হেলায় জয় বিরাট-রোহিত যুগলবন্দিতে

বাইশ গজে টিভি ক্যামেরার সামনে চাপের মধ্যে পড়লেই আমার বন্ধু জ্বলে ওঠে। গুঁড়িয়ে দেয় বিপক্ষকে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২২
Share:

বিরাট-রোহিত। রবিবার সেঞ্চুরির পরে দুই মহাতারকা। পিটিআই

বাইশ গজে টিভি ক্যামেরার সামনে চাপের মধ্যে পড়লেই আমার বন্ধু জ্বলে ওঠে। গুঁড়িয়ে দেয় বিপক্ষকে।

Advertisement

সমারসেটে খেলার সময় ভিভিয়ান রিচার্ডস সম্পর্কে এই কথাটা প্রায়ই বলতেন ক্যারিবিয়ান তারকার অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু ইয়ান বোথাম।

বর্তমান ক্রিকেটে বোথামের এই কথাটা বোধহয় প্রযোজ্য হতে পারে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির ক্ষেত্রে। বলা যেতেই পারে, রান তাড়া করতে নেমে চাপ বাড়লেই বেরিয়ে আসেন আগ্রাসী বিরাট কোহালি। আর তখন তিনি ধ্বংস করে দেন বিপক্ষকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ড, দেখে নিন বিরাটের সেরা পাঁচ সেঞ্চুরি​

রবিবার যেমন ফের তা দেখল গুয়াহাটি। স্কোরবোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে ৩২২ রান। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দলের ১০ রানের মাথায় ফিরে গিয়েছেন শিখর ধওয়ন (৪)। এক্সপ্রেস গতিতে বল করছেন এ দিনই অভিষেক হওয়া ক্যারিবিয়ান পেসার ওশেন থোমাস। এর আগে ৩২২ বা তার বেশি রান তাড়া করতে গিয়ে ৩০ বারের মধ্যে ২২ বার হেরেছে ভারত। জয় মোটে সাত বার। মাথায় ছিল সেই পরিসংখ্যানও। এই জায়গা থেকে ভারত ম্যাচ বার করে নিল সেই বিরাট কোহালির ব্যাটে ভর করেই। আর তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করলেন

রোহিত শর্মা। ৩৭৫ দিন আগে তাঁকে দেখতেই ভরে গিয়েছিল বর্ষাপাড়া স্টেডিয়াম। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যেখানে প্রিয় দলের হার দেখার সঙ্গে বিরাটের শূন্য রানে আউট হওয়া দেখেও বাড়ি ফিরেছিলেন অসমের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

রবিবার সেই স্টেডিয়ামেই অসমের প্রথম দিন-রাতের একদিনের আন্তর্জাতিকে ভক্তদের আর নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। ২১ টি চার ও দু’টি বিশাল ছক্কা সহযোগে বিরাটের রাজকীয় শতরান (১৪০) দেখে নাচতে নাচতেই বাড়ি ফিরলেন দর্শকরা। যাঁদের কারও কারও হাতে পোস্টার। যেখানে লেখা, ‘‘হি ইজ দ্য উইনার, হি ইজ দ্য চ্যাম্প, ওয়ানডে অর টেস্ট হি ইজ দ্য বেস্ট। বিরাট তু সি গ্রেট হো।’’ সঙ্গে কোহালি-কোহালি ধ্বনি।

বিরাটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাট করে গেলেন ‘হিটম্যান’ রোহিত শর্মাও। ১১৭ বলে তিনি করলেন অপরাজিত ১৫২ রান। প্রথমে সাবধানী ছিলেন। কিন্তু জমে গিয়ে আক্রমণে যান। মারেন ১৫টি চার ও ৮টি ছয়। একদিনের ক্রিকেটে এটি তাঁর ২০তম শতরান। বিরাট-রোহিত এই যুগলবন্দিতেই ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে প্রথম ম্যাচ ৮ উইকেটে জিতে ১-০ এগিয়ে গেল ভারত। তাও আবার ৪৭ বল বাকি থাকতেই। ৪৩ ওভারের শুরুর সময় ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল চার রান। এ দিনের আর এক অভিষেককারী চন্দ্রপল হেমরাজের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে জয় এনে দেন মুম্বইকর রোহিত।

তার আগে ৩৩ ওভারের মাথায় দেবেন্দ্র বিশুর বলে স্টাম্পড হয়ে যখন ফিরছেন ভারত অধিনায়ক, তখনই গোটা স্টেডিয়াম দেখে ফেলেছিল জয়ের লাইটহাউস। উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছিলেন তাঁরা। যা দেখে কোহালিও ব্যাট তুলে সম্মান জানালেন সমর্থকদের।

এ দিনের পরে একদিনের ক্রিকেটে ২০৪ ইনিংসে ছত্রিশতম শতরান হয়ে গেল বিরাটের। যার মধ্যে ২২টি রান তাড়া করে। গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় শতরান ভারত অধিনায়কের। শুরু থেকেই ক্যারিবিয়ান বোলিংকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি বিরাট। ওশেন থোমাস (১-৮৩), অ্যাশলি নার্স (০-৬৩)-রা লাইন, লেংথে ভুল করলেই কাউকেই রেয়াত করেননি ভারত অধিনায়ক। স্কোয়ার কাট, কভার ড্রাইভ, পুল— সব শটই মারছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। দেখে মনে হচ্ছিল যেন ড্রেসিংরুম থেকেই পরিকল্পনা করে এসেছেন মারমুখী ইনিংসের জন্য। কেমার রোচকে চার মেরে শতরান পূর্ণ করার পরে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ভারত অধিনায়ক। যা দেখে মনে হচ্ছিল নিজে ভুল না করলে বিরাটকে থামানো কঠিন। আর হয়েছেও ঠিক তাই। ম্যাচ সেরাও তিনি।

দুপুর দেড়টা থেকে শুরু হওয়া ম্যাচে সকাল সাড়ে দশটা থেকেই লাইন পড়ে গিয়েছিল এ দিন বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে। সেখানে শুরুতেই ভারতের দল গঠন দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন উপস্থিত দর্শকদের কেউ কেউ। কারণটা অবশ্যই কুলদীপ যাদবকে বাইরে দেখে। হয়তো বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখেই কুলদীপকে দলের বাইরে রাখা হয়েছিল এ দিন। আবার নেওয়া হয় ঋষভ পন্থকে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে গুয়াহাটির পিচ ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। তৃতীয় কারণ, বাউন্সি উইকেটের কথা ভেবে তিন পেসারকে খেলিয়ে দেওয়া।

মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব, খলিল— এই তিন পেসার যদিও নতুন বলে সে ভাবে বিপাকে ফেলতে পারেননি ক্যারিবিয়ানদের। বরং দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা (২-৬৬), ও যুজবেন্দ্র চহাল (৩-৪১) তুলে নেন বিপক্ষের পাঁচ উইকেট।

ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ে নজর কাড়লেন হেটমেয়ার। তেরোতম একদিনের ম্যাচে তৃতীয় শতরান করলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক হেটমায়ার। গায়ানার এই ব্যাটসম্যান সাবলীল স্পিন ও পেসের বিরুদ্ধে। তার আগে শুরুটা করেছিলেন কিয়েরান পাওয়েল (৫১)। শেষের দিকে দেবেন্দ্র বিশু (২৬ বলে ২২) ও কেমার রোচের (২২ বলে ২৬) সৌজন্যে ৩২২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১১৪-৪ হওয়ার পরে ক্যারিবিয়ানদের এই লড়াই প্রশংসার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন