আকর্ষণ: উদ্বোধনে ফের দেখা যাবে সচিন ও অভিষেক-কে। —ফাইল চিত্র।
মাস্টার ব্লাস্টার ও তাঁর অধিনায়ক।
ড্রেসিংরুমে বহু দিন সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিলেও বৃহস্পতিবার এক জন পেলেন, এক জন হারালেন।
সচিন তেন্ডুলকর পেলেন। এই প্রথম কোচিতে হবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কোচি মানে কেরল ব্লাস্টার্সের হোম, যার অন্যতম মালিক সচিন। তিনি অবশ্য এ দিনই কেরলের মুখ্যমন্ত্রীকে মাঠে আসার অনুরোধও করে এসেছেন।
সচিনের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হারালেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। যা হওয়ার কথা ছিল যুবভারতীতে। তা আর হচ্ছে না। সৌরভও তো এটিকে-র অন্যতম মালিক।
নজিরবিহীন ভাবে বদলে গেল আই এস এলের উদ্বোধনের সূচি। গত তিন বছরে যা কখনও হয়নি।
কলকাতা থেকে কোচিতে উদ্বোধন সরে যাওয়ায় গত বারের চ্যাম্পিয়ন এটিকে-কে ১৭ নভেম্বর টুনার্মেন্টের প্রথম ম্যাচ খেলতে যেতে হচ্ছে কেরলে। কেরল ব্লাস্টার্সের সঙ্গে। পাল্টাপাল্টি হিসাবে ফিরতি এই ম্যাচ সামনের বছর হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের বদলে অবশ্য ফাইনাল পাচ্ছে যুবভারতী। যে দুটি দলই ফাইনালে উঠুক, সামনের বছর ১৭ মার্চ তাদের খেলতে হবে সল্টলেকে।
আরও পড়ুন: ঝড় তুলে জয় লিভারপুলের
অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগেই আইএসএলের সূচি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন নীতা অম্বানির কোম্পানির কর্তারা। সেখানে উদ্বোধনী ম্যাচ দেওয়া হয়েছিল কলকাতাতেই। ফুটবল স্পোর্টস ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের কর্তারা সোমবার পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলেন যুবভারতী পেতে সমস্যা হবে না। তাদের আশা ছিল, মুম্বইতে বাণিজ্য সম্মেলনের আবহে রাজ্য সরকার মুকেশ অম্বানির জায়ার কোম্পানির কর্তাদের অনুরোধ রাখবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্য আইএসএল কর্তারা যুবভারতীকে বাছলেও সেটা যে হবে না, তা প্রথম প্রকাশিত হয় আনন্দবাজারেই। বৃহস্পতিবার সরকারি ভাবে তা ঘোষণা হয়েছে শুধু। কিন্তু কেন সরিয়ে নিতে হল জাঁকজমক ও আড়ম্বরের এই কোটি টাকার অনুষ্ঠান? ক্রীড়ামন্ত্রী শহরে নেই। বিতর্কের ভয়ে তাই কোনও সরকারি কর্তাই মুখ খুলতে নারাজ। তবে তাঁরা একান্তে জানাচ্ছেন, মাঠের মাঝখানে মঞ্চ করে নাচ-গানের অনুষ্ঠান হলে মাঠ ও ঘাসের ক্ষতি হবে। গাড়ি করে সেলিব্রিটিদের ঘোরানো হলে নতুন অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক নষ্ট হবে। মাঠে বাজি পোড়ালে বা রঙিন কাগজের টুকরো ওড়ালেও ক্ষতি হবে স্টেডিয়ামের। সে জন্যই অনুমতি দেওয়া সম্ভব ছিল না।
জানা গিয়েছে, গত চার মাসে অন্তত সাত বার নানা রকম প্রস্তাব নিয়ে ক্রীড়া দফতরের অফিসার এবং যুবভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে মুম্বই থেকে শহরে এসেছেন আইএসএল কর্তারা। ক্রীড়া দফতরের এক অফিসার বললেন, ‘‘আলোচনার সময় বারবার বোঝানো হয়েছিল, বিশ্বকাপ শেষ হলে মাঠের মধ্যে খেলা হতে পারে, মঞ্চ করে অনুষ্ঠান করা যাবে না। যা করতে হবে ট্র্যাকের বাইরের ঘাসে। সেটা হলেই উদ্বোধনের অনুমতি দেওয়া সম্ভব। তা সত্ত্বেও ওরা এক তরফা সূচি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। যা দেখে আমরা অবাকই হয়েছিলাম।’’
ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান নিয়ে কলকাতার আবেগ ও প্রভাব কমানোর জন্য যুবভারতীতে উদ্বোধন করতে মরিয়া ছিলেন আইএসএল কর্তারা। বিভিন্ন মহল থেকেও অনুরোধ আসতে শুরু করেছিল অনুমতির জন্য। চিঠির পর চিঠি। তা সত্বেও অনড় ছিল রাজ্য সরকার। কারণ অনুমতি দিলে এবং মাঠের ক্ষতি হলে শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠবে। যে মাঠে ইংল্যান্ড-স্পেন বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছে, সেখানকার অবস্থা নিয়ে শোরগোল পরে যাবে।
সূত্রের খবর, সে জন্যই ঢাল তৈরি করতে পুরো বিষয়টি পাঠানো হয় মাঠ বিশেষজ্ঞদের কাছে। তাঁরা মত দেন, মাঠের মধ্যে সলমন খান বা আলিয়া ভট্টদের মতো কেউ দলবল নিয়ে নাচ-গান করলে, বাজি পুড়লে মাঠ নষ্ট হবে। সেটা মঙ্গলবার পাঠিয়ে দেওয়া হয় আইএসএল-কে। এর পরই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত। এবং সরকারি ঘোষণা।
পুরো ব্যাপারটি নিয়ে যাতে হইচই না হয় সে জন্যই মুখ রক্ষা করতে ফাইনাল দেওয়া হয়েছে যুবভারতীকে। মজার ব্যাপার হল, আইএসএল ফাইনালে সেই অর্থে কোনও অনুষ্ঠান হয় না। শুধু ট্রফি দেওয়ার অনুষ্ঠান হয়। সেটা ট্র্যাকের বাইরে মঞ্চ বেঁধে হতেই পারে। সেটাই করা হবে আইএসএলের তরফে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই ফাইনালের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।