দু’সপ্তাহে ক্যাপ্টেন হট থেকে ক্যাপ্টেন কুল

টিমের ফেরারিকে রেসিং ট্র্যাকে তুলতে চান ধোনি

গতি— এই শব্দটা পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই রাখেন তিনি। গতি আর এমএস ধোনির সম্পর্ক যেন সাসপেন্স আর স্যর অ্যালফ্রেড হিচককের মতো। একটা প্রসঙ্গ উঠলে অন্যটা আসবেই।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:৩২
Share:

খুশির সময়। ধোনি হাসছেন।

গতি— এই শব্দটা পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই রাখেন তিনি।

Advertisement

গতি আর এমএস ধোনির সম্পর্ক যেন সাসপেন্স আর স্যর অ্যালফ্রেড হিচককের মতো। একটা প্রসঙ্গ উঠলে অন্যটা আসবেই।

মাথায় হেলমেট আর হাতে রাইডিং গ্লাভস চাপিয়ে যখন শখের কনফেডারেট এক্স১৩২ বা কাওয়াসাকি নিনজা এইচ২-তে চেপে বসেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’, তখন তিনি গতির পূজারি।

Advertisement

গতির এই পূজারি যদি দেখেন, তাঁর সাধের ‘টিম ইন্ডিয়া’ ছ’নম্বর গিয়ারে দৌড়চ্ছে, তখন তাঁর চেয়ে বেশি খুশি আর কে হতে পারে?

মঙ্গলবার যখন প্রাক বিশ্বকাপ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে ঠিক এই প্রশ্নটাই করা হল, বেশ উত্তেজিত দেখাল বিরাট কোহালিদের ক্যাপ্টেনকে। বললেন, ‘‘প্রযুক্তি তো এখন আমাদের আট নম্বর গিয়ারেও পৌঁছে দিয়েছে। আমরা অবশ্য ছ’নম্বরে দৌড়চ্ছি। এই গতিতে প্রথম বল থেকে ফোকাসটা রাখা সবচেয়ে জরুরি। আর গিয়ার তুলতে হবে বলে মনে হয় না। টিম যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতেই আমার খুশির হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’’

কোথায় সেই ধোনি? যাঁকে দু’সপ্তাহ আগে এই একই পাঁচতারা হোটেলের ঠান্ডা কনফারেন্স রুমে অবসর-প্রশ্নে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছিল? সে দিন যে ক্যাপ্টেন কুল মেজাজ হারিয়ে অবসর নিয়ে প্রশ্ন তোলা সাংবাদিককে চাঁচাছোলা ভাষায় উত্তর দিয়েছিলেন, এ দিন তিনিই ফিরে এলেন স্বমেজাজে। ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল মুডে। একটা এশিয়া কাপ জয়ই যেন তাঁকে ফের সেই চেনা মেজাজে এনে দিয়েছে।

তুমুল গতিতে চললে যে এক মুহূর্তের অসাবধানতাই চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা ধোনির মতো সুপার-রাইডার ভাল মতোই জানেন। তাই টিম ইন্ডিয়ার ফেরারিকে রেসিং ট্র্যাকে তোলার আগে টিমের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান এই মন্ত্র, ‘‘মুহূর্তের অসাবধানতা এড়িয়ে চলো।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ফর্ম্যাটটা যেহেতু টি-টোয়েন্টি, তাই ২-৩ ওভার খারাপ খেললেই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে নক আউট পর্বে। সামান্য দু-একটা ভুলেই আমরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে পারি। তাই এই বিশ্বকাপকে মোটেই সহজ ভাবে নেওয়া যাবে না।’’

কোহালি ব্যস্ত শ্যুটিংয়ে।

তাঁর টিম যে ফেরারির গতিতে দৌড়চ্ছে, তা ধোনির সতীর্থদের দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। মঙ্গলবার ভারতীয় ক্রিকেটাররা প্রত্যেকে প্রায় হাজারখানেক করে অটোগ্রাফ দিলেন বোর্ডের স্মারক ব্যাটের স্টিকারে। বিরক্তিকর হলেও তেমন অভিব্যক্তি নেই কারও মুখে। বোর্ডের টুইটার হ্যান্ডলে রোহিত শর্মাকে সই করতে করতে চেঁচাতে শোনা গেল, ‘‘ওয়ার্ল্ড কাপ ইজ হিয়ার ফেলোজ, ওয়ার্ল্ড কাপ ইজ হিয়ার।’’ সুরেশ রায়না সই করতে করতে বললেন, ‘‘দেখুন, সারা দিন লেগে যাবে এতগুলো সই করতে। তবু এই অটোগ্রাফ সেশনটা উপভোগ করছি, বন্ধুরা।’’ দুই ‘পঞ্জাব দা পুত্তর’ বিরাট কোহালি ও হরভজন সিংহ একে অপরকে প্রায় জড়িয়ে ধরে সই করতে করতে বিসিসিআই-এর ক্যামেরার সামনে বললেন, ‘‘এই বিশ্বকাপে আমরা জান লড়িয়ে দেব। চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দেব। পঞ্জাবিদের গর্বে এতটুকু আঁচ লাগতে দেব না।’’ আর ফুরফুরে মেজাজে থাকা কোহালি হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আর এই স্টিকারগুলো সবাই মিলে সই করে ট্যাঙ্ক রোডের মার্কেটে বিক্রি করে দিলে কেমন হয়!’’

দলের এই স্পিরিটটাই উপভোগ করছেন ক্যাপ্টেন ধোনি। ২০১১-র বিশ্বকাপের আগের কথা মনে করিয়ে দিতে বললেন, ‘‘তখন কী রকম অবস্থায় ছিলাম আমার এখন মনে নেই। তবে এ বার যে রকম সব দিক দিয়ে সেট টিম নিয়ে বিশ্বকাপে নামছি, তার চেয়ে ভাল অবস্থা আর কী হতে পারে? একমাত্র ফিটনেসটাই যা চিন্তার বিষয়। হঠাৎ করে কারও চোট হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বাকিটা ঠিক আছে।’’

গত বারের বিশ্বকাপের আগের অবস্থার কথা মনে নেই ঠিকই। কিন্তু নিজেদের নানা স্মরণীয় অভিজ্ঞতার কথা তো কখনও ভুলবেন না। দুপুরে টিভি সংস্থার প্রোমোর শুটিংয়ে, শোনা গেল, নিজেদের সেই অভিজ্ঞতার কথা ভাগাভাগি করলেন ধবন, অশ্বিন, জাডেজা, যুবরাজ এবং ক্যাপ্টেন নিজেও।

সন্ধ্যায় আবার স্থানীয় ম্যানেজার সমীর দাশগুপ্তর সঙ্গে বসে বুধবারের বিস্তারিত শিডিউল, খাওয়ার মেনু এবং আনুষঙ্গিক সব কিছু ঠিক করে ফেলল টিম ম্যানেজমেন্ট। দু’দিন বিশ্রামের পর বুধবার দুপুরে ইডেনে প্র্যাকটিসে নামবে ভারত। তাই চারটে প্র্যাকটিস উইকেটই নাকি চেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্র্যাকটিস করবে বলে প্রাথমিক ভাবে সেই চাহিদায় না করে দেওয়া হলেও হোম টিমের আবদার রাখা হতে পারে বলে সিএবি সূত্রের খবর। দশজন নেট বোলারও চেয়েছে ভারতীয় দল। ছ’জন স্পিনার ও চারজন পেসার। রোহিত, অশ্বিনের পর এ দিন শহরে ঢুকে পড়লেন আশিস নেহরার স্ত্রী-ও। তাতে অবশ্য কারও বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই।

ধোনির শিবিরের এই ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’ টিম ইন্ডিয়ার ফেরারি-কে কত দূর নিয়ে যেতে পারবে? উত্তরটা জানার অপেক্ষায় সারা দেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন