শিখরকে নিয়ে ধন্দে ভারত, ফিরছেন বেন

টেস্ট শুরুর আগের দিন অনুশীলনের গতিপ্রকৃতি দেখে অবশ্য মনে হল, ওপেনিং জুটি ফের বদল করা হতে পারে। শুরুতে পাশাপাশি তিনটি নেটে ব্যাট করতে ডাকা হল তিন জনকেই। বিজয়, রাহুল এবং ধওয়ন।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

নটিংহ্যাম শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০৯
Share:

ওপেনিং করতে দেখা যাবে ধওয়নকে?  ছবি: রয়টার্স।

ট্রেন্ট ব্রিজে সিরিজ রক্ষার পরীক্ষায় কারা থাকবেন ভারতের প্রথম একাদশে? টেস্ট শুরুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকল।

Advertisement

এমনিতে দু’টো পরিবর্তন নিয়ে কোনও সংশয়ের জায়গা নেই। আনন্দবাজারে আগেই লেখা হয়েছে যে, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থের টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে। দীনেশ কার্তিকের ব্যাটিং নিয়ে এতটাই হতাশ টিম ম্যানেজমেন্ট যে, তাঁর উপরে আর ভরসা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

দ্বিতীয় বদল যে কুলদীপ যাদবের জায়গায় যশপ্রীত বুমরা, তা নিয়েও দ্বিধা নেই। লর্ডসে মেঘলা আকাশ থাকা সত্ত্বেও কুলদীপকে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে খেলানো হয়। দল মনে করেছিল, ম্যাচ যদি পঞ্চম দিন পর্যন্ত গড়ায়, তা হলে দ্বিতীয় স্পিনার কাজে আসবে। ব্যাটসম্যানেরা পঁয়ত্রিশ ওভারের মধ্যে আউট হয়ে যাবে, কে আর ভাবতে পেরেছিল! অধিনায়ক কোহালি এবং হেড কোচ রবি শাস্ত্রী দু’জনেই স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয় স্পিনার খেলানো ভুল হয়েছিল। কুলদীপকে ট্রেন্ট ব্রিজে দু’দিনের অনুশীলনে দেখে মনে হচ্ছে, বেচারা অনেকটাই হয়তো পিছিয়ে পড়লেন। খেলার সম্ভাবনা নেই বলে নেটে ব্যাটিং করার আর সুযোগ পাচ্ছেন না। তার মধ্যে ট্রেনার লেগে রয়েছেন ফিটনেস বাড়ানোর জন্য। কোহালির এই দলে বাড়তি ওজনওয়ালা যে দু’এক জন ক্রিকেটার আছেন, তার মধ্যে তিনি এক জন। তাই বার বার কুলদীপকে ইয়ো ইয়ো টেস্ট দিয়ে যেতে হয়।

Advertisement

মগ্ন: নটিংহ্যামে ক্যাচ অনুশীলন চলছে কোহালির। শুক্রবার। ছবি: এপি।

বিভ্রান্তি রয়েছে তৃতীয় সম্ভাব্য বদল নিয়ে। এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে তিন ওপেনারকেই খেলানো হয়েছিল। বসানো হয়েছিল চেতেশ্বর পূজারাকে। লর্ডস থেকে আবার দুই ওপেনারের ছকে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এম বিজয় আর কে এল রাহুলকে ওপেনার হিসেবে নামিয়ে তিন নম্বরে ফেরানো হয় পূজারাকে। কিন্তু দুই ওপেনারই কোনও রকম ভরসা দিতে পারছেন না দলকে। সব চেয়ে বড় কথা, বিজয় এবং রাহুলকে দেখে মনেও হচ্ছে না, তাঁরা এই ধরনের কঠিন পরিবেশে অ্যান্ডারসনের মতো সুইং শিল্পীর মুখোমুখি হওয়ার মতো দক্ষতা বা প্রস্তুতি রয়েছে বলে। অথচ, বিজয় ভারতীয় ‘এ’ দলের সঙ্গে আগে থেকেই ইংল্যান্ড সফরে ছিলেন। প্রায় দু’মাস ধরে এখানে থাকার পরেও তিনি ধরতে পারছেন না অ্যান্ডারসনের কোন বলটা বাইরে যাবে, কোনটা ভিতরে আসবে। অ্যান্ডারসনের লেট সুইং সামলাতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে দেখাচ্ছে তাঁকে।

