IPL 2024

কেকেআরে হর্ষধ্বনি! নেট বোলার থেকে কলকাতার স্ট্রাইক বোলার হর্ষিত ব্যাট হাতে ডিভিলিয়ার্স

দু’বছর আগে দলের এক বোলার চোট পাওয়ায় পরিবর্তের খোঁজ করছিলেন কেকেআর কর্তৃপক্ষ। নীতীশের পরামর্শে ডাকা হয় গুজরাতের নেট বোলারকে। হর্ষিতের নির্বাচনে সিলমোহর ছিল ম্যাকালামের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ ১৮:১৩
Share:

হর্ষিত রানা। ছবি: আইপিএল।

ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্স-সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচের পর আলোচনায় উঠে এসেছেন হর্ষিত রানা। পারফরম্যান্সের জন্য যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমন অতিরিক্ত আগ্রাসী আচরণের জন্য নিন্দিতও হয়েছেন। ২২ বছরের তরুণের জীবন হঠাৎ বদলে দিয়েছে ম্যাচের শেষ ওভারের দু’টি বল।

Advertisement

হায়দরাবাদের দুই ব্যাটার হেনরিক ক্লাসেন এবং শাহবাজ় আহমেদ কেকেআরের হাত থেকে ম্যাচ প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। হর্ষিতের দু’টি বল শেষ পর্যন্ত তা হতে দেয়নি। প্রথমে ইডেনের ঘরের ছেলে শাহবাজ়কে আউট করে কেকেআরকে লড়াইয়ে ফেরান। পরে ক্লাসেনকে আউট করে দলের জয় কার্যত নিশ্চিত করে দেন। সমালোচকেরা বলতেই পারেন, ক্লাসেনের উইকেট হর্ষিতের থেকেও বেশি সুযশ শর্মার। তিনি কঠিন ক্যাচটি ধরতে না পারলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত। তবু, ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী উইকেট প্রাপ্তির কৃতিত্ব হর্ষিতেরই।

কে এই হর্ষিত? দু’টি বলের জন্য আগ্রহের কেন্দ্রে! দিল্লির ২২ বছরের বাসিন্দার জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে অভিষেক ২০২২ সালে। একই মরসুমে আইপিএলে অভিষেক কেকেআরের হয়ে। তাও আবার দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে। শনিবারের আগে পর্যন্ত ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হর্ষিতের সংগ্রহ ছিল ৯টি উইকেট।

Advertisement

গত দু’বছর আইপিএল খেললেও তেমন কিছু করতে পারেননি। অথচ এ বার প্রথম ম্যাচেই ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নায়ক হর্ষিত। ২০২২ সালে তাঁর কেকেআরে যোগ দেওয়া এক দুর্ঘটনার ফল। তিনি ছিলেন আদতে গুজরাত টাইটান্সের নেট বোলার। কেকেআরের রাসিখ সালাম পিঠে চোট পেয়ে ছিটকে যান প্রতিযোগিতা থেকে। তাঁর পরিবর্তে এক জন জোরে বোলার খুঁজছিলেন কেকেআর কর্তৃপক্ষ। সুযোগ পান হর্ষিত।

দিল্লির ক্রিকেটার হওয়ায় আগে থেকে পরিচয় ছিল কেকেআরের সহ-অধিনায়ক নীতীশ রানার সঙ্গে। সে প্রসঙ্গে হর্ষিত বলেছেন, ‘‘নীতীশ ভাই আমাকে ডেকেছিল কেকেআরে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য। অভিষেক নায়ার স্যর (কেকেআরের সহকারী কোচ) আমার পরীক্ষা নেন। তিনি সন্তুষ্ট হন। আমাকে বলেছিলেন, কলকাতার হয়ে খেলার সুযোগ পেতে পারি।’’ হর্ষিতকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে কেকেআরের প্রাক্তন মেন্টর ডেভিড হাসি বলেছেন, ‘‘হর্ষিতকে প্রথম থেকে পছন্দ করত নীতীশ। ওই হর্ষিতের নাম সালামের পরিবর্ত হিসাবে সুপারিশ করেছিল ব্রেন্ডন ম্যাকালামের (কেকেআরের প্রাক্তন কোচ) কাছে।’’

