চাপের ম্যাচে ডোবাল স্পিনাররা

একসঙ্গে দুই স্পিনার ডাহা ব্যর্থ, সাম্প্রতিককালে এমন ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের কখনও ঘটেছে বলে তো মনে পড়ছে না। তবে শুধু দুই স্পিনারের দিকেই বা আঙুল তোলা কেন?

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৪:২৫
Share:

হতাশ ভারতীয় শিবির। ছবি: এএফপি।

দু’সপ্তাহ আগে ৪ জুন এজবাস্টনে পাকিস্তানের ঘুম ভাঙিয়েছিল ভারত। তারই ফল বিরাট কোহালিরা পেল রবিবার লন্ডনে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ১৮০ রানের এই হার কোহালিদেরও ঘুম ভাঙাল নিশ্চয়ই। দুঃখের বিষয়, সত্যিই ওদের ঘুম ভাঙল কি না, তা বোঝার উপায় এখনই নেই।

Advertisement

একসঙ্গে দুই স্পিনার ডাহা ব্যর্থ, সাম্প্রতিককালে এমন ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের কখনও ঘটেছে বলে তো মনে পড়ছে না। তবে শুধু দুই স্পিনারের দিকেই বা আঙুল তোলা কেন? ভুবনেশ্বর কুমার ছাড়া অন্য কোন ভারতীয় পেসার রবিবার ভাল বোলিং করেছে? সবাই কি নির্বিষ! ক্রিকেটবিশ্ব এত দিন ভারতীয় পেস আক্রমণ ও ব্যাটিং লাইন-আপকে ধন্য ধন্য করেছে। পেস আক্রমণের জন্যই ভারতকে এই টুর্নামেন্টে জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই পেস এবং ব্যাটিং বিভাগই কি না অতি সাধারণ পর্যায়ে নেমে এল! পাকিস্তানের কৃতিত্ব এখানেই। এই জন্যই ট্রফিটা জিতে নিয়ে গেল পাকিস্তান।

আন্ডারডগ হিসেবে নেমে প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে ১২৪ রানে হেরে মুখ থুবরে পড়েছিল যে দল, তারাই কি না শেষে চ্যাম্পিয়ন হল। এমন ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা যে কোনও খেলার ইতিহাসেই আছে কি না, জানি না। ফখর জামানের আউট নো বলে বাতিল হওয়া, দুটো অবধারিত রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া হওয়া, আকাশে ওঠা বল একাধিকবার ফিল্ডারহীন অঞ্চলে গিয়ে পড়া— এ ভাবেই রবিবার সারা দিন দুর্ভাগ্য তাড়া করে বেরিয়েছে বিরাট কোহালিদের। তাই বলে ভারতীয়দের জঘন্য পারফরম্যান্সের কথা ভুলে যাচ্ছি না। ব্যাটিং, বোলিং সবেতেই ফ্লপ। যে রবীন্দ্র জাডেজার ওপর এত ভরসা দলের, সে বোলিং, ব্যাটিংয়ে নিজে তো ডুবলই, একমাত্র মাথা তুলে দাঁড়ানো ব্যাটসম্যান হার্দিক পাণ্ড্যকেও দায়িত্ব নিয়ে রান আউট করিয়ে দিল!

Advertisement

আরও পড়ুন: জিতেই দাবি, ক্রিকেট ফিরুক পাকিস্তানে

সেরা: ধবনকে সর্বোচ্চ স্কোরারের পুরস্কার পন্টিংয়ের। ছবি: এএফপি

লড়াই করার জন্য দু-তিনটে বড় জুটির দরকার ছিল ভারতের। অথচ পুরো ব্যাটিং লাইন-আপটাই ভেঙে পড়ল! আমির, হাসান, শাদাবদের সামনে। এই কাজটা পরিকল্পনা করেই করল ওরা। রোহিত শর্মাকে আমির দু’টো বল অফস্টাম্পের বাইরে দেওয়ার পরে তৃতীয়টা একটু গতি বাড়িয়ে ভিতরেই আনতেই রোহিত এলবিডব্লিউ।

বিরাট কোহালির ব্রেকফাস্ট ক্যাচ আজহার আলি ফেলে দেওয়ার পরের বলেই বিরাট কী ভাবে ও রকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ শট নিল, জানি না। বাঁ-হাতি আমির যখন ওভার দ্য উইকেট বল করছে, তখন অফ স্টাম্পের বাইরে ওকে এই শট মারাটা বড় বেশি ঝুঁকির হয়ে গেল। ক্রিজে সেট হওয়ার সময় এই শট! অসম্ভব।

ধবনকেও ঠিক একই ভাবে প্রথমে তিনটে বল ভিতরে দেওয়া হল। তার পর চার নম্বর বলটা শরীরের বাইরে, অতিরিক্ত বাউন্স-সহ। আর তাতেই শিখর থার্ড ম্যান দিয়ে চার মারতে গিয়ে ভুলটা করল। ওখানেই শেষ হয়ে যায় ভারতের লড়াই। কয়েক বছর আগে হলে হয়তো ধোনি ও যুবরাজ এই জায়গা থেকে দলকে টেনে তুলতে পারত। কিন্তু এখন ওদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নামছে। তাই ওদের কাছে সেই আশা করা যায়ওনি।

অনামী ফখর জমানের সেঞ্চুরিই পাকিস্তানের এই অসাধারণ জয়ের অর্ধেক। তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি এমন কিছু অসাধারণ ব্যাটিং করেনি ছেলেটা। ওর পায়ে পায়ে বল করার প্ল্যান ছিল বুমরাদের। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে ভাবে ১৩টা ওয়াইড দিল, তাতেই তো ওরা দু’ওভার বেশি খেলার সুযোগ পেয়ে গেল। অনূর্ধ্ব ১৪ ক্রিকেটেও এমন হয় না বোধহয়। ১২০ রান করার পরে প্রথম উইকেট পড়ে পাকিস্তানের। দুই স্পিনারই কুৎসিত বোলিং করল। যার ফলে পাকিস্তান কমফর্ট জোনে চলে আসে। যে উইকেটে শাদাব খান টার্ন করিয়ে কেদার যাদবকে আউট করতে পারে, সেই উইকেটে আমাদের স্পিনাররা টার্ন পাবে না কেন? হার্দিক লড়াই করলেও অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন