উচ্ছ্বাস: আরসিজিসিতে স্ত্রী সীমন্তিনীর সঙ্গে ইন্ডিয়ান ওপেন ট্রফি হাতে চৌরাসিয়া। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তাঁকে দেখে কে বলবে, চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ইতিহাসে নাম তুলে ফেলেছেন! সোমবার দুপুরে রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে যখন তাঁকে পাওয়া গেল, ইন্ডিয়ান ওপেন-জয়ী তখনও অভিনন্দনের স্রোতে ভাসছেন। তিনি— শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়া।
ইন্ডিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন অকপটে বলে ফেললেন, ‘‘প্রথম দু’রাউন্ডের পর ভাবতে পারিনি, এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হব। তৃতীয় রাউন্ডের পরে যখন লিড নিলাম তারপর থেকেই মনে হতে লাগল আমি জিততে পারি।’’ ভারতীয় গল্ফারদের মধ্যে চৌরাসিয়াই প্রথম যিনি এ দেশে আয়োজিত চারটে ইউরোপিয়ান ট্যুরে খেতাব জেতার বিরল রেকর্ড করেছেন রবিবার ইন্ডিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে।
দিল্লির এই কোর্সটাকে এশিয়ার কঠিনতম বলছেন এসএসপি। কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এখানে শুধু ফর্ম নয়, ফোকাসটাও একেবারে ঠিকঠাক রাখতে হয়। দু’দিন ধরে কোর্সটায় পড়ে ছিলাম। অনেকেই ভুল করেছে। আমি শেষ দু’রাউন্ডে আরও সতর্ক ছিলাম, ভুল করিনি। ফোকাস নড়তে না দিয়ে লিডটা ধরে রেখেছিলাম।’’
এই ফোকাসটাই এসএসপি-র সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। আরসিজিসি-তেই এক সময় ক্যাডি ছিলেন তিনি। রাউন্ড পিছু মিলত চল্লিশ টাকা। সে সব দিন ভোলেননি এসএসপি। রবিবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে পুরস্কার অর্থ হিসেবে পেলেন প্রায় দু’কোটি টাকা। কী বলবেন এই স্বপ্নের যাত্রাপথ নিয়ে? ‘‘ক্যাডি থেকে গল্ফে আসার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। আমাকেও অনেকে সাহায্য করেছে। এক জন গল্ফারের দেওয়া গল্ফ সেট নিয়েই আমার কেরিয়ার শুরু। প্রথম থেকেই একটা জিনিস আমার মধ্যে ছিল। জেদ। সেই জেদ, ফোকাসটাই আজ এত দূর আমাকে নিয়ে এসেছে,’’ বললেন চৌরাসিয়া।
ট্রফি হাতে এসএসপি চৌরাসিয়া।
কেমন উপভোগ করেন কলকাতার আর এক গল্ফার অনির্বাণ লাহিড়ীর সঙ্গে দ্বৈরথ? চৌরাসিয়া বললেন, ‘‘অনির্বাণ আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। গত বছর আমি অনির্বাণের কাছ থেকে কয়েকটা শটও শিখেছি।’’ বন্ধু কী বললেন রবিবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে? ‘‘আমার জন্য শেষ রাউন্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল অনির্বাণ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাল। বলল, পরের বছরও তোকে এ রকমই পারফর্ম করতে হবে কিন্তু।’’
আরও পড়ুন: বিলিয়ার্ডস, ব্যাডমিন্টন খেলে ফিট থাকার চেষ্টায় ধোনি
এর পরের লক্ষ্যটাও ঠিক করে ফেলেছেন চৌরাসিয়া। আপাতত মাস খানেকের বিশ্রাম। তার পরই জাপানে এশিয়ান ট্যুরে খেলতে যাচ্ছেন। সেখান থেকে যাবেন চিনে ইউরোপিয়ান ট্যুরে খেলতে। রবিবারের জয়ে এশিয়ান ট্যুরে দু’নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। তবে তাঁর আসল লক্ষ্য ইউরোপিয়ান ট্যুরে ইউরোপের কোর্সে জেতা। ইন্ডিয়ান ওপেন জেতার পর তাঁর বিশ্বর্যাঙ্কিং ২৫৮ থেকে প্রায় ৮০ ধাপ এগিয়ে আসা নিশ্চিত। চলতি মরসুমে আরও এগিয়ে বিশ্বের প্রথম একশো জনের মধ্যে উঠে আসতে চান তিনি। সেটা হলেই মিলবে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের মতো মেজর প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ। দেশের উঠতি গল্ফারদের তুলে আনতে একটি প্রতিষ্ঠানও গড়বেন। বললেন, ‘‘আমি তো কলকাতা থেকেই উঠে এসেছি। এই ক্লাবেই তাই একটা ফাউন্ডেশন করতে চাই। পরের বছরই এটা করার ইচ্ছে আছে। অর্থ, গল্ফের সরঞ্জামের অভাবে যেন কোনও প্রতিভা হারিয়ে না যায়, সেটা দেখতে চাই।’’
গল্ফের বাইরে কী করে সময় কাটে তাঁর? ‘‘বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালবাসি, তা ছাড়া আমার স্ত্রী সীমন্তিনী ট্যুরে আমার সঙ্গে থাকে। ট্যুরে নামার আগে নাম পাঠানো, সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখা, অফিসিয়াল কাজকর্ম ও-ই সামলায়। তবে একটা জিনিস কিন্তু ও বারণ করে দিয়েছে।’’ সেটা কী? ‘‘গল্ফের বাইরে আগে মোটরবাইকের খুব শখ ছিল। বিয়ের পর ও বলে দিয়েছে মোটরবাইক চালানো বন্ধ। গাড়ি চলতে পারে। আমার ইচ্ছে তাই একটা রেঞ্জ রোভার কেনার।’’ সেই বিখ্যাত হাসিটা ফুটে উঠল তাঁর মুখে। সরল হাসিটা।