ট্রায়াল দেওয়ার পরেও সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল কিছু দিন। কারণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না নায়ারের। হর্ষিত বলেছেন বলেছেন, ‘‘গুজরাতের নেট বোলার ছিলাম। এক দিন অভিষেক স্যরের ফোন পাই। সে দিন রাতেই আমাকে চুক্তিপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সে দিনের অনুভূতির কথা বলে বোঝাতে পারব না।’’ কেকেআরে সুযোগ পেলেও হর্ষিত জানতেন, তাঁর মূল কাজ হবে নেটে বল করা। ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব বেশি পাবেন না শুরুতে। তাই নেটেই দলের ব্যাটারদের বিব্রত করে প্রথম একাদশের দরজা খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন ২০ হর্ষিত। কারণ তার আগে হর্ষিত মূলত অনূর্ধ্ব ১৯ এবং অনূর্ধ্ব ২৫ স্তরে খেলতেন। সিনিয়র স্তরে খেলার তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না।

২০২২ সালেই আইপিএল খেলার সুযোগ পান। প্রথম বলেই প্রতিপক্ষ ব্যাটার তাঁকে চার মারেন। বেশ হতাশ হয়েছিলেন। সাহস দেন নীতীশ। দু’বল পর সেই ব্যাটারকে আউট করে দেন হর্ষিত। ২০২২ সালে দু’টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। উইকেট সেই একটাই। ২০২৩ সালে নীতীশ কেকেআরের অধিনায়ক হওয়ায় কিছুটা সুবিধা হয় হর্ষিতের। খেলেন ৬টি ম্যাচ। ৫টি উইকেট পান। তেমন কিছু করতে না পারলেও হর্ষিতের মধ্যে ভবিষ্যতের মশলা দেখে ছিলেন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত।

দিল্লির হয়ে অভিষেকের আগেই আইপিএল খেলা হর্ষিতের উপর আস্থা রাখা ভুল হয়নি, তা এ বার প্রথম ম্যাচেই প্রমাণিত। কোচ পণ্ডিতের আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন। জানেন, এই সাফল্যও হয়তো তাঁকে দলের প্রথম একাদশে নিয়মিত করবে না। তবু আশাবাদী দিল্লির তরুণ। আইপিএলে কেকেআরকেই নিজের দল বলে মনে করেন। কারণ জাতীয় স্তরের ক্রিকেটে তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে কেকেআরই।

হর্ষিতের সাফল্যে খুশি হাসি। তিনি শনিবারের পারফরম্যান্স দেখে বলেছেন, ‘‘অভিষেক ম্যাচ দিয়ে কাউকে বিচার করা যায় না। কাকে কোথা থেকে আনা হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। যাকে ২৪ ঘণ্টা আগেও প্রায় কেউ চিনত না, সেই এখন প্রায় নায়কের মর্যাদা পাচ্ছে। এটাই ক্রিকেট। চার দিকে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে। আর একটা ছেলে আগামী দিনের তারকা হয়ে উঠতে পারে।’’ এখানেই থামেননি হাসি। তিনি বলেছেন, ‘‘ভাববেন না হর্ষিত শুধু ভাল বল করতে পারে। বেশ ভাল ব্যাট করে। আশা করব সবাই ওর ব্যাটিং দক্ষতার পরিচয় পাবে দ্রুত। মাঠের সব দিকে শট মারতে পারে। বিশ্বাস হবে না হয়তো। ওর ব্যাট করার ধরণ অনেকটা এবি ডিভিলিয়ার্সের মতো। এক বছরের মধ্যে সেটাও দেখতে পাবেন আশা করি। কেকেআরে ওর ক্রিকেটজীবন দীর্ঘ এবং সফল হওয়া উচিত। হর্ষিত একটা পদ্ধতির ফসল। কয়েক বছর আগে যে পদ্ধতির শুরু।’’

হর্ষিত কত দূর এগোবেন, তা সময় বলবে। কেকেআরের প্রাক্তন মেন্টর আশাবাদী। এখনকার মেন্টর গৌতম গম্ভীরও নিশ্চয় খুশি হবেন নিজের শহরের তরুণকে দেখে। কৃতিত্ব নিতেই পারেন নীতীশ। তবু নেট বোলার থেকে স্ট্রাইক বোলার হওয়ার পথটা পেরোতে হয়েছে হর্ষিতকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন