মলিনা
জোসে মলিনা ভাগ্যের সাহায্য পাচ্ছেন। নর্থইস্ট ম্যাচের পর সেটা আরও একবার স্পষ্ট। স্প্যানিশ কোচ মানুন না মানুন, বেশ কিছু ম্যাচ আটলেটিকো দে কলকাতা জিতেছে বা ড্র করেছে লাক-এর জন্য।
চলতি একটা প্রবাদ আছে, যে সাহসী হয় সে ভাগ্যের সাহায্য পায়। কিন্তু লিখতে বাধ্য হচ্ছি মলিনা কিন্তু তাঁর টিম নিয়ে এখনও সাহস দেখাতে পারছেন না। এখন লিগ টেবলের যা অবস্থা তাতে আজ রবিবার মাতেরাজ্জির টিমের বিরুদ্ধে তাঁকে কিন্তু সাহসী হতেই হবে। না হলে ডুববেন তিনি। পড়ে যাবেন সমস্যায়। তা সে মুখে যতই ‘শেষ চারে যাবই’ বলে দিন মলিনা।
সাহসী বলতে কিন্তু খুল্লাম খুল্লা মনোভাব নিয়ে জেতার জন্য সবাই মিলে উঠে গিয়ে গোল করার জন্য ঝঁপানোর কথা আমি বলছি না। মনোভাবটা বদলানোর কথা বলছি। কলকাতার চারটি ম্যাচ বাকি। আমরা কোচেরা লিগের ম্যাচ খেলার সময় নিজস্ব একটা অঙ্ক ভেবে কাজ করি। পস্টিগাদের কোচ কীভাবে টিমকে মোটিভেট করছেন জানি না। আমি হলে কিন্তু একটা কথা টিমের মধ্যে ঢোকানোর চেষ্টা করতাম তা হল, চারে আছি না পাঁচে আছি এটা মাথায় না রেখে জেতার জন্য ঝাঁপাও। হিসেব করে দেখছি কলকাতা যে তিনটে ম্যাচ জিতেছে তার মধ্যে দু’টোই বাইরের মাঠে। সেটাই তো চেন্নাইয়ানের বিরুদ্ধে ফুটবলারদের মানসিকতা পরিবর্তনের সেরা টোটকা হতে পারে।
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আজকের ম্যাচটা কিন্তু আই এস এলের শেষ চারে যাওয়ার ব্যাপারে নির্ধারক ভূমিকা নিতে পারে কলকাতার ক্ষেত্রে। ম্যাচটা জিতলে কলকাতাকে কেউ আটকাতে পারবে না। এবং সবথেকে বড় কথা পরের বাকি তিনটে ম্যাচ খেলার সময় চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবে মলিনার টিম।
চেন্নাই এবং কলকাতার খেলা দেখে আমার মনে হয়েছে দু’টো টিমের মধ্যে ফারাক তেমন কিছু নেই। এটিকের সবথেকে বড় সুবিধা তাদের করা বারোটি গোলের মধ্যে দশটাই দ্বিতীয়ার্ধে। তার মানে টিমটা পরের দিকে ভাল খেলছে। কিন্তু সমস্যা হল যাদের গোল করার কথা সেই পস্টিগা এবং হিউম কিন্তু ফর্মে নেই। হিউম পাঁচটা গোল করলেও তিনটে পেনাল্টি থেকে। ওদের দু’জনের অভাব উইংয়ের গতি বাড়িয়ে ঢেকে দিত সমীঘ দ্যুতি। জানি না ও খেলতে পারবে কি না। ও না খেললে কিন্তু কলকাতার সমস্যা হবে। কোচ হলে কিন্তু আমি দ্যুতির বদলে ডিকাকে খেলাতাম না। অবিনাশ রুইদাসকে খেলাতাম। ওর গতি আর হঠাৎ হঠাৎ ভিতরে কাট করে ঢুকে পড়ার ব্যাপারটা কাজে লাগানোর কথা ভেবে নামাতাম।
মলিনার সবথেকে বড় অসুবিধা ওর রক্ষণ দশটা ম্যাচের পরও জমাট বাধেনি। এটা কিন্তু একজন কোচের ব্যর্থতা বলেই ধরতে হবে। এবং এর প্রধান কারণ বারবার রক্ষণের লাইন আপ বদলানো। কোচ হিসাবে জানি, বারবার কোনও কম্বিনেশন বদলালে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসে টান পড়ে। সেটাই হচ্ছে কলকাতার। অর্ণবের সঙ্গে কখনও তিরি, কখনও সেরেনো-তিরি কখনও আবার অর্ণব-সেরেনো—এরকম কেন হবে? আমার বক্তব্য, একটা কম্বিনেশন টানা খেলালে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়। বারবার বদলালে সেটা হয় না। প্রীতমের জায়গায় প্রবীর রাইট ব্যাকে ভাল খেলছে। রবার্ট অবশ্য নিজের পারফরম্যান্সের ধারেকাছে নেই। সবথেকে খারাপ লাগছে দেবজিতের সাহসিকতা, ভাল খেলাটা তেমন চোখে পড়ছে না কিন্তু রক্ষণের জন্যই।
নর্থইস্টের কাছে রক্ষণের দোষেই গোল খেয়েছে কলকাতা। মলিনাকে মনে রাখতে হবে চেন্নাইয়ানে কিন্তু জেজে আছে। ওকে আমি কোচিং করিয়েছি বলেই জানি জেজের মাথা কিন্তু খুব ঠান্ডা। পরপর গোল মিস করলেও হতাশ হয় না। লেগে থাকে। এবং জেজের সবথেকে বড় গুণ ও দুরূহ কোণ থেকে গোল করতে পারে। ওদের লেফট ব্যাক জেরিকে আমার বেশ ভাল লাগছে। কমবয়সি ছেলেটা ভাল খেলছে। চেন্নাইয়ান ঘরের মাঠে টানা চারটি ম্যাচ জিতেছে। তা সত্ত্বেও বলছি, গতবারের চ্যাম্পিয়নরা দারুণ খেলছে বলে মনে হয় না। এদের হারানো সম্ভব। তা প্রথম পর্বে দু’দলের লড়াই যতই অমীমাংসিত হোক।
(৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)