ইন্ডিয়া হান্ড্রেড পার্সেন্ট: নয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ স্পেনের

রুইজদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম ছিল ‘ক্যাম্পেওনেস দে ইউরোপা’। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসার আগে রাতারাতি বদলে গিয়েছিল সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১২
Share:

পর্বতের চূড়া কলকাতায়। সেখানে দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে উঠতে হবে ২৮ অক্টোবর রাতে।

Advertisement

ঠিক একশো উনষাট দিন আগে ১৯ মে-র রাত। ক্রোয়েশিয়ায় সে দিন উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বুস্কেতস, ইনিয়েস্তা-দের দেশের খুদে ফুটবলাররা। হোটেলে ফেরার পরেই কোচ সান্তিয়াগো দেনিয়া স্যাঞ্চেজের কাছ থেকে এমন বার্তাই পেয়েছিল স্পেনের অধিনায়ক আবেল রুইজ। নির্দেশ ছিল, সতীর্থদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোচের এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

তখন রুইজদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম ছিল ‘ক্যাম্পেওনেস দে ইউরোপা’। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসার আগে রাতারাতি বদলে গিয়েছিল সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম। ভারতে পা দেওয়ার পরে ফেরান তোরেস, রুইজ-রা সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম রাখে ‘লোডিং লা ইন্ডিয়া ফিফটি পার্সেন্ট’। আর বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতায় পা দেওয়ার পরে সেই গ্রুপের নাম এখন ‘ইন্ডিয়া হান্ড্রেড পার্সেন্ট’।

Advertisement

শনিবার রাতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে ‘লা রোখিতা’ (স্পেনের অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে এই নামেই ডাকে স্প্যানিশরা) ব্রিগেড ট্রফি হাতে পোজ দিলে, নতুন নাম পেতে পারে স্প্যানিশ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলারদের এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। এমনই খবর স্পেন শিবির সূত্রে।

সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন স্পেনের কোচের সঙ্গে এসেছিল ফুটবলার উগো গুইয়ামন। তাঁর হুঙ্কার, ‘‘কলকাতা থেকে ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার জন্য মুখিয়ে রয়েছে আমাদের গোটা দল। দু’বছর ধরে এই স্বপ্নটাই আমরা দেখে আসছি। ইংল্যান্ড আমাদের চেয়ে চেহারায়, শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও ভুলে যাবেন না আমরা ইউরোপ সেরা হয়েছি ওদের হারিয়েই।’’

অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে এই নিয়ে চার বার ফাইনালে উঠেছে স্পেন। কিন্তু এক বারও এই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা যায়নি মাদ্রিদে। চোদ্দ বছর আগে ফিনল্যান্ডে এই টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল স্পেন। যে টিমে ছিলেন ফ্যাব্রেগাস, দাভিদ ভিয়া-রা। সেই দাভিদ ভিয়ার অন্ধ ভক্ত আবার এই স্পেন টিমের ফেরান তোরেস। যাকে নিয়ে ইতিমধ্যেই টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে। ডান দিক দিয়ে তোরেসের গতিতে বক্স কাট করে ঢুকে পড়াকে ভয় পাচ্ছে ইংল্যান্ড।

সেই তোরেস তার দেশের সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছে তার মনের ইচ্ছা। ‘‘ইউরোপ সেরা হওয়ার পর থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বিশ্বকাপ জিতছি। এ বার সেই সুযোগ আসছে আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে। কাজেই তা হাতছাড়া করা চলবে না। অনেক বড় ফুটবলারই এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। আমরা পারলে ইতিহাস তৈরি হবে কলকাতায়। এর চেয়ে বড় মোটিভেশন হয় না।’’

দশ বছর বয়সে বল মারতে গিয়ে দিদিমার চশমা ভেঙে ফেলেছিল তোরেস। দিদিমা সে দিন নাতিকে বকাঝকা না করে শপথ করিয়েছিলেন একদিন বিশ্বকাপ জিততে হবে। শনিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণের ম্যাচও তোরেসের।

তা হলে কি মাঠের বাইরে অদৃশ্য চাপের সঙ্গেও মোকাবিলা করতে হবে স্পেনকে? স্প্যানিশ কোচ সাফ বলে দেন, ‘‘কোনও চাপ নেই। চাপ কীসের? মোদ্দা কথাটা হল, জিততে হবে। আর তার জন্যই তৈরি হচ্ছি আমরা।’’

ইউরোতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কয়েকমাস পরেই ফের সামনে ইংল্যান্ড। এটা কি সুবিধার হবে? সাংবাদিক সম্মেলনে স্পেন কোচ সান্তিয়াগো দেনিয়া স্যাঞ্চেজের যা শুনে বলেন, ‘‘ওই ইংল্যান্ড আর এই ইংল্যান্ডের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। গত কয়েক মাসে অনেক উন্নতি করেছে ওরা। রক্ষণটা আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। আর আক্রমণ ভাগের কেরামতি তো দেখতেই পাচ্ছেন।’’

টুর্নামেন্টে সাত গোল করে স্পেনের সামনে এখন রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে ইংল্যান্ডের রিয়ান ব্রিউস্টার। এ দিন সে প্রসঙ্গ উঠলে স্পেন কোচ সান্তিয়োগা থেকে গুইয়ামন দু’জনেই বলে, ‘‘ব্রিউস্টার অনেক বড় প্রতিভা। কিন্তু শুধু ওকে আটকালেই হবে না বা ইংল্যান্ডের উইং প্লে বন্ধ করলেই হবে না। আটকাতে হবে গোটা ইংল্যান্ড টিমকে।’’

কলকাতায় টুর্নামেন্টের ছ’টি ম্যাচ খেলতে চলেছে ইংল্যান্ড। ফলে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে একটু সমস্যা হচ্ছে স্প্যানিশদের। কোচ সান্তিয়াগো তা নিজেও স্বীকার করছেন। তবে সেই সমস্যার সমাধানের জন্য স্প্যানিশ কোচ দ্বারস্থ আতলেটিকো মাদ্রিদে তাঁর খেলোয়াড় জীবনের এক সতীর্থের কাছে। তিনিই ফোন করে কলকাতার আবহাওয়া, পরিবেশ আর তার মোকাবিলা নিয়ে তথ্য যুগিয়ে যাচ্ছেন স্প্যানিশ শিবিরে। শুক্রবার দুপুরেও তাঁর শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে স্প্যানিশ কোচের কাছে। যার মোদ্দা কথা, ‘‘কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করেছি আমি। তুমিও কলকাতা থেকে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জিতে ফিরো।’’

কে তিনি?

তিনি জোসে মলিনা। এটিকের গত বছরের চ্যাম্পিয়ন কোচ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন