতাম, ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলেছে। কারণ ওই জায়গাটাই নাকি সব চেয়ে বেশি শক্ত আর পুরু থাকে। এখনকার দিনে ব্যাটগুলো দেখে তো মনে হয়, পুরোটাই মাঝখান। পাশগুলোও এত চওড়া আর পুরু। আইসিসি এখন কিছুটা নিয়মকানুন আনার চেষ্টা করছে ব্যাট নিয়ে। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই, সেটা এক সমুদ্রে একটি নুড়ির মতো কি না। পিচগুলো সব ব্যাটসম্যানদের কথা ভেবে বানানো হয়। বিশ্বব্যাপী পিচের চরিত্রে পরিবর্তন আনা দরকার। সমান ভাবে ব্যাটসম্যান ও বোলাররা যাতে সাহায্য পায়, সেটা দেখা উচিত। তবে বললেও আমি জানি, এ রকম হবে না। ক্রিকেটের ইতিহাসটাই দেখুন না— যখন ‘গ্রেট’দের তালিকা তৈরি হয়, সেখানে ক’জন বোলারের জায়গা হয়? সেখানে তো ব্যাটসম্যানগুলো একচেটিয়া অধিকার নিয়ে বসে আছে। যেন ক্রিকেট খেলাটাকে ওরাই একমাত্র মহান করে তুলেছে। আমরা, বোলাররা শুধু ছুটে এসে বলই করব! কিন্তু যতই নিয়ম ব্যাটসম্যানদের পক্ষে থাকুক, বল-বিকৃতির মতো ঘটনা একদম বন্ধ করতে হবে। তার জন্য চরম শাস্তি দিলে দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার সিরিশ কাগজ দিয়ে বল ঘষার যে ঘটনাটা আমাদের সকলকে রাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের রেগে যাওয়ার অধিকারও আছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দল মানে অস্ট্রেলিয়ার মানুষের কাছে সেটা গর্বের প্রতীক। টিভি-তে পুরো এপিসোডটা দেখতে দেখতে একটাই কথা বেরিয়ে আসছিল মুখ থেকে—লজ্জাজনক! লজ্জাজনক!

প্র: দু’দলের বোলিং আক্রমণই বেশ ভাল। আপনি কাদের এগিয়ে রাখতে চাইবেন?

থমসন: একদম ঠিক কথা। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে পারে ওদের বোলিং। তেমনই ভারতের হাতেও ভাল বোলিং রয়েছে। এবং, দু’টো দলেই সম্পূর্ণতা আছে বোলিংয়ে। এমন নয় যে, শুধু পেস বা শুধু স্পিন বিভাগ ভাল। দু’দল মিলিয়ে আট জন বোলারকে ধরলে প্রত্যেকে বিশ্ব মানের। কী পেসাররা, কী স্পিনাররা। অস্ট্রেলিয়াতে অতিরিক্ত গতি আর বাউন্স দেখে অনেক বোলার বাড়তি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সেই কারণে বেশি শর্ট পিচ্‌ড বল করার প্রবণতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে। এটা এড়াতে হবে। সঠিক লাইন-লেংথ খুঁজে পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ভারতের ক্ষেত্রে আর একটা খুব উজ্জ্বল দিক আছে। ওদের পেস বোলিং বিভাগই শুধু দুর্দান্ত উন্নতি করেনি, ফিল্ডিংটাও চমকে দেওয়ার মতো হয়ে গিয়েছে। আমার তো মনে হয়, ভারতীয় ক্রিকেটে সব চেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ফিল্ডিংয়েই। এমন আশ্চর্যজনক উন্নতি সত্যিই অভাবনীয়! বোঝাই যাচ্ছে, এমনি এমনি ওরা এক নম্বর টেস্ট দলের র‌্যাঙ্কিংটা অর্জন করেনি! আমার মনে হয়, এই ভারতীয় দলটা যদি ব্যাটিং আর বোলিংয়ে শৃঙ্খলা আনতে পারে, যে কোনও দলের পক্ষেই ওদের হারানোটা কঠিন কাজ হবে। তবে আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি, টেস্ট দলে শিখর ধওয়নকে না দেখে। কী সব স্ট্রোক খেলতে পারে ছেলেটা! মাই গড! আমি তো ভাবতেই পারছি না, এ রকম এক জন স্ট্রোকমেকারকে কী করে দলের বাইরে রাখা যায়!

প্র: বিরাট কোহালিকে আপনার ​কেমন লাগে?

থমসন: বিরাট কোহালি কেমন প্লেয়ার, সেটা আমার মুখ দিয়ে শোনার জন্য নিশ্চয়ই আর কেউ বসে নেই। সকলেই এত দিনে জেনে গিয়েছে। বিশ্বমানের ক্রিকেটার, জিনিয়াস। হয়তো জিনিয়াস বললেও কম বলা হবে। ব্যাটিংকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে চলে যাচ্ছে বিরাট। অস্ট্রেলিয়ায় ও ব্যাট করতে ভালবাসে, এখানকার মানুষের প্রশংসা জিতে নিতে পছন্দ করে। বিদেশের মাঠে, কঠিন সমস্ত পরিস্থিতি আসলে বিরাটকে আরও তাতিয়ে দেয়। ওকে সেরা খেলাটা খেলতে উদ্বুদ্ধ করে। আমার মতে, সেটাই আসল আগ্রাসী মনোভাব। বিরাটের একটা ব্যাপার দেখে আমি সব চেয়ে প্রভাবিত। ওর আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাব। সব সময় মাঠের মধ্যে ডাকাবুকো ভঙ্গিতে নিজেকে মেলে ধরতে প্রস্তুত। কোনও কিছুতেই ভয় পাওয়ার ছেলে নয়। শরীরী ভাষায় জেদ আর প্রত্যয় ফুটে উঠছে। শুধুমাত্র উপস্থিতি দিয়েই প্রতিপক্ষ শিবিরে থরহরিকম্প ধরিয়ে দিতে পারে। বিরাট চ্যালেঞ্জ ভালবাসে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালবাসে। আর আমিও ওকে এই কারণে ভালবাসি।

প্র: কোহালিকে আউট করার নকশা কী হতে পারে?

থমসন: আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়ার কিছু পরিকল্পনা আছে বিরাটকে নিয়ে। প্রথম টেস্ট পুরোটা দেখলে তার পরেই সেটা বোঝা যাবে। স্টার্ক, কামিন্স, হেজলউড বিশ্বমানের বোলার। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওদের খেলা মোটেও সহজ কাজ হবে না। আমার তাই মনে হয়, আগামী এক মাস খুবই উপভোগ্য, উত্তেজক একটা দ্বৈরথ অপেক্ষা করে আছে। অস্ট্রেলীয় বোলিং বনাম ভারত এবং তাদের অধিনায়ক। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য দারুণ বিজ্ঞাপন হতে যাচ্ছে এই লড়াই। তবে অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে ভারত যেন নেথান লায়নের কথা ভুলে না যায়। এই পরিবেশে কিন্তু ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে ওর।

প্র: বলা হচ্ছে, এত ভাল বোলিং আক্রমণ নিয়ে কখনও অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে আসেনি কোনও ভারতীয় দল। আপনি কি একমত?

থমসন: টু হান্ড্রেড পার্সেন্ট একমত। ভারতের এত ভাল বোলিং আক্রমণ আমি কখনও দেখিনি।

প্র: ভারতীয় বোলারদের মধ্যে কাকে আপনার ভাল লাগে?

থমসন: ওই ছেলেটার নাম কী যেন? ওই যে বেশ মজাদার বোলিং অ্যাকশন?

প্র: যশপ্রীত বুমরা?

থমসন: হ্যাঁ, হ্যাঁ, বুমরা। ওকে আমার বেশ ভাল লেগেছে। ছেলেটার বলে ভাল গতি আছে। খাড়া বাউন্স আছে, যেটা যে কোনও ব্যাটসম্যানের পক্ষে সামলানো কঠিন। পিচকে ব্যবহার করতে জানে। সেটাই শেষ নয়, বুদ্ধিটাও আছে। গ্রেট বোলার হতে গেলে সব গুণগুলোই দরকার। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতের এক চ্যাম্পিয়ন বোলার পেয়েছে ভারত। বুমরা যদি ছন্দ পেয়ে যায়, আমাদের ব্যাটসম্যানদের দুর্ভোগ আছে। আমি ভারতের ক্যাপ্টেন হলে এই সিরিজে ওর উপরেই বাজি ধরতাম। উইকেট তুলতে হলে বা পার্টনারশিপ ভাঙতে গেলে ওর কাছেই যেতাম। আমার মনে হয়, বুমরাকে শুধু শৃঙ্খলা রাখতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। তা হলেই উইকেট আসবে। তবে বুমরাকে আমার ম্যাচউইনার মনে হয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন