IPL 2022

IPL 2022: সাদা বলের ক্রিকেটে ব্রাত্য, গত বছর রিজার্ভে থাকা উমেশ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কেকেআর শিবিরকে

চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে যে লাইন ও লেংথে উমেশ বল করেছেন তা টেস্ট ম্যাচের লেংথ। সেখানে বল করেই সাফল্য পেয়েছেন। বেশি বৈচিত্র দেখানোর চেষ্টা করেননি। নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করেছেন। গুড লেংথে বল ফেলে বাইরের দিকে সুইয়ের চেষ্টা করেছেন। ব্যাটারদের হাত খুলে খেলার সুযোগ দেননি। তাতেই সাফল্য এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ১৫:৩২
Share:

চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা হয়েছেন উমেশ ছবি: টুইটার।

প্রথম ওভারেই তাঁর হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। টি২০-তে টেস্ট লেংথে বল করেন তিনি। উইকেটে পড়ে বাইরের দিকে সুইং করে বল। বলের দিকে না এগিয়ে ক্রিজে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে শট খেলার চেষ্টা করেন গত মরসুমের কমলা টুপির মালিক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ব্যাটের কোনায় লেগে বল যায় স্লিপে। ক্ষিপ্র গতিতে ক্যাচ তালুবন্দি করেন নীতীশ রানা। উইকেট পেয়ে লাফিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায় উমেশ যাদবকে। তাকান আকাশের দিকে। ২ বছর পরে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য ঈশ্বরকে বোধ হয় ধন্যবাদ জানান। তাঁর এক মুখ হাসি বুঝিয়ে দিচ্ছিল পরিশ্রমের ফল কতটা মিষ্টি। কিন্তু যেটা দেখা যায়নি সেটা হল মনের গভীরে এক রাশ অভিমান। ক্রমাগত সুযোগ না পেয়ে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে প্রায় ব্রাত্য হয়ে যাওয়া উমেশের নবজন্ম হল ওয়াংখেড়েতে। এই মাঠ অনেক কিছু দিয়েছে ভারতকে। দীর্ঘ ২৮ বছর পরে এসেছে বিশ্বকাপ। সেই মাঠেই পুনর্জন্ম হল ভারতীয় এই জোরে বোলারের।

Advertisement

আইপিএলে একটা সময় প্রথম এগারোর নিয়মিত মুখ ছিলেন উমেশ। ২০১০ সালের আইপিএলের আগে তাঁকে কেনে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। চার মরসুম সেখানে খেলার পরে কলকাতায় আসেন উমেশ। দিল্লির হয়ে চার বছরে মোট ৪৭টি ম্যাচ খেলে ৪৩টি উইকেট নেন তিনি। কলকাতার হয়ে চার বছরে ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছেন উমেশ। কেবল মাত্র ২০১৬ সাল ছাড়া বাকি তিন মরসুমে প্রায় সব ম্যাচেই খেলেছেন তিনি। ২০১৪ সালে কলকাতাকে ট্রফি জেতাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বিদর্ভের এই পেসার।

কলকাতার হয়ে চার বছরে মোট ৪৭ ম্যাচে ৪৮টি উইকেট নেন উমেশ। এই সাফল্যের ফলে ২০১৮ সালের আইপিএলের নিলামে তাঁকে কিনতে ঝাঁপায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় তাঁকে কেনে বিরাট কোহলীর দল। প্রথম বছর দুরন্ত বল করেন উমেশ। ১৪ ম্যাচে নেন ২০ উইকেট। কিন্তু তার পরেই তাঁর আইপিএল গ্রাফ নীচের দিকে নামতে শুরু করে। ২০১৯ সালে ৮টি উইকেট পান। ২০২০ সালে মাত্র ২টি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান উমেশ। উইকেট পাননি। পরের বছর নিলামের আগে তাঁকে ছেড়ে দেয় আরসিবি। নিলামে ন্যূনতম মূল্য ১ কোটি টাকায় উমেশকে কেনে দিল্লি ক্যাপিটালস। কিন্তু একটি ম্যাচেও খেলার সুযোগ পাননি তিনি।

Advertisement

এ বারের নিলামে প্রথমে অবিক্রিত ছিলেন উমেশ। দেখে মনে হয়েছিল সুরেশ রায়না, অমিত মিশ্রদের মতো তাঁরও হয়তো আইপিএল কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু নিলামের শেষ রাউন্ডে ২ কোটি টাকায় তাঁকে কেনে কলকাতা। কেকেআর-এ ভারতীয় দলে খেলা জোরে বোলার না থাকায় উমেশের সুযোগ পাওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল। আর প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চেনালেন তিনি। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হলেন।

অথচ চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে যে লাইন ও লেংথে উমেশ বল করেছেন তা টেস্ট ম্যাচের লেংথ। সেখানে বল করেই সাফল্য পেয়েছেন। বেশি বৈচিত্র দেখানোর চেষ্টা করেননি। নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করেছেন। গুড লেংথে বল ফেলে বাইরের দিকে সুইয়ের চেষ্টা করেছেন। ব্যাটারদের হাত খুলে খেলার সুযোগ দেননি। তাতেই সাফল্য এসেছে।

ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে গিয়েও কিছুটা অভিমান ঝরে পড়ে তাঁর গলা থেকে। বলেন, ‘‘অনেক দিন সাদা বলের ক্রিকেট খেলিনি। তাই এত দিন পরে ফিরে ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়ে খুব ভাল লাগছে। আমার উপর ভরসা রাখার জন্য অধিনায়ক ও কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ।’’ নাম না করে বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বোঝাতে চেয়েছেন যে এখনও দলকে জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে কেকেআর। এ বার অধিনায়ক নতুন। দলে অনেক বদল হয়েছে। কলকাতার পুরনো ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম উমেশ। দলকে ভাল ভাবে চেনেন তিনি। দলের আবেগ বোঝেন। তাই তাঁদের হাত ধরে ২০১৪ সালের পর ফের এক বার ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখছে শাহরুখ খানের দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন