দলগত সংহতিতেই সাফল্য, শিখলেন অর্ণবেরা

ভারতীয় ফুটবলে তাঁরা তারকা। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় প্রত্যেকেই হয়ে গিয়েছিলেন মনোযোগী ছাত্র। অর্ণব মণ্ডল, প্রীতম কোটাল, বলবন্ত সিংহ থেকে মহম্মদ আল আমনা— কী শিখলেন বিশ্বকাপ থেকে শোনালেন আনন্দবাজারকে।ভারতীয় ফুটবলে তাঁরা তারকা। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় প্রত্যেকেই হয়ে গিয়েছিলেন মনোযোগী ছাত্র। অর্ণব মণ্ডল, প্রীতম কোটাল, বলবন্ত সিংহ থেকে মহম্মদ আল আমনা— কী শিখলেন বিশ্বকাপ থেকে শোনালেন আনন্দবাজারকে।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

শিখরে: ফ্রান্সের সাফল্যের পিছনে লড়াকু মানসিকতার কথা বলছেন ভারতীয় ফুটবলের তারকারা। ফাইল চিত্র

জাতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসা প্রীতম। মুম্বইয়ে আন্তঃমহাদেশীয় কাপে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। প্রীতমের কথায়, ‘‘আধুনিক ফুটবলে সাফল্য যে নির্ভর করে দলগত সংহতির উপরে, রাশিয়া বিশ্বকাপেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। যে চারটি দল এ বার শেষ চারে উঠেছিল, তারা প্রত্যেকেই দলগত ফুটবল খেলেছিল।’’ ব্রাজিলের সমর্থক প্রীতম মুগ্ধ ফ্রান্সের রাইট ব্যাক বাঁজামা পাভার খেলায়। বলছিলেন, ‘‘আমিও রাইট ব্যাক। তাই মন দিয়ে পাভার খেলা লক্ষ্য করেছি। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে হাফ ভলিতে অসাধারণ গোল করেছিলেন পাভা। অনেকেই দেখলাম বলছেন, গোলটা হয়ে গিয়েছে। আমি কিন্তু তাঁদের সঙ্গে একমত নই।’’ কেন? দিল্লি ডায়নামোজ এফসি তারকার ব্যাখ্যা, ‘‘পুরোটাই দুর্দান্ত পরিকল্পনার ফসল। কারণ, ফ্রান্স কর্নার বা বিপক্ষের বক্সের কাছে ফ্রি-কিক পেলেই উঠে এসেছেন পাভা। আমি নিশ্চিত, এই ধরনের অনুশীলন ওঁরা নিয়মিত করেন। গোল করেই যে ভাবে পাভা নেমে এসে রক্ষণ সামলাচ্ছিলেন, তা শিক্ষণীয়।’’

Advertisement

জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও এটিকে-র ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডলের মতে, সাফল্যের জন্য শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বললেন, ‘‘এই বিশ্বকাপে সব চেয়ে সুশৃঙ্খল দল ছিল ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। তবে শৃঙ্খলা মানে কিন্তু মাঠে নেমে শান্ত হয়ে খেলা নয়।’’ তা হলে? অর্ণব যোগ করলেন, ‘‘ফুটবল মাঠে শৃঙ্খলার অর্থ, সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী করা। যেমন, সেট পিসের সময় কারা কী করবেন তা আগে থেকে ঠিক করা থাকবে। কোনও অবস্থাতেই তা বদলাবে না।’’

তা হলে কি শৃঙ্খলার অভাবেই ব্যর্থ ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা?

Advertisement

অর্ণবের কথায়, ‘‘না, তা ঠিক বলা যাবে না। তবে এই বিশ্বকাপে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, ব্যক্তিগত দক্ষতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দলগত সংহতি। যা সব চেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার খেলায়। লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বা নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-এর মতো মহাতারকা না থাকায় ওরা অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলেছে। বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।’’

ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা মহম্মদ আল আমনা কিছুটা হতাশ মিশর বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ায়। আমনাও একমত অর্ণবের সঙ্গে। বললেন, ‘‘কোনও এক জন ফুটবলারের পক্ষে একা এখন আর দলকে চ্যাম্পিয়ন করা সম্ভব নয়। দলগত সংহতির উপরেই নির্ভর করে দলের সাফল্য।’’

জাতীয় দলের আর এক তারকা বলবন্ত সিংহ আর্জেন্টিনার ভক্ত। কিন্তু শেষ ষোলো থেকে মেসিরা ছিটকে যাওয়ায় সমর্থন করেছেন ফ্রান্সকে। তিনি বললেন, ‘‘এই বিশ্বকাপ আমাকে শিখিয়েছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কী ভাবে লড়াই করতে হয়।’’ ক্রোয়েশিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলবন্ত বললেন, ‘‘বিশ্বকাপের আগে কেউ ভাবতেই পারেনি, লুকা মদ্রিচ-ইভান রাকিতিচেরা ফাইনাল খেলবেন। অবিশ্বাস্য লড়াই করেছে ক্রোয়েশিয়া। অধিকাংশ ম্যাচেই ওরা গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু কখনও হাল ছাড়েনি। দুর্দান্ত লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নিয়েছে।’’ কিন্তু ফাইনালে তো ছবিটা বদলে গিয়েছিল। বলবন্তের ব্যাখ্যা, ‘‘ফ্রান্সও দারুণ লড়াকু দল। অস্বীকার করার জায়গা নেই, সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিলেন পল পোগবারা। ফাইনালে লড়াইটা একেবারে সেয়ানে-সেয়ানে হয়েছে।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘এই বিশ্বকাপ প্রমাণ করে দিয়েছে, বড় দল বলে এখন আর কিছু হয় না। যারা পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে, তারাই জিতবে।’’

লেভ ইয়াসিনের দেশে বিশ্বকাপে নায়ক গোলরক্ষকেরাই। মোহনবাগানের অধিনায়ক শিল্টন পাল তাই উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘গোলরক্ষকেরা সফল হলে বেশি আনন্দ হয়। ইংল্যান্ডের জার্ডান পিকফোর্ডকে আমার সব চেয়ে ভাল লেগেছে। জো হার্টের মতো তারকার জায়গায় ওঁকে নিয়েছেন গ্যারেথ সাউথগেট। প্রবল চাপ সামলে কী ভাবে নিজের সেরাটা দিতে হয়, দেখিয়েছেন পিকফোর্ড।’’ শিল্টন আরও বললেন, ‘‘ক্রোয়েশিয়াকে দেখে শিখেছি, নক-আউট পর্বে ১২০ মিনিট খেলার মানসিকতা নিয়েই খেলতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন