ধোনির মেজাজ হারানোর সেই মুহূর্ত। ছবি: এএফপি।
এতদিন পর্যন্ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সম্পর্কে যে ধ্যান ধারণা ছিল, তা বদলে দিল আইপিএলের চেন্নাই সুপার কিংস বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ।
ধোনি সম্পর্কে কত কিংবদন্তি ছড়িয়ে রয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বরফ শীতল মাথার জন্য বিখ্যাত বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। বাঁকা প্রশ্নে বিচলিত হন না। প্রবল চাপেও তাঁর মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতোই প্রখর। মেজাজ একেবারেই হারান না। সব সময়েই মাথা ঠান্ডা রাখেন তিনি। তাঁর চোখে মুখে টেনশনের লেশমাত্র খেলা করে না। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে বোলারদের বা ফিল্ডারদের বকাবকি করতেও দেখা যায়নি এতদিন।
বৃহস্পতিবারের ম্যাচ সব বদলে দিল এক মুহূর্তে। এত দিন ধরে যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিলেন তিলে তিলে, তা নিমেষে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল। এ বার থেকে তাঁকে কি কেউ ‘মিস্টার কুল’ আর বলবেন?
আরও পড়ুন: ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা ধোনির, আরও বড় শাস্তি হওয়া উচিত ছিল, বলছেন মঞ্জরেকর
আরও পড়ুন: ইডেনে আজ সবুজ পিচ? দলে দু’টি পরিবর্তন? দেখে নিন নাইটদের সম্ভাব্য একাদশ
ধোনির কি রাগ হয় না? তিনি কি রক্তমাংসের মানুষ নন? এমনই সব প্রশ্ন ঘোরাফেরা করত আগে। বৃহস্পতিবার প্রমাণিত হল ধোনিও রক্তমাংসের মানুষ। তিনিও অন্যদের মতো মেজাজ হারান। না কি বয়স বাড়ছে বলে মেজাজ আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না? এ নিয়ে তর্ক হতেই পারে। ম্যাচের শেষের দিকে ধোনি যা করলেন, তার জন্য ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হল। আরও বড় সড় শাস্তি পেতেই পারতেন। ধোনি বলেই হয়তো আর্থিক জরিমানা করে বিষয়টা লঘু করে দেখানো হল। কয়েকটা ম্যাচ নিষিদ্ধও হতে পারতেন সিএসকে ক্যাপ্টেন।
ঠিক কী হয়েছিল? রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে জেতার জন্য শেষ ওভারে ১৮ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। শেষ ওভারে বোলার ছিলেন বেন স্টোকস। স্টোকসের ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন ধোনি। শেষ তিন বলে জেতার জন্য দরকার ছিল আট রান। স্টোকসের চতুর্থ বলটি ছিল ফুলটস। উচ্চতার জন্য প্রথমে ‘নো বল’ ডেকেছিলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা আম্পায়ার উলহাস গান্ধে। স্কোয়ার লেগ আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড সিদ্ধান্তটি বাতিল করে দেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ডাগ আউট থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন ধোনি।
সেই ধোনির চোখে মুখে খেলা করছিল রাগ, অসন্তোষ। মাঠে ঢুকে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন চেন্নাই অধিনায়ক। ধোনির তর্কেও অবশ্য বরফ গলেনি। আম্পায়াররা তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ধোনিরাই ম্যাচ জেতে। কিন্তু কোনও অধিনায়ক কি মাঠের ভিতরে ঢুকে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিতে পারেন? ধোনি কি নিজের সীমা অতিক্রম করলেন না? কথায় বলে, ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। মাঠের ভিতরে ঢুকে পড়ে তর্কাতর্কি করে নিজের এ কোন পরিচয় দিলেন ধোনি? তাঁর এমন রুদ্র রূপের সঙ্গে যে পরিচিত নয় ক্রিকেটবিশ্ব। এ বার থেকে ধোনিকে ‘মিস্টার কুল’ বলতে যদি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে ক্রিকেটবিশ্ব, তা হলে কি খুব ভুল কিছু হবে?