হুঙ্কার: প্রথম গোলের পরে কোলাদোর উল্লাস। নিজস্ব চিত্র
বেহালার ছেলে। কর্মসূত্রে থাকেন দুবাইয়ে। রবিবারের ডার্বি দেখতে সেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সুদীপ সাহা উড়ে এসেছিলেন কলকাতায়। বিরতিতে গলার লাল-হলুদ স্কার্ফ উড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নাচছিলেন তিনি। ভিভিআইপি বক্স থেকে সেই নাচ দেখছিলেন ডেভিস কাপে ভারতীয় টেনিস দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন মহেশ ভূপতি। সঙ্গী ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের তারকা রোহন বোপান্না।
সকালে তিন ঘণ্টা অনুশীলন করে আই লিগের ডার্বি দেখবেন বলেই বিকেলে এই দুই টেনিস তারকা চলে এসেছিলেন যুবভারতীতে। বিরতিতে লাল-হলুদ সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে মহেশ বলছিলেন, ‘‘বহু দিন ধরে ইচ্ছা ছিল কলকাতায় বসে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখব। সেই ইচ্ছাপূরণ হয়ে গেল। ইস্টবেঙ্গলের ৮ নম্বর ফুটবলারটি (খাইমে সান্তোস কোলাদো) দারুণ গোল করল।’’
ভূপতির মুখে যাঁর প্রশংসা, সেই কোলাদো অবশ্য খেলা শেষে যুবভারতী ছাড়ছিলেন সতীর্থ বোরখা গোমেস পেরেসের গাড়িতে সওয়ার হয়ে। সাংবাদিকরা সেই গাড়ির পিছনে ছুটলেও কোলাদোরা গাড়ি থামাননি। কিন্তু যুবভারতীর প্রধান প্রবেশদ্বারে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির সামনে তাঁর গাড়ি আটকে দাঁড়ায় এক খুদে ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাকে দেখেই গাড়ির দরজা খুলে নেমে এসে নিজস্বীর আবদার মেটান কোলাদো। তার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলে গেলেন, ‘‘সমর্থকদের মুখে হাসি। তাই জয় ওদেরই উৎসর্গ করলাম। এতেই সন্তুষ্ট হলে চলবে না। আই লিগ চাই।’’
আরও পড়ুন: ফের ডার্বি জয় ইস্টবেঙ্গলের, ম্যাচের নায়ক জবি
একচল্লিশ দিন আগে প্রথম ডার্বি ম্যাচে নজর কেড়েছিলেন স্পেনের স্পোর্টিং খিখনের যুব দল থেকে আসা ফুটবলার। সে দিন গোল পাননি। এ দিন পেলেন। শান্ত মাথা। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে ড্রিবল করতে পারেন। সুযোগসন্ধানী। এই গুণগুলো কাজে লাগিয়েই ডার্বির অন্যতম নায়ক হয়ে মাঠ ছাড়লেন কোলাদো।
মাস খানেক আগেই টানা সাতটা বড় ম্যাচ জেতা হয়নি বলে মুষড়ে পড়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে জোড়া ডার্বি জিতে এ দিন তাঁদের মুখেই আলো করা হাসি। রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই কাশিম আইদারা, লালরাম চুলোভারা দল বেঁধে ক্যামেরার সামনে বন্দুক চালানোর পোজ দিচ্ছিলেন। দু’বছর আগে বড় ম্যাচে ডার্বিতে গোল করে এ ভাবেই পোজ দিয়েছিলেন মোহনবাগানের সনি নর্দে। মরসুমে জোড়া ডার্বি জিতে সেই শোধ নিলেন কাশিমরা। ভেঙে দিলেন মিথ—সনি খেললে ডার্বি হারে না মোহনবাগান।
ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো অবশ্য ভাবতে নারাজ আই লিগ হাতের নাগালে। ড্রেসিংরুমে গিয়ে ছেলেদের মনে করিয়ে দেন, ‘‘এখনই উচ্ছ্বাসে ভাসার কিছু নেই। মোহনবাগান লিগ তালিকায় এক নম্বরে ছিল না। পরের ম্যাচগুলোও জিততে হবে।’’ সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও বলে গেলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক দিন উন্নতি করছি। আগের বড় ম্যাচের সঙ্গে এই বড় ম্যাচের ফারাক হল, এ বার খেলাটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি।’’ উঠে এসেছে সনিকে আটকানোর কথাও। যে প্রসঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কোচ বললেন, ‘‘সনি বল ধরলেই ওকে কড়া নজরে রেখেছিলাম। আর কিছুই নয়।’’
লাল-হলুদ শিবিরে এখন চিন্তা পরবর্তী ম্যাচ নিয়ে। এনরিকে এসকুয়েদা বলে গেলেন, ‘‘পরের ম্যাচগুলি ধারাবাহিক ভাবে জিততে হবে।’’ আর কমলপ্রীতরা বলছেন, ‘‘রক্ষিত, আমি, কাশিম, বালি গত বছর আই লিগ জিতেছি। এ বারও জিততে হবে।’’
দেখে, শুনে মনে হচ্ছে, ইস্টবেঙ্গলই এখন সাজানো বাগান।