বিধ্বংসী: রবিন উথাপ্পার তাণ্ডবের সামনে অসহায় দর্শক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও। বুধবার এমসিএ-র মাঠে। পুণে সুপারজায়ান্ট-কে হারিয়ে লিগ টেবলে এক নম্বরে উঠল কেকেআর। ছবি: এএফপি
ব্যাট উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে কে? গৌতম গম্ভীর আবার কে!
ওই যে মুখে হাসি কার? রবিন উথাপ্পা আবার কার!
সুনীল নারাইন আজ আর শান্ত ভাবে বসে নেই। তাঁকেও দেখা যাচ্ছে হাত পা ছুড়তে।
ক্রুদ্ধ গর্জন ভেসে আসছে একের পর এক। আসছে সামনের ওই বাইশ গজ থেকে। ওই যে ভিআইপি বক্সের নীচে কেকেআর ডাগআউটের সামনে জাক কালিস দাঁড়িয়ে। তৃপ্ত একটা মুখ মিশে গেল নাইট উৎসবে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর স্টিভ স্মিথ তখন অসহায় ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন একে অন্যের দিকে। রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টের শেষ তিন ম্যাচের জয়ের রেশ তখন হারিয়ে গিয়েছে ঘরের মাঠেই।
কেকেআর অধিনায়ককে দেখে মনে হচ্ছে খুব নিশ্চিন্ত। এতটা নিশ্চিন্ত তাঁকে শেষ কবে দেখিয়েছে! দল শীর্ষে যাওয়ার পরেও কিছুটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মাঠ ছাড়ছিলেন গম্ভীর। নির্লিপ্ত দেখাবে না-ই বা কেন নাইট অধিনায়ককে? এতটা ভয়ঙ্কর কি আগে কখনও দেখিয়েছে নাইটদের?
মরাঠার শহরে সবাই আশা করেছিল হাড্ডাহাড্ডি একটা লড়াই হবে। অফিস বন্ধ করে, তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে তাই তো ভিড় জমিয়েছিলেন প্রায় আঠাশ হাজার দর্শক মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি তো দূরের কথা, পুণের মাঠে প্রদর্শনী ম্যাচের মতোই ব্যাটিং করল নাইট রাইডার্স। রাইজিং পুণেকে হারাতে গম্ভীর-উথাপ্পার পার্টনারশিপই যথেষ্ট ছিল। হাসতে হাসতে জেতা যাকে বলে আর কী!
আরও পড়ুন: দুই নায়কের লক্ষ্য এখন প্লে-অফ
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই গম্ভীর বলেছিলেন তাঁর নাইটরা রান তাড়া করতে ওস্তাদ। টস জিতে তাই রাইজিং পুণেকে ব্যাটিং করতে পাঠান গম্ভীর। শুকনো পিচে প্রথম এগারোয় ফিরে ওপেনিং পার্টনারশিপটা ভাঙেন পীযূষ চাওলা। রাহুলের উইকেট তুলে নেন তিনি। রাহানে ডাগআউটে ফেরেন ৪৬ রান করে।
এর পরেই প্রবেশ করলেন তিনি। ‘ধোনি, ধোনি’ তীব্র চিৎকারে তখন মাঠ উত্তাল। এ রকম পরিস্থিতিতে যে ব্যাটসম্যানই নামুন, ডেথ ওভারে চাপে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর নাম যে ধোনি। কীসের চাপ? বরং তাঁর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, আসবেন আর নিজের কাজটা করবেন। ইনিংস বেশি সময় স্থায়ী হয়নি ঠিকই, কিন্তু ‘মাহি মার রাহা হ্যায়’ মোডে ঢুকে পড়েছিলেন। শাহরুখ খানের অ্যাকশন দৃশ্যে সিনেমা হলের অবস্থা যেমন হয়, তেমনই ব্যাট হাতে ধোনিকে দেখে পুণে গ্যালারির অবস্থা ছিল— উত্তাল, উদ্দাম। দু’টো ছয় ও একটা চারে সবেমাত্র ওয়ার্ম আপ সেরেছেন মনে হচ্ছিল। ঠিক এই সময় কুলদীপ যাদবের বলে ২৩ রানে ফিরতে হল তাঁকে। পুণে অবশ্য তখন ১৫০ রানের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। এ রকম একটা পিচে ১৮০-র ওপর তুললে যে কোনও দলই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটবে। কিন্তু সামনে যে কেকেআর। যারা প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে কী ভাবে বেরিয়ে আসতে হয়, খুব ভাল করে জানে। তা সে ১৩১ রানের স্কোর বাঁচানোর লড়াই থাক বা বা ১৮২ টপকে যাওয়ার।
রান রেট কমাতে হবে? আছেন তো একজন। কুলদীপ যাদব।
রান তাড়া করতে গিয়ে আস্কিং রেটের আশেপাশে সব সময় স্কোর রাখতে হবে? আছেন তো একজন। রবীন উথাপ্পা।
ঠান্ডা মাথায় ওপেন করে দলকে দুর্দান্ত শুরু করতে সাহায্য করতে হবে? আছেন তো একজন। গৌতম গম্ভীর।
ওপেন করতে গিয়ে সুনীল নারাইনের উইকেট যখন পড়ল, মনে হল আজ কি ভাগ্য গম্ভীরদের সঙ্গে থাকবে না? ৭ ওভার শেষে তখন মাত্র ৪৫ রান তুলেছে নাইট রাইডার্স। আস্কিং রেট বেড়েই চলেছে। উথাপ্পা তখন মাত্র ১২। ইমরান তাহিরের বলে চালিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। উনাদকাট ফস্কালেন ক্যাচটা। ম্যাচটাও ফস্কে গেল। পরের ১৭ বলে এল ৪০ রান। পয়েন্ট থেকে মিউডইকেট। লং অন থেকে একস্ট্রা কভার। প্রতিটা পজিশনে বল পাঠাচ্ছেন উথাপ্পা। বিধ্বংসী হওয়ার তো একটা মাত্রা আছে!
রবিনকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন দলের ‘ব্যাটম্যান’ গম্ভীরও। গ্যালারির দর্শকদের মতো তখন মাঠের এগারোজনও অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে। কোনও জবাবই খুঁজে পাচ্ছেন না স্টিভ স্মিথ। ইমরান তাহির, ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান, রাহুল ত্রিপাঠী— নানা ফাটকা খেলেও কোনও লাভ হয়নি।