টেস্ট শুরুর আগের দিন অনুশীলনের গতিপ্রকৃতি দেখে অবশ্য মনে হল, ওপেনিং জুটি ফের বদল করা হতে পারে। শুরুতে পাশাপাশি তিনটি নেটে ব্যাট করতে ডাকা হল তিন জনকেই। বিজয়, রাহুল এবং ধওয়ন। আর উইকেটের পিছনে আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে থাকতে থাকলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। একটু আগে বল ছুড়ে ছুড়ে প্রায় আধ ঘণ্টা টানা ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করে উঠেছেন কোহালি। নেটের পিছন দিকটা থেকে তাঁরও সতর্ক দৃষ্টি তিন ওপেনারের ব্যাটিংয়ের দিকে। বোঝা গেল, শেষ মুহূর্তের নজরদারি চলছে। পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে কোন ছাত্রের কী রকম ক্রিকেটীয় এবং মানসিক অবস্থান, সেটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল শাস্ত্রী আর কোহালি, দু’টো মাথা এক হয়ে গেল। কনফারেন্স চলার মধ্যেও দু’জনের নজর তিন ওপেনারের দিকে। নেট থেকে বেরনোর পরে বিজয়কে দেখা গেল ট্রেন্ট ব্রিজের বাইশ গজের কাছে চলে গিয়েছেন। পাশে হার্দিক পাণ্ড্য। ম্যাচের পিচের উপরে দাঁড়িয়ে কয়েকটি শ্যাডোও করতে দেখা গেল তাঁকে। সেই দৃশ্য দেখে মনে হবে, পাপ্পু পাশ হো গয়া। এ বার গব্বর খেলবেন কি না সেটাই দেখার। গব্বর অর্থাৎ শিখরের সুবিধে হচ্ছে, তিনি বাঁ হাতি। শুরুতে ডান হাতি-বাঁ হাতি জুটি থাকলে অ্যান্ডারসন-ব্রডের লাইন-লেংথ নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে কারও কারও মনে হচ্ছে। যদি সেই ভাবনাই গুরুত্ব পায়, তা হলে রাহুলের পরিবর্তে ধওয়নকে ট্রেন্ট ব্রিজে ওপেন করতে নামতে দেখা যেতে পারে। সে রকম হলে মনে হয় না খুব বিতর্কের ঝড় উঠবে কারণ রাহুলের যত রকম চুলের ছাঁট আর শরীরের যতগুলো ট্যাটু দেখা যাচ্ছে, তত রান নেই এই সফরে। একমাত্র প্রশ্ন হচ্ছে, ইংল্যান্ডের এই পরিবেশে শিখরের মতো অফস্টাম্পের বাইরে ব্যাট চালানো ওপেনারের অ্যান্ডারসনদের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার টেকনিক্যাল দক্ষতা আছে কি না।

২-০ এগিয়ে থাকলেও কোহালির মতো নির্বাচনী কাঁটা তৈরি হয়েছিল জো রুটের সামনে। তাঁর দেশের প্রচারমাধ্যমে লেখা হয়েছিল রাস্তায় মারামারি করা বেন স্টোকসকে শাস্তিস্বরূপ ট্রেন্ট ব্রিজে বসানো হোক। রুট তাতে কর্ণপাত করেননি। আদালত খালাস করায় বেন স্টোকসকে দলে রাখছেন তিনি। ভারতের স্বস্তি বাঁ হাতি স্যাম কারেনকে খেলতে হবে না। তাঁর জায়গায় আসছেন বেন স্টোকস।

কারও কারও আবার ঋষভ পন্থকে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারলে ইংল্যান্ডের বোলারদের পাল্টা চাপেও ফেলতে পারেন পন্থ। কিন্তু সংশয় তাঁর কিপিং নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর কিপিং নিয়ে খুব প্রশংসা করার লোক পাওয়া যায় না। ইংল্যান্ডে বল আন্দাজের চেয়ে অনেক বেশি বাঁক নিতে পারে, সেখানে এক জন উইকেটকিপারের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা। অভিষেক টেস্টে ঋষভকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে কারণ, ট্রেন্ট ব্রিজের শীতল হাওয়ায় বল আরও বেশি সুইং করবে। খেলায় খুব চালু কথা হচ্ছে, কঠিন পরিস্থিতিতেই তৈরি হয় নতুন নায়ক। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পাকাপাকি উত্তরসূরি হিসেবে ঋষভ পন্থই যোগ্য কি না, ট্রেন্ট ব্রিজে তার প্রথম আভাস পাওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন