ইরানের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফুটবল দল শেষবার জিতেছিল ১৯৫৯ সালে এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে। ৩-১ গোলে জয়ের নেপথ্যে ছিলেন চুনী গোস্বামী, ইউসুফ খান ও তুলসীদাস বলরাম। তার পর থেকে শুধুই ব্যর্থতা। গত ৫৯ বছরে ইরানের বিরুদ্ধে আর কখনও জিততে পারেনি ভারত। আজ, সোমবার মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে কি ছবিটা বদলাবে?
ভারতীয় দলের কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেজকে নব্বইয়ের দশকে অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান মিডফিল্ডার মনে করে হত। যোগ দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলেও। ফুটবলার বিবিয়ানো সে ভাবে নজর কাড়তে না পারলেও কোচ হিসেবে তাঁর উত্থান চমকপ্রদ। তাঁর কোচিংয়েই অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে উঠেছে। মালয়েশিয়ার প্রথম ম্যাচেই ভিয়েতনামকে ১-০ হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছে ভারতের খুদেরা। এ বার সামনে এশীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা শক্তি ইরান। যদিও প্রথম ম্যাচে ইন্দোনেশিয়ার কাছে হেরেছে তারা। বিবিয়ানো বলছেন, ‘‘যে কোনও পর্যায়ে ইরানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলা কঠিন। তার উপরে ওরা প্রথম ম্যাচে হেরেছে। ফলে আমাদের বিরুদ্ধে ইরান জয়ের জন্য মরিয়া থাকবে।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। আমি নিশ্চিত, ছেলেরা মাঠে নেমে নিজেদের উজাড় করে দেবে। আমরা যদি আগের ম্যাচের ছন্দ ধরে রাখতে পারি, আশা করছি জিততে সমস্যা হবে না।’’ ভারতীয় দলের কোচ অবশ্য চিন্তিত ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে প্রচুর গোল নষ্ট হওয়ায়। তিনি বলেছেন, ‘‘আগের ম্যাচে আগে আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারিনি। ইরানের বিরুদ্ধে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই চেষ্টাই করছি। কোথায় ভুল হচ্ছে, অনুশীলনে তা বুঝিয়েছি ছেলেদের।’’
ইরানের বিরুদ্ধে জিতলেই এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের শেট আটে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে ভারতের। শুধু তা-ই নয়। শেষ চারে উঠতে পারলে ২০১৯ সালে পেরুতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করবে ভারতীয় দল। যদিও এই মুহূর্তে শুধু ইরান ম্যাচ নিয়েই ভাবতে চান বিবিয়ানো। তাঁর কথায়, ‘‘কোয়ার্টার ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত সাফল্য। কিন্তু আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই।’’
ভারতীয় যুব দলের দুরন্ত সাফল্যের দিনে আরও অন্ধকারে বাংলার ফুটবল। এ বারের অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলে এক জনও বাংলার প্রতিনিধি নেই। অথচ এক বছর আগেও ছবিটা অন্য রকম ছিল। বাংলা থেকে রহিম আলি, জিতেন্দ্র সিংহ ও অভিজিৎ সরকার খেলেছিল অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে। এ বার কেন বাংলার কোনও ফুটবলার নেই? প্রায় ছয় দশক আগে ইরানের বিরুদ্ধে গোল করা কিংবদন্তি চুনী গোস্বামী বলছেন, ‘‘ভারতীয় দলে বাংলার কোনও ফুটবলার নেই, এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না।’’ হতাশ চুনী যোগ করলেন, ‘‘বাংলায় প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার নেই, আমি বিশ্বাস করি না।’’ তা হলে? ক্ষুব্ধ কিংবদন্তির তোপ, ‘‘বাঙালি মানেই ফুটবল, এই ব্যাপারটা এখন আর নেই। ফুটবলকে আমরা নিজেরাই উপেক্ষা করছি। প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনার ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা নেই বলেই এই অবস্থা।’’
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও প্রাক্তন তারকা শ্যাম থাপার কথায়, ‘‘বাংলায় এখন ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বেশি। অধিকাংশ বাবা-মা চাইছেন ছেলেদের ক্রিকেটার বানাতে। তা ছাড়া ফুটবলার তুলে আনার জন্য সঠিক পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি মনে করি, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো দলগুলোর উচিত যুব ফুটবলের উন্নতিতে আরও জোর দেওয়া।’’
অনূর্ধ্ব-১৬ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ: ভারত বনাম ইরান।
অক্টোবরে চিন সফরে ভারত: চিনের বিরুদ্ধে ভারতের সিনিয়র ফুটবল দল এখন পর্যন্ত ১৭টি ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু সবই দেশের মাটিতে। এ বারই প্রথম চিন সফরে যাচ্ছেন ভারতের সিনিয়র দল। আগামী বছরের এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি হিসেবে ১৩ অক্টোবর চিনের জিয়াংসুতে খেলবে ভারতীয় দল।
চিনের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত জয় অধরাই থেকেছে ভারতের সিনিয়র দলের। ১৭ বারের সাক্ষাতে ১২ বার জিতেছে চিন। পাঁচটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। জাতীয় দলের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন বলেছেন, ‘‘চিনের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধেই আমাদের আসল পরীক্ষা। তবে এশিয়ান কাপের মূল পর্বের আগে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে চাই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘প্রবল চাপের মধ্যে আমাদের ছেলেরা কী ভাবে খেলে, সেটা চিনের বিরুদ্ধে পরীক্ষা করতে চাই।’’ সদ্য প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ পিছিয়েছে ভারত। এই মুহূর্তে সুনীল ছেত্রীরা ৯৭ নম্বরে। চিন রয়েছে ৭৬ নম্বরে।