জেজে, সনি (ইনসেটে)। চমকে দিলেন বেঙ্গালুরুতে।
দ্বিতীয়ার্ধে বেঙ্গালুরু লেফট ব্যাক লালচুয়ান মার্চিং অর্ডার পেতেই বাটানগরের বাড়ি থেকে কান্তিরাভায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধিকে ফোনটা করলেন তিনি।
তিনি শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। বেঙ্গালুরুর এই স্টেডিয়ামে সবুজ-মেরুনের অন্যতম সেরা জয়ের ম্যাচে কোচ ছিলেন শঙ্কর। তাঁর কোচিংয়েই এই স্টেডিয়ামে দশ জনের মোহনবাগান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দু’দশক আগে কলকাতা ফিরেছিল সিজার্স কাপ নিয়ে।
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে প্রাক্তন বাগান কোচ বলছিলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুর উপর এবার বাগান এক্সপ্লোশন দেখার জন্য তৈরি থাকুন।’’
তা সেটা সত্যিই দেখা গেল। বাকি ম্যাচে সঞ্জয় সেনের দল অ্যাশলে ওয়েস্টউডের বেঙ্গালুরুকে উড়িয়ে দিল জোড়া ‘ব্যাঙ্গালোর টর্পেডো’ দিয়ে।
কী এই বাঙ্গালোর টর্পেডো? প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ শক্তির অন্যতম বিষ্ফোরক। যা আবিষ্কার হয় এই শহরে সে সময়ে বসবাসরত ব্রিটিশ আর্মি ইঞ্জিনিয়ারদের দৌলতে। আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সেনা বিপক্ষের বেড়াজাল কাটতে ব্যবহার করে এই অস্ত্র। যা বাগান কোচ ব্যবহার করলেন বেঙ্গালুরুতে বসেই। এক নয়, এক জোড়া টর্পেডো দিয়ে।
জেজে এবং সনি নর্ডি।
বিকেল পাঁচটা থেকে যুদ্ধের মেজাজটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। গ্যালারিতে চলছিল পোস্টার, পাল্টা পোস্টারের লড়াই। যা দেখে খেলা দেখতে আসা এই শহরের বাগানরত্ন অরুময় নৈগম হাসতে হাসতে এক সময় বলেই বসলেন, ‘‘ওরা যাই করুক, আজ আমার মোহনবাগানকে হারাতে পারবে না।’’ ৯০ মিনিট পর অরুময় অব্যর্থ প্রমাণিত। বেঙ্গালুরু পারলও না।
অথচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড চেষ্টা কম করেননি। ভারত সফরে দক্ষিণ আফ্রিকার আমদানি ব্লকাথন থিওরিও তো আমদানি করে ফেলেছিলেন তিনি। চার ব্যাকের সামনে কলিন্সের পাঁচিল। ৪-১-৪-১ ছকে সুনীলদের এক মাত্র স্ট্রাইকার কোরিয়ান কিম। আর এখানেই ডাহা ফেল তিনি। আর সফল সঞ্জয়ের জোড়া ব্যাঙ্গালোর টর্পেডো জেজে-সনি। ওয়েস্টউডে্র রক্ষণ ভেঙে যাঁরা মুল্যবান তিন পয়েন্ট বাগানে আনলেন উদ্যান নগরী থেকে। কোরিয়ান কিম এতই স্লথ, যে তাঁকে সারাক্ষণ বগলদাবা করে ঘুরলেন লুসিয়ানো। বেঙ্গালুরু কোচ এত আধুনিক কথাবার্তা বলেন, কিন্তু এই ম্যাচে তিনি কেন যে বিনিথকে প্রথম থেকে নামিয়ে সুনীলকে স্ট্রাইকারে নিয়ে গেলেন না তা বোঝা গেল না।
উল্টো দিকে বাগানের দুই কোচ সঞ্জয় ও শঙ্করলাল জানতেন বিপক্ষ কোচ কী স্ট্র্যাটেজি নিতে পারেন। তাই ম্যাচের শুরু থেকেই বেঙ্গালুরু আক্রমণের এপিসেন্টার যে সেকেন্ড বল তা বন্ধ করে দিলেন। আর তালাচাবি রইল প্রণয় হালদারের হাতে। আক্রমণের যাবতীয় জোশ সেই যে সুনীলদের জিম্মা থেকে হারিয়ে গেল, তার পর আর তাদের গোটা ম্যাচে দু’একটা বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ছাড়া আর দেখা যায়নি। আর দশ জন হয়ে যাওয়ার পর সেই যে ম্যাচ ধরে নিল সনি-জেজেরা, সেখান থেকে পাঁচ গোল হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এ দিন আরও একটা মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন সঞ্জয় সেন। কাতসুমিকে মিডল করিডরে এনে কেন লুইসকে উইং দিয়ে অপারেট করতে দিয়ে।
ম্যাচের পর সমর্থকদের করতালির মধ্যে স্টেডিয়াম ছাড়ছিলেন সনি নর্ডি। পায়ের ব্যথায় কাবু হাইতি ফুটবলার কথা বলার জায়গায় ছিলেন না। তাঁর হয়ে প্রক্সি দিয়ে গেলেন দিনের প্রথম গোলদাতা জেজে। ‘‘মাঠে নামার আগেই কোচকে কথা দিয়েছিলাম আজ জিতব। সেটা শেষ পর্যন্ত ফলে যাওয়ায় খুশি। চলতি মরসুমে প্রচুর খেটেছি। আর তার সুফল এখন পাচ্ছি।’’ পাশে থাকা মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন ছয় ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে বেঙ্গালুরুর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে বলে গেলেন, ‘‘আমাদের অনূর্ধ্ব-২৩ নিয়ে অনেক কথা অ্যাশলে বলেছে শুনলাম। ওর কথা শুনে তো বাগানের টিম হবে না। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। তবে এই জয় আমাদের লিগ জিততে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’’
আর অ্যাশলে? তিনি অবশ্য স্বমেজাজেই। বিরতিতে মোহনবাগান ম্যানেজারের সঙ্গে ড্রেসিংরুমের বাইরে হাতাহাতি করলেন। ভেঙে দিলেন ঘড়িও। যার সুবাদে ফের বিতর্কের শিরোনামে ওয়েস্টউড।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, রাজু (প্রবীর), লুসিয়ানো, কিংশুক, ধনচন্দ্র, লুইস (অভিষেক), প্রণয় (সৌভিক), কাতসুমি, সনি, জেজে, গ্লেন।