নয়াদিল্লিতে বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর।
ভারতীয় ওয়ান ডে টিম হচ্ছে, অথচ সুরেশ রায়না নেই!
ভারতীয় ওয়ান ডে টিম হচ্ছে, অথচ রবীন্দ্র জাডেজা নেই!
ললিত মোদী প্রেরিত আগুনে ই-মেল। যেখানে রায়না-জাডেজাকে এক রিয়েল এস্টেট টাইকুনের থেকে ‘উপহার’ নেওয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া। তড়িঘড়ি ভারতীয় বোর্ডের ড্যামেজ কন্ট্রোল। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরের বলে দেওয়া, আইসিসি নিশ্চুপ থাকায় রায়নারা সন্দেহমুক্ত। কোনও তদন্তও হবে না। কিন্তু তার পরেও আসন্ন জিম্বাবোয়ে সফরের টিমে রাখা হল না দুই তারকা ক্রিকেটারকে।
বোর্ড বলল, সুরেশ রায়না বিশ্রামে। ঠিক যেমন এমএস ধোনি, বিরাট কোহলিরা।
বোর্ড বলল, রবীন্দ্র জাডেজার ফর্ম খারাপ। বাজে পারফর্ম করছেন। তাই তিনি নেই।
যার পরপরই প্রশ্ন উঠে যায়, এটা আদতে রায়নাদের আগলানোর রাস্তায় ভারতীয় বোর্ডের নেমে পড়া কি না? কারণ বোর্ড বলে দিয়েছে যে, আইসিসি যখন কিছু জানায়নি তাই রায়নারা সন্দেহমুক্ত। তদন্তের প্রশ্নও নেই। পাশাপাশি টিমে না রাখা মানে এমনিতেই মিডিয়ার মাইক্রোস্কোপের বাইরে চলে যাবেন রায়নারা। বোর্ড কি তা হলে জেনেবুঝে এটা করল? রায়নাদের আগলানোয় নেমে পড়ল?
কেউ কেউ আবার জিম্বাবোয়ে সফরের দল দেখে তির্যক মন্তব্য করতে শুরু করলেন। লক্ষ্য, টিমের অধিনায়ক। বলাবলি চলল, অজিঙ্ক রাহানে বাংলাদেশ সফরের ওয়ান ডে টিমে সুযোগই পাচ্ছিলেন না। স্বয়ং ধোনি তাঁর স্ট্রাইক রোটেট করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। আর সেই রাহানেকেই কি না ওয়ান ডে টিমের ক্যাপ্টেন করে দেওয়া হল? নির্বাচক প্রধান সন্দীপ পাটিল কারণ দেখিয়েছেন, যে কোনও জায়গায় রান পাওয়ার পুরস্কার পেলেন রাহানে। কিন্তু পাল্টা বলা হচ্ছে, এই ডামাডোলের পরিস্থিতিতে এখন ভারত অধিনায়কের মুকুট পাওয়াটা কত সহজ হয়ে গিয়েছে।
রায়নাদের প্রসঙ্গে বোর্ড সচিবের ব্যাখ্যাকেও ‘হাস্যকর’ মনে হচ্ছে কারও কারও। অনুরাগ ঠাকুর এ দিন বলে দেন, যে হেতু মোদীর ই-মেলে কোথাও আইপিএলের উল্লেখ নেই, তাই ভারতীয় বোর্ডের এ বিষয়ে করণীয় কিছু নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট বা আইপিএল ভারতীয় বোর্ডের তদন্তের আওতায় পড়ে, বাকিটা দেখার দায়িত্ব আইসিসির। সুতরাং আইসিসি যখন এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনি, বোর্ড কেন করবে? যে বিবৃতি অবাক করছে ক্রিকেটমহলের কাউকে কাউকে। আইপিএল শব্দটা নেই বলে এত কিছু জেনেও তদন্ত হবে না! অনুরাগ আরও বলেন যে, এ সব ক্ষেত্রে তদন্ত করে থাকে আইসিসির দুর্নীতিদমন শাখা। রায়নাদেরটাও তারাই করেছে। ভারতীয় বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। যদি তিন প্লেয়ারের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যেত, তা হলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে সেটা জানাত আইসিসি। কিন্তু আইসিসি এ ব্যাপারে ভারতীয় বোর্ডকে কিছুই জানায়নি। তা হলে রায়নাদের ক্লিন চিট দিতে বাধা কোথায়?
নতুন চুলের স্টাইল নিয়ে আপাতত বিশ্রামে চললেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
কিন্তু পাল্টা প্রশ্নও উঠছে। উঠছে কারণ, অভিযুক্ত ক্রিকেটাররা সবাই চেন্নাই সুপার কিংগসের ক্রিকেটার। রায়না। জাডেজা। ডোয়েন ব্রাভো। গত শনিবার টুইটারে যাঁদের বিরুদ্ধে মোদীর একটা ই-মেল ফাঁস হয়ে যায়। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ভারতের এক রিয়েল এস্টেট টাইকুনের কাছ থেকে এই তিন ক্রিকেটার অর্থ এবং ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছিলেন। এবং যেহেতু তিন জনই চেন্নাই সুপার কিংগসের হয়ে খেলেন, ঘটনার সঙ্গে আইপিএলের যোগাযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ মনে করছেন, অভিযোগ সত্যি হলে আইপিএলের ব্র্যান্ড ভ্যালু প্রচণ্ড মার খাবে, এই ভয়েই ব্যাপারটার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নামছে না বোর্ড। আইপিএল থেকে প্রতি বছর বিশাল অঙ্ক আয় করে ভারতীয় বোর্ড। ২০১৩ থেকে আইপিএলে গড়াপেটা আর বেটিং প্রকাশ্যে আসার পর এই টুর্নামেন্টের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। এ বছর আইপিএল শুরুর আগেও টুর্নামেন্টের স্পনসররা এটা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন— তিনিও সম্পূর্ণ মুক্তি পাচ্ছেন কোথায়? ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট এখন আর তিনি নন। কিন্তু শ্রীনি আইসিসি চেয়ারম্যান। আর তাই প্রশ্ন উঠছে যে, গত কয়েক বছরে সিএসকে মালিক, বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং আইসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পেশি-শক্তি খাটিয়েই কি ব্যাপারটাকে চেপে রেখেছিলেন শ্রীনি? মোদী তো শ্রীনির বিরুদ্ধে সাফ অভিযোগ তুলে বলেই দিয়েছেন, সিএসকের তিন প্লেয়ারকে আগলে রাখছেন শ্রীনি। লন্ডন থেকে একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে মোদী এ দিন বলেছেন, ‘‘সিএসকের এই তিন জনকে আগলে রাখার জন্য শ্রীনিবাসন কী করছেন? আমার প্রশ্ন এটাই। গোটা দেশও এই প্রশ্নের উত্তর চায়।’’
গোটা দেশ সম্ভবত আরও একটা জিনিস চায়। দেখতে চায়, আগামী কয়েক দিনে ভারতীয় ক্রিকেটে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি করার মতো বোমা ললিত মোদীর হাত থেকে আসে কি না।
ছবি: পিটিআই।