নজরে: এ বার ইডেনে নামছেন নতুন প্রতিভা ঋষভ। ফাইল চিত্র
দু’দিন পর ইডেনে নামবেন। তবু মনের কথা বলতে দ্বিধা নেই তাঁর। ‘‘ইডেন অবশ্যই স্পেশ্যাল। তবে তার চেয়েও স্পেশ্যাল ফিরোজ শাহ কোটলা, যেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু করেছি।’’
নিজের ব্যাটের মতো সোজাসাপ্টা তাঁর মুখও। বিরাট কোহালি, ক্রিস গেল, এবি ডিভিলিয়ার্সদের উপর কেকেআরের পেসারদের বুলডোজার চালানোর ঘটনা তো এই সেদিনের। আগামীকাল, শুক্রবার সেই অভিশপ্ত মঞ্চেই নামার আগে ঋষভ পন্থ বলছেন, এমন ঘটনা ফের ঘটতে দেবেন না।
বুধবার সন্ধ্যায় কেকেআরের শহরে পা দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রতিভা ও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ব্যাটিং ভরসা বলে দিলেন, ‘‘রোজ রোজ তো আর কেউ বিপক্ষকে পঞ্চাশ রানে আউট করতে পারে না। আর আমাদের ব্যাটিং এত খারাপও না। শুক্রবার বড় কোনও বিপর্যয় আমরা ঘটতে পারবে না।’’
একেই বোধহয় বলে ‘দিল্লি কা দিল’। আইপিএল শুরুর দু’দিন আগেই পিতৃহারা হন ঋষভ। ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যখন মারা যান তাঁর বাবা, তখন ঋষভ দিল্লিতে ডেয়ারডেভিলসের টিম হোটেলে। দিনটা ছিল বুধবার। পরের দিনই হরিদ্বারে বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে শুক্রবার দলের সঙ্গে যোগ দেন বেঙ্গালুরুতে। চিন্নস্বামীতে নেমে পরের দিন ৩৬ বলে ৫৭ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন ১৯ বছরের তরুণ।
আরও পড়ুন: দুই নায়কের লক্ষ্য এখন প্লে-অফ
‘‘মনের উপর অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে মাঠে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার এই মানসিকতাই ঋষভকে শিখরে পৌঁছে দিতে পারে’’, দিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন ঋষভের ছোটবেলার কোচ তারক সিংহ। তাঁর আগে একই রকম উদাহরণ রেখেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহালি-রা। তাঁদেরও জীবনে এসেছে এই পরিস্থিতি। তাঁরাও পিতৃশোক ভুলে মাঠে ফিরে টিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সফল হয়েছেন।
সচিনদের এই দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয়েই কি সে দিন মাঠে ফিরে আসা তাঁর?
ঋষভ বললেন, ‘‘না, ঠিক তা নয়। তখন কি আর ওদের কথা মনে ছিল? তখন একটাই কথা বারবার মনে হয়েছিল। যদি মাঠে না ফিরি, তা হলে বাবার আত্মা শান্তি পাবে না।’’ তার পরেই বাবার উৎসাহ দেওয়ার কথা চলে আসে তাঁর মুখে। বলতে থাকেন, ‘‘বাবার জন্যই তো আমার ক্রিকেটে আসা, ক্রিকেট খেলা। বাবা বরাবরই চাইতেন, জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, ক্রিকেট থেকে যেন আমি মুখ ফিরিয়ে না নিই। সে দিন যদি বেঙ্গালুরুতে ফিরে গিয়ে না খেলতাম, তা হলে বাবা খুব কষ্ট পেতেন। মা-ও একই কথা বলেছিলেন আমাকে। তাই পরের দিনই ফিরে যেতে দ্বিধা করিনি।’’ এখনই অনেকে তাঁকে ভারতের ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি দলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরী বলতে শুরু করে দিয়েছেন। ঋষভের কিন্তু সে সবে হেলদোল নেই। বললেন, ‘‘আমি মোটেই সে রকম কিছু ভাবছি না। মাহি ভাইয়ের কোনও বিকল্প হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। ওঁর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। সে গুলো অনেক কাজে লেগেছে আমার। আমার ব্যাটিং-কিপিংয়ের উন্নতির পিছনে ওঁর অবদান যথেষ্ট। মাহি ভাইয়ের মতো কখনও হতে পারব কি না জানি না।’’ কিন্তু শুরুটা বিস্ফোরক হওয়া সত্ত্বেও আর কোটলায় কেকেআরের বিরুদ্ধেও তেমনই দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলার পরেও কেন শেষ দুই ম্যাচে রান নেই? এই প্রশ্নের জবাব তিনিও খুঁজছেন। এ নিয়ে কথা হয়েছে দলের মেন্টর রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গেও। বললেন, ‘‘রাহুল স্যার বুঝিয়েছেন আমার কোথায় ভুল হয়েছে। আশা করি পরের ম্যাচে আর সেই ভুল হবে না।’’ তা হলে কি শুক্রবারের পর ইডেনও স্পেশ্যাল হয়ে থাকবে তাঁর কাছে? তাতেও ‘না’ ঋষভের। বলে দিচ্ছেন, ‘‘ইডেনে ভাল কিছু করলেও কোটলাই স্পেশ্যাল হয়ে থাকবে। ওখানেই যে সব কিছুর শুরু।’’