সেই চেনা ছন্দ কোথায়? মাহির ব্যাটিং নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন

লর্ডস থেকে লিডস— ধোনিকে একেবারেই চেনা ছন্দে ব্যাট করতে দেখা যায়নি। এই ম্যাচেও স্ট্রাইক রেট বেশ খারাপ। ৬৬ বলে ৪২ রান, মানে স্ট্রাইক রেট ৬৩.৬৩।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০৪:১০
Share:

হতাশা: ধোনি ফের সেই মন্থর।

ভারত ২৫৬-৮ (৫০)

Advertisement

ইংল্যান্ড ২৬০-২ (৪৪.৩)

এই ইং‌ল্যান্ডেই সামনের বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেট। তার আগে ইংল্যান্ডের কাছে ১-২ ফলে ওয়ান ডে সিরিজ হার ভারতীয়দের প্রস্তুতিতে একটু হলেও ধাক্কা দেবে। প্রশ্ন উঠছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটিং নিয়ে। মঙ্গলবারের ম্যাচে আবার জো রুট-অইন মর্গ্যানরা দেখিয়ে দিলেন, নিখুঁত রণনীতি নিয়ে খেললে ভারতের জোড়া স্পিন ফলাকেও সামলে দেওয়া যায়। প্রশ্ন থাকবে হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়েও। ওঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না, হার্দিক বোলিং অলরাউন্ডার না ব্যাটিং অলরাউন্ডার। জানতে ইচ্ছে করছে, কেন কে এল রাহুলকে এই ম্যাচে বসানো হল?

Advertisement

লর্ডস থেকে লিডস— ধোনিকে একেবারেই চেনা ছন্দে ব্যাট করতে দেখা যায়নি। এই ম্যাচেও স্ট্রাইক রেট বেশ খারাপ। ৬৬ বলে ৪২ রান, মানে স্ট্রাইক রেট ৬৩.৬৩। অনেকেই বলতে পারেন, কয়েকটা উইকেট তাড়াতাড়ি পড়ে গিয়েছিল, ধোনি তাই ধরে খেলেছেন। আর রানটাও তো খারাপ করেননি। কিন্তু আমি বলব, ৪২ করলেও সেই পুরনো ধোনিকে একেবারেই পাওয়া যায়নি। ধোনির ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ওঁর কাছে যেন অনেক প্রশ্নের জবাব নেই।

এ দিন পাঁচ নম্বরে নেমেছিলেন ধোনি। মানে আরও বেশি সময় পেয়েছিলেন ব্যাট করার। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না। ধোনিকে সব চেয়ে অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন ইংল্যান্ডের অফস্পিনার মইন আলি। ব্যাকফুটে মইনের বল কাট করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। মিসটাইম করেছেন, কয়েকটা বল তো ব্যাটেই লাগাতেই পারেননি। আবার ফ্রন্টফুটে এসে স্ট্রোক খেলতে গিয়ে প্যাডে লাগিয়েছেন। কোনও টাইমিংই হচ্ছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ড বোলিং সামলানোর কোনও পরিকল্পনাই নেই ধোনির কাছে। তার ওপর ইংল্যান্ড অধিনায়ক মর্গ্যান মিডউইকেট, মি়ডঅন এবং পয়েন্টের ফিল্ডারকে বাউন্ডারি লাইনে দাঁড় করিয়ে ধোনির বড় শট আটকে দেন। গোটা ইনিংসে ধোনি মেরেছেন মাত্র চারটে চার।

ধোনি যদি নড়বড়ে হন, তা হলে এক জনের ব্যাটিং কিন্তু চোখে লেগে থাকবে। তিনি ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। হেডিংলের এই পিচে পেসার, স্পিনার— সবাই সাহায্য পেয়েছেন। আর সেখানেই ফের ফুল হয়ে ফুটলেন কোহালি। ব্যাট বাড়িয়েছেন আর ফস্কেছেন। আর কোহালি নেমেই প্রথম যে স্কোরিং শটটা খেললেন, সেটা একটা চোখ জুড়িয়ে দেওয়া কভার ড্রাইভ।

কোহালির ব্যাটিংয়ের সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট ছিল দ্রুত ঠিক জায়গায় শরীর নিয়ে যাওয়া। স্কোয়ার কাট বা পুল মারার সময় দ্রুত ব্যাকফুটে চলে আসছেন। আবার সামনে বল পেলে ফ্রন্টফুটে এসে ড্রাইভ করছেন। পেসার, স্পিনার— দু’রকম বোলারকেই সহজে সামলালেন। তা সত্ত্বেও যে সেঞ্চুরি না করে ৭২ বলে ৭১ রান করে থেমে যেতে হল, তার কারণ আদিল রশিদ।

কোহালিকে বোল্ড করতে ইংল্যান্ডের এই লেগস্পিনার এমন একটা বল করলেন, যেটা আমরা শেন ওয়ার্নের মতো কিংবদন্তির কাছ থেকে অতীতে দেখেছি। রশিদের বলটা লেগস্টাম্পের ওপর পড়েছিল। স্পিন করবে ধরে নিয়েই কোহালি মিডলস্টাম্প কভার করেছিলেন। কিন্তু বল অফস্টাম্প ফেলে দেয়। টিভি-তে কোহালির মুখভঙ্গিতেই বোঝা গেল, রশিদের লেগস্পিনটা কতটা হতভম্ব করে দিয়েছে তাঁকে। আমি এই ধরনের ঘূর্ণি বল ওয়ার্নকে করতে দেখেছি। ওয়ার্নের কাঁধে প্রচণ্ড জোর ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের রশিদ যে ও রকম একটা বল করবে, ভাবতেই পারিনি।

রশিদের এই বলটা দেখে আমি আশায় ছিলাম, ভারত মাত্র ২৫৬ রান তুললেও কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল এই পিচে ইংল্যান্ডকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারবেন। কিন্তু নিখুঁত রণনীতিতে ভারতের দুই স্পিনারকে সামলে দিলেন ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান, রুট এবং মর্গ্যান। দু’জনেই অনেক পরে শট খেলছিলেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে। আস্কিং রেট খুব বেশি না থাকায়, চাপও ছিল না। ইংল্যান্ড প্রথম ১০ ওভারেই প্রায় ৮০ রান তুলে দিয়ে আস্কিং রেট পাঁচের নীচে নামিয়ে আনে। আট উইকেটে জেতার ভিত ওখানেই তৈরি হয়ে যায়।

আগেও বলেছি, এই ইংল্যান্ড দলে রুটই এমন ব্যাটসম্যান যে ব্যাকফুটে ভীষণ শক্তিশালী। ফলে স্পিনারদের খেলতে খুব একটা সমস্যায় পড়েনি। লর্ডসের পরে লিডসেও সেঞ্চুরি করলেন রুট (১২০ বলে ১০০ ন.আ.)। রান পেলেন মর্গ্যানও (১০৮ বলে ৮৮ ন.আ.)। দু’জনেই সুইপ এবং রিভার্স সুইপ অস্ত্রের প্রয়োগ করলেন প্রয়োজনমতো। সব চেয়ে বড় কথা, কোন বলে কোন শটটা খেলবেন, সে ব্যাপারে নিখুঁত ছিলেন।

এই ম্যাচে হার্দিককে দিয়ে কেন বোলিং ওপেন করানো হল, বুঝলাম না। নতুন বলে হার্দিক কিন্তু মার খেয়ে গেলেন। ইংল্যান্ডও ওই সময় রান রেটটা অনেক বাড়িয়ে নিল। আমার মনে হয়, হার্দিকের পাশাপাশি আরও এক জন অলরাউন্ডারকে দরকার আছে ভারতের। তিন ম্যাচের সিরিজ হারটা বড় কথা নয়। কথা হল, এই সিরিজের শেষে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন উঠে পড়ল। যার উত্তর তাড়াতাড়িই খুঁজে বার করতে হবে বিরাট কোহালি-রবি শাস্ত্রীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন