IPL 2019

আইপিএল সুপারহিট হওয়ার পিছনে রয়েছেন এক প্রাক্তন নাইট, রহস্য ফাঁস করলেন লক্ষ্মীরতন

নাইটদের সংসারের পুরনো সব কথা আজও লক্ষ্মীরতনের স্মৃতিতে জীবন্ত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:২২
Share:

ফেলে আসা দিন। গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে লক্ষ্মীরতন শুক্ল। —ফাইল চিত্র।

ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ৭৩ বলে বিধ্বংসী ১৫৮ রানের ইনিংস আজও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পান বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল।

Advertisement

১১ বছর আগে ম্যাকালাম ও লক্ষ্মীরতন যে ছিলেন একই দলের সদস্য। তখন দু’ জনের স্বপ্নই ছিল কেকেআর ঘিরে। নাইট হিসাবে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ দু’জনেই। প্রাক্তন কিউয়ি অধিনায়কের সেই ব্যাটিং ধুন্ধুমারের জন্য এই ২০১৯ ফিরে তাকায় ২০০৮-এর দিকে। লক্ষ্মীরতন এখন রাজ্যের ক্রীড়া দফতরের প্রতিমন্ত্রী। ম্যাকালামের হাতে উঠেছে ধারাভাষ্যকারের মাইক্রোফোন।

২০০৮ সালের আজকের দিনেই (১৮ এপ্রিল) আইপিএলের প্রথম বল গড়িয়েছিল। সেটাই ছিল আইপিএলের প্রথম সংস্করণ। আইপিএলের এখন দ্বাদশ সংস্করণ। সে বার প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কেকেআর ও রাহুল দ্রাবিড়ের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ম্যাকালাম ঝড় তুলেছিলেন। সেই ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি দ্রাবিড়ের বোলাররা। টাইমমেশিনের সাহায্য না নিয়েই লক্ষ্মীরতন বলছেন, ‘‘ম্যাকালামের ওই ইনিংসটার জন্যই আইপিএলের প্রথম শো সুপারহিট হয়েছিল। আইপিএল সম্পর্কে এর আগে কোনও ধারণাই ছিল না মানুষের। ম্যাকালামের বিধ্বংসী ইনিংসের জন্যই আজ আইপিএলের এই জনপ্রিয়তা। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আইপিএল কাঁপানো তারকার জন্য দরজা খোলা রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা ইংল্যান্ডের

আরও পড়ুন: রায়ুডুর বাদ পড়া কি ভুল সিদ্ধান্ত? পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে

ম্যাকালামকে নিয়ে শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি আজও সমান নস্ট্যালজিক। কেকেআর-এর ফেসবুক পেজে নিউজিল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটারের একটি জার্সির ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সেই ছবির ক্যাপশন হিসাবে লেখা, ‘‘এই নাইটকে কি ভোলা যায় কখনও?’’ প্রাক্তন সতীর্থের ইনিংস সম্পর্কে বলতে গিয়ে লক্ষ্মীরতন ভাষা হারিয়ে ফেলছেন। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেই তিনি বলছেন, ‘‘ওই ইনিংস চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। একেক সময়ে মনে হচ্ছিল, কী হচ্ছে এটা! নিউজিল্যান্ডের হয়ে ম্যাকালামের বহু ইনিংস দেখেছি। কিন্তু, ওরকম মারতে আমি আগে কখনও দেখিনি ওকে।’’ ম্যাকালামের প্রহার সেদিন ম্যাচের ভাগ্য আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কলকাতার জবাব দিতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল আরসিবি। বল হাতে সেদিন সুনীল জোশির উইকেট নিয়েছিলেন লক্ষ্মীরতন।

ম্যাকালামের সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নাইটদের সংসারের পুরনো সব কথা আজও লক্ষ্মীরতনের স্মৃতিতে জীবন্ত। ডায়রির ছেঁড়া পাতা উল্টে তিনি বলছেন, ‘‘(ক্রিস) গেইলের কথা খুব মনে পড়ছে। বিমানে সবার পিছনে ও বসতো। জ্যাকি চ্যানকে নকল করতো। আমরা খুব মজা পেতাম।’’ শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে এখনও মধুর সম্পর্ক লক্ষ্মীরতনের। প্রতিটি ম্যাচের বিরতির সময়ে শুভেচ্ছা পাঠান তিনি। নাইটদের সুখে তিনি সুখী। আবার নাইটদের দুঃসময়ে তিনি দুঃখ পান। কেকেআর-এর এ বারের অভিযান প্রসঙ্গে প্রাক্তন নাইট বলছেন, ‘‘এখন সময়টা খারাপ যাচ্ছে কেকেআর-এর। তবে খারাপ সময় দ্রুতই কেটে যাবে বলে আমার মনে হয়।’’

নাইট শিবিরের ‘মধ্যমণি’ এখন আন্দ্রে রাসেল। তাঁর ব্যাটেই কেকেআর-এর বাঁচা-মরা নির্ভর করে প্রতিটি ম্যাচেই। লক্ষ্মীরতন কিন্তু রাসেলকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। ম্যাকালাম-গেইলের সঙ্গে একই বন্ধনীতে রাসেলকে ফেলতে তাঁর অনীহা। লক্ষ্মীরতন বলছিলেন, ‘‘রাসেল কিন্তু চাপের মুখে খেলতে পারে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ভাল খেলতে পারে না রাসেল। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও আহামরি নয়। এ বারের আইপিএলে কয়েকটা ম্যাচে ভাল খেলছে ঠিকই। তবে নাইটদের চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে, তখনই ওকে সেরাদের সঙ্গে এক বন্ধনীতে ফেলা হবে।’’

কেকেআর মালিক শাহরুখ খান সম্পর্কে এখনও উচ্ছ্বসিত বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক। প্রাক্তন বস প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, ‘‘শাহরুখ খান সব সময়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করতেন। ম্যাচের আগে আমাদের মেসেজ পাঠাতেন। প্রথম দিকে আমরা তো সাফল্যই পাইনি। তবুও শাহরুখ খানকে কোনওদিন রাগতে দেখিনি। আমাকে বলতেন, তুমি দারুণ অলরাউন্ডার। তোমার মধ্যে ক্ষমতা রয়েছে।’’

দেখতে দেখতে এক যুগ পার করে ফেলল আইপিএল। নাইট সংসার ছেড়ে অনেকদিন আগেই চলে এসেছেন লক্ষ্মীরতন। তবুও কেউ ভোলেননি কাউকে। লক্ষ্মী আর নাইট শিবিরের রোম্যান্সের কাহিনি যেন মান্না দে-র সেই গান, ‘হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন