দুরন্ত: ভারতীয় ফুটবলকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৬ দল। টুইটার
অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে জিতলেই ২০১৯ সালে পেরুতে যুব বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করবে ভারত। লক্ষ্য পূরণের পথে প্রধান কাঁটা দুরন্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ কোরিয়া। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে উদ্বেগহীন ভারতীয় শিবির।
কী ভাবে আমূল বদলে গিয়েছে ভারতীয় ফুটবলের ছবিটা? জাতীয় দলের ডিরেক্টর প্রাক্তন ফুটবলার অভিষেক যাদব কুয়ালা লামপুরেই রয়েছেন। ফোনে তিনি শোনালেন ভারতীয় ফুটবলের বিবর্তনের কাহিনি, ‘‘বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে স্টেডিয়ামে প্রায় সাড়ে এগারো হাজার দর্শক ছিলেন। অধিকাংশই ইন্দোনেশিয়ার সমর্থক। বিদেশে ম্যাচ খেলতে খেলতে আমাদের ছেলেরা এখন অনেক পরিণত হয়ে উঠেছে। কোনও কিছুতেই ওরা আর ভয় পায় না।’’
অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের অধিকাংশ ফুটবলারের উত্থানের কাহিনিও রোমাঞ্চকর। এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে এখনও পর্যন্ত একটাও গোল না খাওয়া গোলরক্ষক নীরজ কুমারকে ফুটবল খেলার অপরাধে স্কুলে আসতে বারণ করেছিলেন শিক্ষকেরা। তাতে অবশ্য দমে যায়নি প্রতিশ্রুতিমান গোলরক্ষক। এই প্রতিযোগিতার আর এক আবিষ্কার স্ট্রাইকার বিক্রম প্রতাপ সিংহের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। চণ্ডীগড় অ্যাকাডেমির এই ছাত্র রাত হলেই পালিয়ে গিয়ে সিনেমা দেখত। অ্যাকাডেমির কোচেরা অনেক বুঝিয়েও আটকাতে পারেনি বিক্রমকে। আসরে নামেন অভিষেক। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের অ্যাকেডেমিতে নিয়ে যান প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকারকে। এখন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে বিক্রম। মধ্য প্রদেশের মিডফিল্ডার ভুবনেশ সেন্দ্রে, উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফরনগর থেকে উঠে আসা ডিফেন্ডার মণীশ চোধুরির সমস্যা ছিল অভিভাবকদের আপত্তি।
সব বাধা অতিক্রম করতে দু’বছর সময় লেগেছিল অভিষেক, বিবিয়ানো ফার্নান্দেসদের। তার মধ্যেই ২০১৯ সালের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য রূপরেখা প্রস্তুত করেছেন। অভিষেক বলছিলেন, ‘‘ফুটবলার নির্বাচন থেকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রস্তুত— দু’বছর ধরে পরিশ্রম করেছি। শুধু তাই নয়। বিদেশে শিবির করা থেকে শুরু করে কখন কোন দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব, তাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিলাম। দারুণ ভাবে সাহায্য করেছেন ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল্ল পটেল ও সচিব কুশল দাস। এখন ধীরে ধীরে সেই পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছি।’’
কী ভাবে দল নির্বাচন করেছেন? অভিষেক বললেন, ‘‘আমাদের স্কাউটিং টিমের সদস্যেরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছেন প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের খোঁজে। আমি নিজেও অনেক জায়গায় গিয়েছি। যুব লিগ, যুব আই লিগ থেকে জাতীয় প্রতিযোগিতা— সব জায়গায় আমরা ছিলাম। শুধু তাই নয়। কেউ হয়তো ভাল কোনও ফুটবলারের সন্ধান দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখতে গিয়েছি। পছন্দ হলে সেই ফুটবলারকে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ ফুটবলার নির্বাচনের মাপকাঠি কী? জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকার ব্যাখ্যা, ‘‘এই মুহূর্তে যারা খেলছে জাতীয় দলে, তাদের চেয়ে ভাল ফুটবলার তুলে আনা। আমাদের দর্শন খুব স্পষ্ট— শীর্ষে উঠতে হলে সেরা দল বানাতে হবে। আমরা দল গড়ছি, ভবিষ্যতের কথা ভেবে।’’
কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলে বাংলায় কেউ নেই কেন? অভিষেক বলছেন, ‘‘বাংলায় প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের অভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমার মতে, বাংলার ফুটবলারেরা অনেক বেশি বুদ্ধিমান হয়। কয়েক দিন আগেই আমাদের স্কাউটিং দলের সদস্যেরা বাংলায় গিয়েছিলেন। আশা করছি, দ্রুত বাংলার ফুটবলারদের দেখা যাবে জাতীয় দলে।’’