প্রশ্ন: সেই সময়টায় আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সাংসারিক জীবনে ঝড় চলছে। তার মধ্যে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে গিয়ে ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বাদ। কী চলছিল মনের মধ্যে?
মহম্মদ শামি: সকলেই জানেন, আমার জীবনে সেই সময়টায় কী চলছিল! ব্যক্তিগত জীবনে এতটাই বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম যে, ফিটনেস টেস্টে পাশ করার জন্য যা যা করার দরকার ছিল, তা করে উঠতে পারিনি। ক্রিকেটের বাইরের ব্যাপার নিয়েই তো তখন ছোটাছুটি করতে হচ্ছিল। আমি তো এটাই বুঝতেই পারছিলাম না যে, আর কখনও মাঠেই নামা হবে কি না। কী সব সাংঘাতিক অভিযোগ ধেয়ে এসেছিল!
প্র: মাঠে ফিরতে গিয়েও ধাক্কা!
শামি: টেস্ট ম্যাচটা যখন খেলতে যাচ্ছিলাম, তখনও আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে মাঠের বাইরের নানা রকম সব ব্যাপার। আমি জানতাম না যে, ফিটনেস টেস্ট দিতে হবে টেস্ট ম্যাচের আগে। আমি ইয়ো ইয়ো টেস্টের জন্য তৈরি ছিলাম না। তাই ঝটকাটা একটু অপ্রত্যাশিত ছিল। অস্বীকার করব না যে, খুব খারাপও লেগেছিল। মনে হয়েছিল, এই সময়ে এমন একটা ধাক্কা কি আমার প্রাপ্য ছিল? মনে হয়েছিল, একসঙ্গে সব কিছুই কি আমার বিপক্ষে যেতে হবে? তখনই ঠিক করি, ফিটনেসের প্রমাণ না দিতে পারলে আমি আর খেলব না।
প্র: টিম ম্যানেজমেন্টকেও সেই কথা বলে দেন আপনি?
শামি: হ্যাঁ, কোচকে বলেছিলাম, আনফিট হয়ে গিয়েছি যখন, আর খেলতে চাই না। মাঠে ফিরব যদি নিজেকে ফিট করতে পারি। আমাদের টিমে কোচ, ক্যাপ্টেন, সাপোর্ট স্টাফ সকলে খুব সমর্থন করে প্রত্যেকটি ছেলেকে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে দরকার বুঝে বিরাট নামবেন চারেও, ইঙ্গিত শাস্ত্রীর
পুরো একটা পরিবারের মতো থাকি আমরা। দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। পরম শান্তিতে থাকা যায় যে, সকলে আমার সঙ্গে আছে। তাই ফিটনেস টেস্টে ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়ায় প্রথমে ধাক্কাটা লাগলেও সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। কোচ এবং বাকিরা আমাকে বুঝিয়েছিলেন, চিন্তা করিস না, তুই ফিরে আসবি।
মহম্মদ শামিকে নিয়ে চটপট এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিন
প্র: নিজেকে কী ভাবে ফেরালেন?
শামি: নিজেকে বোঝালাম যে, নিজের রাস্তায় চলো। আর সেই রাস্তাটা ক্রিকেটের রাস্তা। যে দিন থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি, নিজের মধ্যে থেকে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে যে, আমি পারব। যখন কলকাতা ময়দানে বল করতাম, উল্টো দিকে বড় ক্লাবের ব্যাটসম্যানরা থাকত, এ ভাবেই আমি রান-আপ শুরু করতাম। বল হাতে ছুটতে ছুটতে শুধু আউরে যেতাম একটাই কথা— শামি তুমি পারবে। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে বোলিং করে যাও। টেস্ট ম্যাচ থেকে বাদ পড়ে কলকাতা ময়দানে বেড়ে ওঠার সেই দিনগুলো খুব মনে পড়ছিল। কলকাতা আমার সব চেয়ে প্রিয় শহর। আজ যেখানে আমি পৌঁছতে পেরেছি, তার জন্য বাংলার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। যত দিন পারব বাংলার হয়ে খেলব। অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। কলকাতার সেই শুরুর দিনগুলো আমাকে ফিরে আসার শক্তি দিয়েছে। মনে হচ্ছিল, রান-আপ ধরে ছুটে আসা আমার সেই পরিশ্রমের দিনগুলো কি মাত্র কয়েকটা মাসের ঝোড়ো হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যেতে পারে? তার পর নিজেকে বললাম, এটা হতে দেওয়া যাবে না। আমাকে ফিরে আসতেই হবে।
প্র: এক দিকে ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়-ঝাপ্টা। অন্য দিকে ক্রিকেট মাঠেও ধাক্কা। কী ভাবে দু’টো দিক সামলাচ্ছিলেন?
শামি: আমি বরাবরই মানসিক ভাবে শক্তিশালী। ক্রিকেটার হওয়ার রাস্তায় অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাকে। আমি নিজের সঙ্গে খুব কথা বলি। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসতে এই জিনিসটা খুব সাহায্য করে। যদি সারাক্ষণ নিজেকে বলে যেতে পারেন যে, আপনি এটা করতে পারবেন তা হলে দেখবেন সত্যিই সেটা করার শক্তি পাচ্ছেন। আমার একটা স্বভাব হচ্ছে, ভাল সময়েও আমি চিন্তাভাবনা করতে থাকি নানা বিষয় নিয়ে। এটা কেন হল, ওটা কেন হল না? এই মানসিক অনুশীলনটা আমাকে ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ভাল সময়ে ভেসে যেতে দেয় যায় না, বিপর্যয়ে ভেঙে পড়তে দেয় না। আর একটা কথাও আমি বলতে চাই। কঠিন সময়ে অনেকে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওঁদের সমর্থন আমাকে খুব শক্তিশালী করে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল, এই পৃথিবীতে আমি মোটেও নিঃসঙ্গ নই।
প্র: একটা ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার মেয়েকে উৎসর্গ করলেন। মেয়েকে নিয়ে কী বলবেন?
শামি: বহুত দিন হো গয়া উসকো মিলে নহী... সেই আইপিএলের সময় দেখা হয়েছিল। জানি না আমাকে ওর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে কি না। তবে আমি ওকে দেখতে চাই। দরকার হলে আদালতে যেতে হবে ওর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নিতে। আমি অশান্তি চাই না। তবু হয়তো আদালতে আবেদন করতে হবে। তাই করব। মেয়ের সঙ্গে ফোনেও কথা বলতে পারি না আমি। জানি না ও কী করছে, কেমন আছে।
আরও পড়ুন: একপেশে হারে হতাশ রোহিত
প্র: খুব মিস করছেন মেয়েকে?
শামি: (দীর্ঘশ্বাস স্পষ্ট শোনা যায়) আমি ওকে খুব মিস করি। কিন্তু কী যে আমি করতে পারি, জানা নেই। হয়তো মেয়ে সঙ্গে থাকলে আমি আরও ভাল পারফরম্যান্স করতে পারতাম। পরিবারের ব্যাপারটা মাথার মধ্যে তো চলতেই থাকে, তাই না? চাইলেই তো আর বেরিয়ে আসা যায় না।
প্র: যদি জানতে চাই, ভবিষ্যতের রাস্তায় কী অপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে, আপনার উত্তর কী?
শামি: জানি না, আমি সত্যিই জানি না। শুধু বলতে পারি, যা-ই আসুক আমি শক্ত থাকার চেষ্টা করব। দু’টো সেবাই তো জীবনে করতে চেয়েছি। দেশের সেবা আর মেয়ের সেবা!