চ্যাম্পিয়ন: ওয়েলিংটনে রবিবার শেষ ওয়ান ডে-তে চেনা ছন্দে ফিরলেন রোহিতেরা। ৪-১ সিরিজ জয়ের ট্রফি তুুলে দেওয়া হল ভারতীয় দলের নতুন সদস্য শুভমন গিলের হাতে। ছবি: গেটি ইমেজেস
হ্যামিল্টনে শোচনীয় হারে ভারতীয় দল সম্পর্কে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটা অনেকটাই কাটল রবিবার ওয়েলিংটনের জয়ে। সে দিন ভারতীয় ব্যাটিংয়ে শুরুতেই যে ধাক্কা লেগেছিল, মাঝের ব্যাটসম্যানেরা তা না সামলাতে পারায় অনেকেই ভেবেছিলেন, বিরাট কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি না থাকায় ভারতের এই পরিণতি। কিন্তু এ দিন দেখা গেল রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন ও ধোনি ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও অন্যরা ২৫২ রান তুলে দলকে জেতার জায়গায় নিয়ে এল। ৩৫ রানে জিতে ৪-১ সিরিজ করে ফেলল ভারত।
ইনিংসের শেষ দিকে হার্দিক পাণ্ড্য (২২ বলে ৪৫) ও তার আগে বিজয় শঙ্করের (৬৪ বলে ৪৫) ব্যাটিং সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে অম্বাতি রায়ডুর ৯০ রানের ইনিংসটা সব চেয়ে কার্যকরী। বিজয় ও রায়ডুর ৯৮ রানের পার্টনারশিপই ভারতকে ১৮-৪ থেকে টেনে তোলে। যেখান থেকে জয়ের রাস্তা তৈরি করে দেয় হার্দিক। ভারতের বোলিং নিয়ে তো কোনও সমস্যাই নেই। আর ২৫২ রান স্কোরবোর্ডে পেলে যে বোলাররা ম্যাচ জেতাতে পারে, এটা আশা করা মোটেই অন্যায় নয়।
গত ম্যাচে হারের পরে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছিল ভারতীয় দল সম্পর্কে। রায়ডুর জায়গা নিয়ে, রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি নিয়ে। সব প্রশ্নেরই জবাব বোধ হয় পাওয়া গিয়েছে। রায়ডুকে নিয়ে প্রশ্ন ছিল আমার মনেও। আমি বলতে চেয়েছিলাম, ঋষভ পন্থকে প্রথম এগারোয় রাখার জন্য দীনেশ কার্তিক বা রায়ডুকে বসানো যেতেই পারে। রবিবারের এই পারফরম্যান্সের পরে হয়তো অনেকে বলবেন, রায়ডুর চার নম্বর জায়গাটা পাকা। এ কথা মানতে অসুবিধা নেই আমারও। এই ব্যাপারে ভুল প্রমাণিত হয়ে আমি খুশিও। কিন্তু চার নম্বরে পাকা হওয়ার জন্য ওকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। ওর গত কয়েকটা ম্যাচের রান দেখলে কিন্তু সেটা বলা যায় না। এই জন্যই আমি ঋষভকে চাই। ঋষভের যে খেলা ঘোরানোর ক্ষমতা আছে, তা কিন্তু অনেকেরই নেই।
উৎসব: রবিবার ম্যাচের পর মাঠেই ভাংরা নাচ ধওয়নের। ছবি: গেটি ইমেজেস।
আর স্পিনের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান এখন হার্দিক। এটা একটা বাড়তি সুবিধা। মাঝের বা শেষের ওভারগুলোতে প্রতিপক্ষ যদি স্পিনার দিয়ে রান আটকানোর চেষ্টা করে, তা হলে সেই ছক বানচাল করতে হার্দিকের ব্যাটই যথেষ্ট। বিশ্বকাপে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে হার্দিকই।
হার্দিক ও বিজয় শঙ্কর— এই দুই অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের আগে যথেষ্ট আশা জাগাল। ওয়ান ডে-র দলে দু’জন ফর্মে থাকা পেসার-অলরাউন্ডার থাকার সুবিধা অনেক। বোলিং, ব্যাটিং দুটোই এর ফলে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ওয়েলিংটনে যেমন ওরা বোলিংয়েও যথেষ্ট সাহায্য করেছে দলকে। হার্দিক দু’টো গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছে, বিজয় আবার রান আটকানোর কাজটা দারুণ করেছে। হার্দিক তো নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বকাপের প্রথম এগারোয় থাকবে। কিন্তু ১৫ জনে বিজয় থাকলে কোনও কোনও ম্যাচে দুই পেসার অলরাউন্ডারের চালটা দেওয়া যেতে পারে। যেটা এ ভাবেই কাজে লাগতে পারে। রবিবার যেটা হল।
যুজবেন্দ্র চহাল ও কুলদীপ যাদবের স্পিন জুটি নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। কিন্তু পরিস্থিতি সে রকম হলে প্রথম এগারোয় একজন ব্যাটসম্যান বা স্পিনারের জায়গায় বিজয়কে নিলে বোধ হয় খারাপ হবে বলে মনে হয় না।
এর পরে ভারতীয় দল ওয়ান ডে খেলবে ঘরের মাঠে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। গত দু’টি সিরিজে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই বিশ্বকাপের সেরা এগারো ঠিক করে ফেলেছে। এ বার এই ঘরোয়া সিরিজে বাকি চারটে জায়গাও চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে বিরাট-রবি শাস্ত্রীদের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজটাও ভারতই জিতবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ বার ক্রমশ ফর্মের শিখরে ওঠা শুরু হোক ভারতীয় দলের।
স্কোরকার্ড
ভারত ২৫২(৪৯.৫)
নিউজ়িল্যান্ড ২১৭(৪৪.১)
ভারত
রোহিত শর্মা বো হেনরি ২n১৬
ধওয়ন ক হেনরি বো বোল্ট ৬n১৩
শুভমন ক স্যান্টনার হো হেনরি ৭n১১
রায়ডু ক মুনরো বো হেনরি ৯০n১১৩
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বো বোল্ট ১n৬
বিজয় শঙ্কর রান আউট ৪৫n৬৪
েকদার যাদব বো হেনরি ৩৪n৪৫
হার্দিক ক বোল্ট বো নিশাম ৪৫n২২
ভুবনেশ্বর ক টেলর বো বোল্ট ৬n৮
মহম্মদ শামি রান আউট ১n১
যুজবেন্দ্র চহাল ন. আ. ০n১
অতিরিক্ত ১৫
মোট ২৫২ (৪৯.৫)
পতন: ১-৮ (রোহিত, ৪.১), ২-১২ (ধওয়ন, ৫.৫), ৩-১৭ (শুভমন, ৬.৬), ৪-১৮ (ধোনি, ৯.৩), ৫-১১৬ (বিজয় শঙ্কর, ৩১.৫), ৬-১৯০ (রায়ডু, ৪৩.২), ৭-২০৩ (কেদার, ৪৫.২), ৮-২৪৮ (হার্দিক, ৪৮.৬), ৯-২৫২ (ভুবনেশ্বর, ৪৯.৪), ১০-২৫২ (শামি, ৪৯.৫)।
বোলিং: ম্যাট হেনরি ১০-১-৩৫-৪, ট্রেন্ট বোল্ট ৯.৫-২-৩৯-৩, জিমি নিশাম ৫-০-৩৩-১, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ৭-০-৩৩-০, কলিন মুনরো ১০-০-৪৭-০, মিচেল স্যান্টনার ৩-০-১৮-০, টড অ্যাস্টল ৫-০-৩৫-০।
নিউজ়িল্যান্ড
কলিন মুনরো বো শামি ২৪n১৯
নিকোলস্ ক কেদার বো শামি ৮n১৫
উইলিয়ামসন ক ধওয়ন বো কেদার ৩৯n৭৩
টেলর এলবিডব্লিউ বো হার্দিক ১n৪
ল্যাথাম এলবিডব্লিউ বো চহাল ৩৭n৪৯
জিমি নিশাম রান আউট ৪৪n৩২
গ্র্যান্ডহোম এলবিডব্লিউ বো চহাল ১১n৮
স্যান্টনার ক শামি বো হার্দিক ২২n৩৭
অ্যাস্টল এলবিডব্লিউ বো চহাল ১০n১৬
ম্যাট হেনরি ন. আ. ১৭n৯
বোল্ট ক শামি বো ভুবনেশ্বর ১n৩
অতিরিক্ত ৩
মোট ২১৭ (৪৪.১)
পতন: ১-১৮ (নিকোলস্, ৩.৩), ২-৩৭ (মুনরো, ৯.১), ৩-৩৮ (টেলর, ১০.২), ৪-১০৫ (উইলিয়ামসন, ২৫.৪), ৫-১১৯ (ল্যাথাম, ২৮.৩), ৬-১৩৫ (গ্র্যান্ডহোম, ৩০.৬), ৭-১৭৬ (নিশাম, ৩৬.২), ৮-১৯৪ (অ্যাস্টল, ৪০.৫), ৯-২০৪ (স্যান্টনার, ৪৩.১), ১০-২১৭ (বোল্ট, ৪৪.১)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৭.১-০-৩৮-১, মহম্মদ শামি ৮-০-৩৫-২, হার্দিক পাণ্ড্য ৮-১-৫০-২, বিজয় শঙ্কর ৪-০-১৯-০, যুজবেন্দ্র চহাল ১০-০-৪১-৩, কেদার যাদব ৭-০-৩৪-১।
৩৫ রানে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা অম্বাতি রায়ডু