কলকাতায় খেলা স্যাঞ্চোর সঙ্গে তুলনা শুরু নেমারের

বুন্দেশলিগায় ছ’টি ম্যাচে জ্যাডন স্যাঞ্চো খেলেছেন। সব কটি ম্যাচেই মাঠে নামেন পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে। কিন্তু এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে তিনি শুরুর এগারোতে ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৫০
Share:

সম্ভাবনা: ডর্টমুন্ডের প্রথম দলেও আসতে পারেন স্যাঞ্চো। ছবি: টুইটার।

জ্যাডন স্যাঞ্চোর সঙ্গে এখনই তুলনা শুরু হয়েছে নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের। সেই স্যাঞ্চো, যাঁকে ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদেরও মনে থাকার কথা। গত বছরই তিনি ভারতে অনূর্ধ্ব সতেরো বিশ্বকাপে খেলে গিয়েছিলেন। চিলের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের প্রথম ম্যাচে ৪-০ জয়ে তাঁর দু’টি গোল ছিল। প্রতিযোগিতায় তাঁর তৃতীয় গোলটি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে। কিন্তু বুন্দেশলিগার ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে আগেই কথা দেওয়ায় তাঁকে প্রতিযোগিতার মাঝপথেই জার্মানিতে ফিরে যেতে হয়। এবং সাংঘাতিক হতাশ হন তাঁর খেলা দেখে ফুটবলপ্রেমীরা।

Advertisement

সেই স্যাঞ্চো আবার খবরে, বুন্দেশলিগায় অসাধারণ ফুটবল খেলার জন্য। পরিস্থিতি এমনই যে মাত্র আঠারো বছর বয়সেই তিনি ডর্টমুন্ডের প্রথম দলে চলে আসতে পারেন। স্যাঞ্চো একজন উইঙ্গার। প্রথমে ওয়াটফোর্ড ও পরে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির যুব দলে ছিলেন। ডর্টমুন্ড তাঁকে নিয়েছে লোন-এ। হতে পারে এক বছরের জন্য হলেও তাঁকে ছেড়ে দেওয়ায় এখন ম্যান সিটির ম্যানেজার পেপ গুয়ার্দিওলা হাত কামড়াচ্ছেন। বুন্দেশলিগায় শেষ দু’টি ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত খেলেছেন। বিশেষ করে শনিবার বেয়ার লিভারকুসেনের বিরুদ্ধে ম্যাচে। পিছিয়ে থেকেও অবিশ্বাস্য ভাবে ডর্টমুন্ড এই ম্যাচ জিততে পেরেছে, স্যাঞ্চোর অসাধারণ পাস থেকে হওয়া দুটি গোলে। শেষ পর্যন্ত ডর্টমুন্ডের পক্ষে খেলার ফল দাঁড়ায় ৪-২।

বুন্দেশলিগায় ছ’টি ম্যাচে তিনি খেলেছেন। সব কটি ম্যাচেই মাঠে নামেন পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে। কিন্তু এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে তিনি শুরুর এগারোতে ছিলেন। বুন্দেশলিগায় এ বার তাঁর পাস থেকে ছ’টি গোল হয়েছে। সঙ্গে তিনি নিজেও একটি গোল করেছেন। আপাতত স্যাঞ্চোর প্রার্থনা একটাই। যে কোনও ভাবে ডর্টমুন্ডের প্রথম দলে স্থায়ী জায়গা পাওয়া। যদিও জানিয়েছেন, বিপক্ষ ডিফেন্স ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিকল্প হিসেবে মাঠে নেমে তিনি বেশি কার্যকর হয়ে ওঠেন। বুন্দেশলিগার সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘পরে মাঠে নামলে আমার মধ্যে শক্তি অনেক বেশি থাকে। অন্যরা খানিকটা হলেও ক্লান্ত হয়ে পড়লে আমি আরও বেশি করে দলকে সাহায্য করতে পারি। এমনিতে কোচ তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে খেলাচ্ছেন। যা প্রমাণ করে আমাদের শক্তি কতখানি।’’ সঙ্গে অবশ্য এটাও যোগ করেছেন, ‘‘অবশ্যই আমি পরিবর্ত ফুটবলার হয়ে থাকতে চাই না। প্রচুর খাটছি। আশা করি প্রথম দলেও জায়গা করে নিতে পারব।’’

Advertisement

এই মরসুমে ছ’টি গোল ইউরোপের সেরা পাঁচটি লিগে আর কেউ করাতে পারেননি। ডর্টমুন্ডে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর বয়স আঠারোও হয়নি। গত মরসুমের জুলাই মাসে ম্যান সিটির একটি প্রাক-মরসুম সফরে তিনি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। তখনই স্যাঞ্চো ডর্টমুন্ডে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন এবং সিটিও তাঁকে ছেড়ে দেয়। এখন দেখা যাচ্ছে, গুয়ার্দিওলার ক্ষতিই ডর্টমুন্ডের লাভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ১৬ দলে স্যাঞ্চোর কোচ ছিলেন ড্যান মিশিচে। এই কোচ আবার তাঁর সঙ্গে কম বয়সের নেমারের তুলনা করেছেন। ইংল্যান্ডের এক নামী দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ও সত্যিই বর্ণময় চরিত্র। যার খেলা সব সময়ই আনন্দ দেয়। একই সঙ্গে নেমারের মতোই কার্যকরী।’’

২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা মারিয়ো গোৎজেও এখন ডর্টমুন্ডের প্রথম দলে নিশ্চিত নন। অথচ স্যাঞ্চোকে এগারোয় নেওয়ার দাবি উঠছে। ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, ডর্টমুন্ডের সুইস কোচ লুসিয়াঁ ফাভা ধীরে ধীরে স্যাঞ্চোকে বুন্দেশলিগার মতো কঠিন লিগের জন্য তৈরি করে নিচ্ছেন। যে লিগে শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন খুব বেশি হয়। যে কারণে এখন পর্যন্ত তিনি কোনও ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৩২ মিনিট খেলেছেন। আঠারো বছরের এই বিস্ময় প্রতিভা তাঁর সাফল্যের জন্য অনেকটা কৃতিত্ব দিচ্ছেন দলের অধিনায়ক মার্কো রয়েসকে, ‘‘কোথায় যেন আমাদের মধ্যে একটা ভিতরকার যোগাযোগ আছে। আমি ওকে বুঝি। ও আমাকে বোঝে। ও অনেক কিছুই আমাকে শেখায়। শুরুতে আমি একেবারেই পরিণত ছিলাম না। ও আমাকে বোঝাল, সবার আগে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের খেলাটা খেলে যেতে হবে। আর সেটাই আমি করছি। কে না জানে মার্কো একজন বিরাট ফুটবলার। ওর সঙ্গে খেলতে পেরে সত্যিই আমি দারুণ খুশি।’’ স্যাঞ্চোর প্রশংসা করেছেন রয়েসও। বলেছেন, ‘‘যখনই আমরা কিছুটা হলেও ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখনই জ্যাডন মাঠে নেমে আমাদের অস্ত্র হয়ে ওঠে। ওকে পাওয়াটা আমাদের কাছে বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন