ধ্রুপদী: টেস্ট ক্রিকেটকেই যেন বাঁচিয়ে তুলল তাঁর ব্যাট। জয়-পরাজয়ের মাঝে এখন শুধুই কোহালি। ছবি: রয়টার্স।
এজবাস্টনে ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ হল নাটকীয় ভাবে। জিততে গেলে ভারতের দরকার ৮৪ রান। ইংল্যান্ডের দরকার ভারতের বাকি পাঁচ উইকেট।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে প্রথম দেড় ঘণ্টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভারত, ইংল্যান্ড—দু’দলের কাছেই। যদি বিরাট কোহালি ফের প্রথম ইনিংসের মতো মহারাজকীয় ইনিংস খেলে ভারতকে এই ম্যাচ জেতাতে পারেন, তা হলে এই টেস্ট বিরাট কোহালির টেস্ট হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। যে রকম ব্যাটিং, সে রকম অধিনায়কত্ব এবং পাল্লা দিয়ে ফিল্ডিং করে একাই একশো হয়ে লড়ছেন ভারত অধিনায়ক।
প্রথম ইনিংসে জো রুটকে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় রান আউট করা, সঙ্গে ব্যাটে ১৪৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিল্ডিংয়ের সময় বাঁ দিকে ঝুঁকে নিজের ফিটনেসকে কাজে লাগিয়ে বেন স্টোকসের যে অবিশ্বাস্য ক্যাচটা ধরলেন, ময়দানের পরিভাষায় তাকে বলা হয়, ‘আঙুল চাপা ক্যাচ’। যে ক্যাচ ধরতে গিয়ে চোট হতে পারে। ব্যাট করতে নেমে জয় এবং ইংল্যান্ডের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জিব্রাল্টারের পাহাড়ের মতো।
আমি আশাবাদী, শনিবার প্রথম এক, দেড় ঘণ্টা ইংল্যান্ড বোলারদের খেলে দিতে পারবেন কোহালি। প্রথম ইনিংসে রান পাওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে একদম আত্মবিশ্বাসী মেজাজে ব্যাট করছেন বিরাট। বুঝে গিয়েছেন অফস্টাম্পটা এখন কোথায়। শুক্রবার দেখলাম ডান পা অফস্টাম্পে ‘শাফল’ করে বল ছাড়ছেন। ফলে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাটকে সমস্যায় ফেলতে পারেননি অ্যান্ডারসন। পপিং ক্রিজের এক থেকে দেড় গজ আগে দাঁড়াচ্ছেন বিরাট। ফলে সুইং ভাঙার আগেই বল খেলে দিচ্ছেন। সঙ্গে বোলারের লেংথও এলোমেলো করে দিচ্ছেন।
শনিবার সকালেও এ ভাবেই খেলে যেতে হবে বিরাটকে। আর ভারত অধিনায়ককে সঙ্গ দেওয়ার কাজটা করুন দীনেশ কার্তিক। দু’জনকে মনে রাখতে হবে এর পরে হার্দিক পাণ্ড্য ছাড়া ব্যাট করার লোক নেই। প্রথম দিন থেকেই একটা ‘লো স্কোরিং’ টেস্ট ম্যাচ দেখছি। শুক্রবার তৃতীয় দিন আরও মজাদার একটি বিষয় দেখলাম আমরা। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান আউট হলেন স্পিনারের হাতে। আর বাকি সাতজনকে আউট করলেন ভারতীয় পেসাররা। শুক্রবারের দিনটা ছিল বোলারদের। যেখানে ভারতীয় বোলাররা ভালই কর্তৃত্ব নিয়ে বল করে গেলেন। ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসেও কম রানে আটকে রাখার ক্ষেত্রে শুরুটা করেছিলেন অশ্বিন। আর শেষটা করলেন উমেশ যাদব। মাঝের সময়ে দুরন্ত স্পেল করে গেলেন ইশান্ত শর্মা (৫-৫১)।
অ্যালেস্টেয়ার কুক প্রথম ইনিংসে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে যে ভাবে স্পিনের বিরুদ্ধে ‘প্রথম লাইনে’ খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসেও সে ভাবেই আউট হলেন। অশ্বিন দিনের সেরা বলটা করেছেন ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান জো রুটকে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক পিছনের পায়ে বেশ পোক্ত। অশ্বিনের বল ঘুরছে দেখে তিনি মিডউইকেট দিয়ে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের গন্ডগোলে শর্ট লেগে ক্যাচ উঠে যায়। যা তৎপরতার সঙ্গে ধরে নেন সেই রাহুল। এজবাস্টনে ‘ফুল লেংথে’ বল করে গেলেন অশ্বিন। শর্ট বল প্রায় করতেই দেখিনি। বরং দু’একটা অফস্পিন এমন করলেন যা অফস্টাম্পের বাইরে গেল। যাকে আমি ‘দুসরা’ বলব না। বরং এগুলোকে বলা যায়, ‘স্লোয়ার আউটসুইং’ যা ধরতে পারেননি ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা।
এ দিন দুরন্ত বল করলেন ইশান্ড শর্মা। এই ইংল্যান্ড দলে সাত জন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান রয়েছেন। কিন্তু বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের কাছে এই বলগুলোই আউটসুইং। ফলে সঠিক লেংথ বজায় রাখায় এ দিন ওঁর পাঁচ উইকেটের বেশির ভাগ শিকার বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। ভাল বল করলেন উমেশ যাদবও। তবে শামি উইকেট না পেলেও ওঁর ‘সিম পজিশন’ ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সব চেয়ে ভাল ছিল।
স্কোরকার্ড
ইংল্যান্ড ২৮৭ ও ১৮০
ভারত ২৭৪ ও ১১০-৫
ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস, আগের দিন ৯-১ এর পরে)
কিটন জেনিংস ক রাহুল বো অশ্বিন ৮
জো রুট ক রাহুল বো অশ্বিন ১৪
দাউয়িদ মালান ক রাহানে বো ইশান্ত ২০
জনি বেয়ারস্টো ক ধওয়ন বো ইশান্ত ২৮
বেন স্টোকস ক কোহালি বো ইশান্ত ৬
জস বাটলার ক কার্তিক বো ইশান্ত ১
স্যাম কারেন ক কার্তিক বো উমেশ ৬৩
আদিল রশিদ বো উমেশ ১৬
স্টুয়ার্ট ব্রড ক ধওয়ন বো ইশান্ত ১১
জেমস অ্যান্ডারসন ন. আ. ০
অতিরিক্ত ১৩
মোট ১৮০
পতন: ১-৯ (কুক, ৩.৪), ২-১৮ (জেনিংস, ৭.৪), ৩-৩৯ (রুট, ১৫.১), ৪-৭০ (মালান, ২৬.২), ৫-৮৫ (বেয়ারস্টো, ৩০.২), ৬-৮৬ (স্টোকস, ৩০.৪), ৭-৮৭ (বাটলার, ৩০.৬), ৮-১৩৫ (রশিদ, ৪৪.৪), ৯-১৭৬ (ব্রড, ৫১.৬), ১০-১৮০ (কারেন, ৫২.৬)।
বোলিং: মহম্মদ শামি ১২-২-৩৮-০, আর অশ্বিন ২১-৪-৫৯-৩, ইশান্ত শর্মা ১৩-০-৫১-৫, উমেশ যাদব ৭-১-২০-২।
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)
মুরলী বিজয় এলবিডব্লিউ বো ব্রড ৬
ধওয়ন ক বেয়ারস্টো বো ব্রড ১৩
রাহুল ক বেয়ারস্টো বো স্টোকস ১৩
বিরাট কোহালি ন. আ. ৪৩
রাহানে ক বেয়ারস্টো বো কারেন ২
অশ্বিন ক বেয়ারস্টো বো অ্যান্ডারসন ১৩
দীনেশ কার্তিক ন. আ. ১৮
অতিরিক্ত ২
মোট ১১০-৫
পতন: ১-১৯ (বিজয়, ৫.৫), ২-২২ (ধওয়ন, ৭.৩), ৩-৪৬ (রাহুল, ১৪.৬), ৪-৬৩ (রাহানে, ২১.৪), ৫-৭৮ (অশ্বিন, ২৪.৩)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ১১-২-৩৩-১, স্টুয়ার্ট ব্রড ৯-১-২৯-২, বেন স্টোকস ১০-১-২৫-১ স্যাম কারেন ৫-০-১৭-১, আদিল রশিদ ১-০-৪-০।