Romario Shepherd

১০ বলে ৩৯, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আইপিএলে মুম্বইয়ের নতুন ‘পোলার্ড’!

আইপিএলে নজির গড়েছেন রোমারিয়ো শেফার্ড। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে নতুন ‘পোলার্ড’ বলা হচ্ছে তাঁকে। এই শেফার্ড আইপিএল খেলার জন্য পাকিস্তানের দল ছেড়ে এসেছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০৬
Share:

কাইরন পোলার্ডের (বাঁ দিকে) সঙ্গে রোমারিয়ো শেফার্ড। ছবি: এক্স।

আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে প্রথম বার প্রথম একাদশে জায়গা হয়েছিল রোমারিয়ো শেফার্ডের। আর প্রথম ম্যাচেই নজির গড়েছেন তিনি। ১০ বলে ৩৯ রান করেছেন। শেষ ওভারে করেছেন ৩২ রান। মুম্বইয়ের নতুন ‘কাইরন পোলার্ড’ বলা হচ্ছে তাঁকে। এই ক্যারিবীয় তারকা আইপিএলে খেলার জন্য পাকিস্তান সুপার লিগের একটি দল ছেড়ে এসেছিলেন।

Advertisement

ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের গায়ানার ক্রিকেটার শেফার্ড টি-টোয়েন্টি লিগে পরিচিত নাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতায় খেলেন তিনি। অলরাউন্ডার হওয়ায় বিভিন্ন দলে চাহিদা রয়েছে তাঁর। শেফার্ডের দিকে নজর ছিল পাকিস্তান সুপার লিগে খেলা করাচি কিংসেরও। ২০২১ সালে ক্রিকেটার ড্রাফ্‌টের সময় শেফার্ডকে কেনে তারা। ২০২২ সালে পাকিস্তান সুপার লিগ শুরু হওয়ার আগেই আইপিএলের নিলাম হয়। শেফার্ডকে কেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ভারতে খেলার জন্য করাচির দল থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন শেফার্ড। পরের বারের নিলামে তাঁকে কেনে লখনউ সুপার জায়ান্টস। প্রথম দুই মরসুমে তেমন সুযোগ না পেলেও এ বারের নিলামে তাঁকে কেনে মুম্বই।

দিল্লির আনরিখ নোখিয়ের এক ওভারে চারটি ছক্কা ও দু’টি চার মারেন তিনি। এ বারের প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত এটি এক ওভারে করা সর্বোচ্চ রান। এই ইনিংসে নজিরও গড়েছেন তিনি। এত দিন পর্যন্ত আইপিএলে স্ট্রাইক রেটের বিচারে শীর্ষে ছিলেন প্যাট কামিন্স। ২০২২ সালের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ১৫ বলে ৫৬ রান করেছিলেন তিনি। সেটাই এত দিন পর্যন্ত আইপিএলে ১০ বা তার বেশি বলের ইনিংসে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট ছিল। বিধ্বংসী ইনিংসে শীর্ষে ছিল কামিন্সের সেই ইনিংস। কিন্তু রবিবার শেফার্ড ১০ বলে ৩৯ রান করে কামিন্সের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের স্ট্রাইক রেট ৩৯০। কামিন্সের ছিল ৩৭৩.৩৩।

Advertisement

২০১৫ সালে এবি ডিভিলিয়ার্স মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১১ বলে ৪১ রান করেছিলেন। কামিন্সের ইনিংসের আগে সেটাই ছিল রেকর্ড। ডিভিলিয়ার্সের স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৭২.৭২। ২০১৯ সালে আন্দ্রে রাসেল ডিভিলিয়ার্সের সেই রেকর্ডের সব থেকে কাছে পৌঁছতে পেরেছিলেন। তিনি ১৩ বলে ৪৮ রান করেছিলেন। রাসেলের স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৬৯.২৩। তাঁদের টপকে রবিবার শীর্ষে উঠে এসেছেন মুম্বইয়ের অলরাউন্ডার।

শেফার্ডের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু ২০১৯ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এক দিনের দলে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ২০২০ সালে তিনি সুযোগ পান দেশের টি-টোয়েন্টি দলে। এখনও পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে ১৮টি এক দিনের ম্যাচে ২১৩ রান করেছেন তিনি। নিয়েছেন ১১টি উইকেট। ২৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে করেছেন ২৮৬ রান। নিয়েছেন ২২টি উইকেট। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, নিজের প্রতিভা অনুযায়ী খেলতে পারেননি শেফার্ড। সেই কারণেই হয়তো জাতীয় দলে নিয়মিত নন তিনি। কিন্তু মুম্বইয়ের হয়ে দিল্লির বিরুদ্ধে যে ইনিংস তিনি খেললেন তা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটকে বাড়তি ভরসা দেবে।

আইপিএলে হায়দরাবাদ, লখনউ ও মুম্বই ছাড়াও শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে কলম্বো স্টারস, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গায়ানা অ্যামাজ়ন ওয়ারিয়র্স ও দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লিগে জোহানেসবার্গ সুপার কিংসের হয়ে খেলেন শেফার্ড। এ বারের নিলামে মূলত পোলার্ডের কারণেই শেফার্ডকে কেনে মুম্বই। পোলার্ড এখন মুম্বইয়ের ব্যাটিং কোচ। তিনি শেফার্ডের উপর ভরসা করেছিলেন। সেই ভরসার দাম দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এই দীর্ঘদেহী ক্রিকেটার।

শেফার্ড নিজেও পোলার্ডকে আদর্শ মনে করেন। আইপিএলে মুম্বইয়ের হয়ে দীর্ঘ দিন খেলেছেন পোলার্ড। সেই দলে কী ভাবে মানিয়ে নিতে হবে সে বিষয়ে শেফার্ডকে সাহায্য করেছেন তিনি। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে শেফার্ড বলেন, “আমি পোলার্ডের কাছে অনেক কিছু শিখেছি। এই দলের সাফল্য ওর অনেক অবদান। আমিও সেটা করতে চাই। এই ম্যাচের আগে পোলার্ড আমাকে বলেছিল, আমি প্রথম একাদশে থাকব। তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিলাম।”

আইপিএলের পয়েন্ট তালিকা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কী পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিলেন সেটাও জানিয়েছেন শেফার্ড। তিনি শুধু বল দেখে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন। শেফার্ড বলেন, “আমি জানি এত বড় দলে প্রতি ম্যাচে সুযোগ পাওয়া কঠিন। তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম, যা সুযোগ পাব কাজে লাগাব। মাথা ঠান্ডা রেখেছিলাম। বল দেখে খেলছিলাম। সবাই আমার কাছে এ রকম ইনিংসই আশা করে। সেটাই করেছি।”

মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে আগে ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা যেত পোলার্ডকে। শেষ দিকে নেমে বহু ম্যাচ তিনি জিতিয়েছেন। সেই ফিনিশারের ভূমিকায় নিজেকে দেখছেন শেফার্ড। পোলার্ডের জায়গা নিতে চাইছেন তিনি। মুম্বইও চাইছে পোলার্ডের বিকল্প। লাসিথ মালিঙ্গার পরে যেমন যশপ্রীত বুমরাকে তারা পেয়েছে, পোলার্ডের ক্ষেত্রে এখনও তেমনটা হয়নি। টিম ডেভিড ধারাবাহিক নন। শেফার্ড সেই জায়গা নিতে পারেন। এখন থেকেই সবাই তাঁকে নতুন ‘পোলার্ড’ বলতে শুরু করেছে। এক ম্যাচ নয়, এই নামে সিলমোহর বসিয়ে দিতে চাইছেন শেফার্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন