শুভমন গিল।—ফাইল চিত্র
নিউজিল্যান্ড সফরে রওনা হওয়ার আগে ছ’দিনের ‘ক্র্যাশ কোর্স’ করে গেলেন শুভমন গিল। যে শিবিরে তাঁর প্রশিক্ষক ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর অভিষেক নায়ার। যে নায়ারের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে দীনেশ কার্তিকের মতো ক্রিকেটারের।
নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে হাতে যে ক’দিন সময় ছিল সেটা কাজে লাগানোর জন্য নায়ারের সঙ্গে মুম্বইয়ে কেকেআরের অ্যাকাডেমিতে প্র্যাক্টিসে নেমে পড়েন তরুণ নাইট শুভমন। শিবিরে কী কী ব্যাপারের ওপর জোর দেওয়া হল, কী কী ব্যাপারেই বা সতর্ক করে দেওয়া হল শুভমনকে?
নায়ারের সঙ্গে কথা বলার পরে যে ছবিটা উঠে আসছে, তা এ রকম। ট্রেনিং পর্বকে দু’ভাগে ভাগ করেছিলেন কোচ। এক দিকে ছিল টেকনিক্যাল প্রস্তুতি। অন্য দিকে, মানসিক। মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে নায়ার বলছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে গেলে দু’টো ক্ষেত্রেই প্রস্তুতি দরকার। তাই আমাদের দিন ছয়েকের শিবিরে এই দু’টো ব্যাপারের উপরেই জোর দিয়েছিলাম।’’
নিউজিল্যান্ড দলের পেস আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা, বিশেষ করে তাদের ঘরের মাঠে। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি— দু’জনেই দারুণ ফর্মে। অনুশীলনে এই দুই বোলারকে সামলানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। নায়ার বলছিলেন, ‘‘বোল্ট বা সাউদির মতো বোলার তো আর প্র্যাক্টিসে পাওয়া যাবে না। আমরা চেষ্টা করেছি, ওরা যেমন বল করে, সেই ধরনের বল করে অনুশীলন দেওয়ার। কী ধরনের সুইং নিউজিল্যান্ডে হতে পারে, কতটা বাউন্স থাকতে পারে পিচে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।’’
ছাত্রকে কী টোটকা দিয়েছেন, তা ভেঙে বলতে চান না নায়ার। তবে কয়েকটা ব্যাপার জানা গিয়েছে। যেমন, শুভমনকে সাবধান করা হয়েছে সাউদির আউটসুইং এবং বাঁ-হাতি বোল্টের ইনসুইং নিয়ে। চেষ্টা করা হয়েছে এই দু’ধরনের বলের বিরুদ্ধে তাঁকে তৈরি করে দেওয়ার। শুভমন যেমন মনে করেন, বিশেষ কোনও বোলার নন, তাঁর কখনওসখনও সমস্যা হয় ভাল স্পেলের সামনে পড়লে। ওই পরিস্থিতির জন্য মন্ত্র হল, স্পেলটা দেখেশুনে কাটিয়ে দেওয়া। ঝুঁকি না নেওয়া।
মানসিক ভাবেও শুভমনকে যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন নায়ার। মুম্বইয়ের এই অলরাউন্ডার বলছিলেন, ‘‘টেকনিক এবং মানসিকতা, এই দু’টোই হাতে হাত রেখে চলে। একটায় কমজোরি হলে তার প্রভাব অন্যটায় পড়বেই। আমি চেষ্টা করেছি, দক্ষতার মাত্রা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য মানসিকতাটাও যতটা সম্ভব তৈরি করে দিতে।’’
যে ব্যাপারে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নায়ার দিয়েছেন শুভমনকে, তা হল, ‘‘কোনও ভাবেই মনকে বিক্ষিপ্ত হতে দিলে চলবে না। বাইরে যা কিছুই হোক না কেন, ফোকাসটা খেলার উপরেই রাখতে হবে।’’ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে শুভমনের। যেখানে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে দারুণ সফলও তিনি। এর পরেও নায়ার মনে করেন, সিনিয়র দলে খেলার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি দরকার। ‘‘আমরা ওকে বিভিন্ন ম্যাচ পরিস্থিতি ধরে ধরে তৈরি করেছি। পাশাপাশি বুঝিয়েছি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যাট করতে হলে এক জন ব্যাটসম্যানের মানসিকতাটা ঠিক কী ধরনের হওয়া দরকার,’’ বলছিলেন নায়ার।
শুভমনকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন গত বছর কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে। ব্যাটিং অর্ডারে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাট করেন তিনি। কোন জায়গার জন্য আদর্শ মনে হয় শুভমনকে? নায়ার বলছেন, ‘‘শুভমন দারুণ অলরাউন্ড ক্রিকেটার। সে জন্য ও যে-কোনও জায়গায় মানিয়ে নিতে পারে। শুধু দক্ষতার দিক দিয়েই নয়, শুভমন একটা ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের অধিকারীও। নিজের ক্ষমতাটা ও খুব ভাল বোঝে। যেটা ওর বড় প্লাস পয়েন্ট।’’
কার্তিককে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি সফল হয়েছিলেন। এ বার শুভমনকেও তৈরি করে দিতে পারলেন কি না নায়ার, তা সময়ই বলবে।