প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন না দেখলেও একটা লড়়াইয়ের স্বপ্ন দেখেছিল গোটা দেশ। আর সেই লক্ষ্যে সফল ধিরাজ, মিতেই, অভিজিৎরা।—নিজস্ব চিত্র।
ভারতীয় ফুটবলের জন্য কবে শেষ সমর্থকদের উত্তাল হতে দেখা গিয়েছে? এই প্রজন্ম মনে করতে পারবে না।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের জন্য সমর্থকদের পাগল হতে সব সময়েই দেখা যায়। কিন্তু, ইন্ডিয়ান ফুটবল টিম? বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সেই নজিরই গড়ে দিল দিল্লি। যেখানে হারতে হল ভারতকে। ব্যবধান ৩-০। কিন্তু কোথায় রাগ, ক্ষোভ? বরং একরাশ হতাশা, ‘ছেলেগুলো যে জান দিয়ে খেলল!’
তাই হয়তো ম্যাচ শেষে গ্যালারি টপকে ঝুপুৎ করে কোথা থেকে যে মাঠে ঢুকে পড়়লেন এক সমর্থক, টেরই পাননি নিরাপত্তারক্ষীরা। নেমেই সোজা তিনি ছুটে গেলেন মাঠের ভিতরে ভারতীয় টিমের কাছে। নিরাপত্তারক্ষীদের তাড়া খেতে খেতে যতটা পারলেন ছুঁয়ে দেখলেন ভবিষ্যতের তারকাদের। তার পরেই ফের দৌড়।
এটাই হয়তো ফুটবল ফিভার। আর সঙ্গে স্টেডিয়াম জুড়়ে টানা ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ চিৎকার। এটাই ছড়়িয়ে পড়়বে দেশের আনাচ-কানাচ। আর এটাই হয়তো আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে পুরো ভারতীয় দলকে।
দেখুন ফুটবল বিশেষজ্ঞ নভি কাপাডিয়া কী বলছেন ভারতের পরবর্তী দুই প্রতিপক্ষকে নিয়ে
প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন না দেখলেও একটা লড়়াইয়ের স্বপ্ন দেখেছিল গোটা দেশ। আর সেই লক্ষ্যে সফল ধিরাজ, মিতেই, অভিজিৎরা। প্রথম থেকে শেষ লড়়াই দিয়ে গেল মাঠের মধ্যের ১১ জন। আর ওই যে আগের রাতেই বলেছিলেন কোচ মাতোস, তিনি ১২ জনে খেলবেন। এ দিন তাঁর কথাটাকেও সত্যি করে দিলেন প্রায় ৪৬ হাজার সমর্থক। সব কিছুকে ছাপিয়ে হেরে যাওয়া ম্যাচেও হিরো হয়ে গেলেন ভারতের গোলরক্ষক ধিরাজ মইরাংথেম। তিনি গোলের নীচে না থাকলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। যদিও ধিরাজের বার বার জায়গা ছেড়়ে অনেকটা বেরিয়ে আসার রোগ সমস্যায় ফেলবে দলকে।
আরও পড়ুন:যুব বিশ্বকাপ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
গোলের জন্য সারা ক্ষণ ছটফট করতে দেখা গেল অনিকেত যাদবকে। বেশ কয়েক বার বক্সের মধ্যে ঢুকেও পড়়লেন। বেশ কিছু হাফ চান্সও তৈরি হল। কিন্তু...
এ দিন প্রথম দলে ছিলেন বাংলার একমাত্র অভিজিৎ সরকার। তাঁকে অনিকেতের পাশে খেলালে হয়তো হাফ চান্সগুলোকে গোলে পরিণত করার চেষ্টা করা যেত! বক্সের মধ্যে বার বার একা হয়ে পড়ল অনিকেত। পাঁচ মিডফিল্ডার নিয়ে খেললেন ঠিকই মাতোস, কিন্তু, মাঝ মাঠ থেকে খেলাটা তেমন ভাবে তৈরি হল না। বরং দুটো উইং বার কয়েক বেগ দিল ইউএস রক্ষণকে। কিন্তু, বক্সের মধ্যে লোকের অভাবে ভুগল ভারত। তার মধ্যে আনোয়ার আলির শট ক্রসবারে লেগে না ফিরলে বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচ থেকে দেশের পাশে ‘এক গোল’ নিয়ে শেষ করতে পারত ভারত। কিন্তু, তেমনটা হল না। বরং ৩ গোল হজম করেই তবে থামতে হল!
আরও পড়ুন:নব সাজে যুবভারতীতে নেই বসুর নামের ফলক, বিতর্ক
প্রথমার্ধেই অধিনায়ক জোস সার্জেন্টকে বক্সের মধ্যে ফেলে দিয়ে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি পাইয়ে দিয়েছিলেন জিতেন্দ্র সিংহ। সেই পেনাল্টি গোলেই ১-০তে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ইউএসএ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি আর রক্ষণের তালমিলের অভাবে যে ভাবে গোল হজম করতে হল ভারতকে তাতে যেন আরও বেশি রক্ষনাত্মক হয়ে পড়়েছিল দল। যার ফল, শেষ বেলায় কাউন্টার অ্যাটাকেও গোল হজম করে বসল ভারত। বেশ কয়েক বার খেই হারাতে দেখা গেল ভারতীয় ডিফেন্সকে। ভাগ্যিস গোলের নীচে ছিল ধিরাজ। যার হাতে অনেকটাই মান রক্ষা হল ভারতের।
আশা করাই যায়, প্রথম ম্যাচের পর ভারতের ফাঁক ফোকরগুলোকে মেরামত করেই ৯ অক্টোবর কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন মাতোস।