যুবভারতীতে বিশ্বজয়ের দুই ব্রিটিশ নায়ক

সোনার দুই ছেলে আর স্বপ্নের রাত

শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে স্পেনকে উড়িয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না ফিলিপ ফোডেন।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:০২
Share:

যুগলবন্দি: শনিবার ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের দুই অস্ত্র, ফোডেন (বাঁ দিকে) ও ব্রিউস্টার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

স্বপ্নপূরণের রাত। ইউরো কাপে ছ’মাস আগে হারের বদলা।

Advertisement

শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে স্পেনকে উড়িয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না ফিলিপ ফোডেন। ম্যাচের পর ফিফা চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কেঁদেই ফেলল ইংল্যান্ডের নতুন তারকা। ‘‘আমরা কখনওই হাল ছাড়িনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ব্যবধান কমাতে পেরেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল,’’ বলতে থাকল সে।

স্পেন-বধের পর ড্রেসিংরুমে ফিরেই উৎসবে মেতে উঠেছিল ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা। সাংবাদিক বৈঠকের কক্ষ থেকেও শোনা যাচ্ছিল ব্রিউস্টার-দের উল্লাসধ্বনি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক নির্লিপ্ত। সোনার বল হাতে নিয়ে এক সাপোর্ট স্টাফের সঙ্গে টিম বাসে উঠে পড়ল। তখনও কিন্তু উৎসব চলছে ড্রেসিংরুমে।

Advertisement

ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র অ্যাকাডেমি থেকে উত্থান ফোডেনের। এই মরসুমের শুরু থেকেই সের্জিও আগুয়েরো-দের সঙ্গে অনুশীলন করেছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছিল। ফোডেনের সতীর্থদের মতে, ইংল্যান্ডের নতুন তারকাও অন্য গ্রহের ফুটবলার! অধিনায়ক জোয়ের ল্যাটিবিওডিয়ারের কথায়, ‘‘ফোডেন শুধু দুর্দান্ত ফুটবলারই নয়, অন্য গ্রহ থেকে এসেছে।’’ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালেও দুর্ধর্ষ খেলেছিল ইংল্যান্ডের সোনার ছেলে। কিন্তু সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে নায়ক রিয়ান ব্রিউস্টার। এ দিনও স্প্যানিশ শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেয় টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ফোডেন করে জোড়া গোল। ইংল্যান্ড মিডফিল্ডারের খেলায় শুধু যুবভারতীর প্রায় সাতষট্টি হাজার দর্শক নন, উচ্ছ্বসিত পেপ গুয়ার্দিওলাও! অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালেই যে তিনি পেয়ে গেলেন নতুন অস্ত্র। তাঁর দেশ স্পেনের হারের পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেপ বলেছেন, ‘‘ফোডেনের জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। এই বয়সেই বিশ্ব সেরা হওয়ার স্বাদ পেয়েছে। এই অভিজ্ঞতা ওকে বড়দের বিশ্বকাপে দারুণ ভাবে সাহায্য করবে।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘ফোডেনের বয়স সতেরো হয়নি। মরসুমের শুরু থেকেই সিনিয়র টিমের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করছে। এই অভিজ্ঞতা ওকে আরও উদ্বুদ্ধ করবে।’’

শনিবার ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা উচ্ছ্বসিত আর একজনকে নিয়েও। তার নাম জেডন স্যাঞ্চো। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগের ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলতে চলে যেতে হয়েছে স্যাঞ্চো-কে। কিন্তু তার অভাব কোচ স্টিভেন কুপারকে একেবারেই বুঝতে দেয়নি ফোডেন, ব্রিউস্টাররা। এ দিন ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইংল্যান্ড শিবিরে চলে এল স্যাঞ্চোর অভিনন্দনবার্তা। আর প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় সতীর্থকেই উৎসর্গ করল ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা।

ছ’মাস আগে ইউরো কাপ ফাইনালে এই স্পেনের বিরুদ্ধেই টাইব্রেকারের সময় বল গোলপোস্টে মেরেছিল ব্রিউস্টার। ক্রোয়েশিয়ায় সে দিন ট্রফি হাতে উৎসব করেছিল আবেল রুইস-রা। ইংল্যান্ড তারকা ড্রেসিংরুমের মেঝেতে দু’হাঁটুর মধ্যে মুখ গুজে কেঁদেছিল। ক্রোয়েশিয়া থেকে কলকাতা। ইউরো কাপ থেকে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ। নাটকীয় ভাবে বদলে গেল ছবিটা। বদলে গেল দুই প্রতিশ্রুতিমান তারকার পৃথিবীও। যুবভারতীতে শনিবারের রাতে থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আবেল দেখল ব্রিউস্টার-দের উল্লাস। কেউ গ্যালারির সামনে গিয়ে নাচছে। কেউ আবার ইংল্যান্ডের পতাকা শরীরে জড়িয়ে দৌড়চ্ছে। আর ব্রিউস্টার বলে চলল, ‘‘আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তে। পিছিয়ে থেকেও নিজেদের উপর বিশ্বাস হারাইনি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন