স্লোভাকিয়ার জালে গোমেজের গোল। রবিবার ইউরোয়। ছবি: এএফপি
ঝড়ের পূর্বাভাসটা আগের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ম্যাচেই পেয়েছিলাম। এ দিন স্লোভাকিয়ার মাটিতে সেটা প্রবল গতিতে আছড়ে পড়ল শুধু।
ইউরোর প্রথম দু’টো ম্যাচের পর কোনও কোনও ফুটবলবোদ্ধা জার্মানিকে প্রায় ফ্রান্স ছাড়া করে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশের ফিনিশারদের যোগ্যতা নিয়েও।
কিন্তু গোমেজ-মুলাররা রবিবার এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করলেন। বোঝালেন দু’বছর আগে মারাকানায় যেমন ফুটবল ‘এভারেস্টের’ শৃঙ্গ-জয় করেছিলেন তেমনই যোগ্যতা দিয়েই ইউরোর তাজ বার্লিনে নিয়ে যেতে এসেছেন তাঁরা। পাশাপাশি কোয়ার্টার ফাইনাল শুরুর আগেই বিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া। বুটের ঠকঠকানিতে বুঝিয়ে দেওয়া— জার্মান ব্রিগেডের শক্তি-ভাণ্ডার আগে যেমন ছিল, ঠিক তেমনই আছে। বরং স্লোভাকিয়া ম্যাচ দেখার পর তো মনে হল, আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে জোয়াকিম লো-র দল।
জার্মানি কতটা শক্তিশালী, সেটা লো-র দুঃসাহসিকতা দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। ভাবতে পারেন, নক আউট রাউন্ড আর তাঁর টিমের অন্যতম বলপ্লেয়ার বাদ। টানা তিন ম্যাচ দেখলেন গটজেকে। শুরুতে স্ট্রাইকার পরে উইং খেলালেন। কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তাঁর ফর্মেশনে মানিয়ে নিতে পারছেন না, তখনই তাঁকে বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা করে দিলেন। আমার মতে ড্র্যাক্সলারের লেফট উইংয়ে প্রত্যাবর্তন আরও আক্রমণাত্মক করে তুলল জার্মানিকে। অ্যাটাকিং থার্ডে তিনি এতটা জায়গা জুড়ে খেললেন যে, ওজিল কার্যত ফ্রি-প্লেয়ার হয়ে গেলেন। নিটফল প্রচুর ছোট পাস আর ওয়াল প্লে হতে থাকল স্লোভাকিয়ার ছোট বক্সে। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, দশ জন ডিফেন্স করেও মুলারদের আটকাতে পারছেন না স্লোভাক ফুটবলাররা।
আরও একটা ব্যাপার। ইউরোতে এ বার জার্মানিকে প্রথম বার প্রেসিং ফুটবল খেলতে দেখা গেল। যখন আক্রমণ হচ্ছে, এক সঙ্গে আট-নয় জন ফুটবলার হামলে পড়ছেন বিপক্ষের বক্সে। বোয়াতেংয়ের ১-০ সেই ছন্দের নমুনা। সবচেয়ে অবাক করে দেওয়ার মতো ঘটনা লো-র নতুন ছন্দের চাপে গোমেজও উজ্জীবিত। যে ফুটবলার দশটা সুযোগ পেলে একটা গোল করেন, সেই গোমেজও একটায় একটা গোল করে চলে গেলেন। যাকে বলে ফটো ফিনিশে ২-০। শেষ কবে গোমেজকে একবারে এ রকম নিখুঁত গোল করতে দেখেছি, মনে করতে পারছি না।
তবে এ সবের পরেও বলছি, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সেই বিধ্বংসী ফর্মে খুঁজে পেলাম ড্র্যাক্সালারের জন্যই। হতে পারে শেষ ম্যাচে ওঁকে বাদ দেওয়ার পরে আরও অভিমানী হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই গোল করেই জবাবটা মাঠে দিলেন।
এ বার আর বলতে কোনও দ্বিধা নেই— জার্মান্স আর ব্যাক। আর শুধু ব্যাক নয়, ব্যাক ‘উইথ আ ব্যাং’। আসলে জার্মানি মানে বোধহয় এটাই। যত সমালোচলা হবে, ততই ভয়ঙ্কর হবে। যত কঠিন হবে প্রতিপক্ষ ততই ক্ষিপ্র হবেন ফুটবলাররা। স্লোভাকিয়া এ দিন একটাও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে, বলা যাবে না। উল্টে যাঁরা ‘ফিনিশার নেই ফিনিশার নেই’ বলে চিৎকার করছিলেন, তাঁদের মুখ বন্ধ করে দিলেন লো। শুরুতে ওজিল একটা পেনাল্টি নষ্ট করা সত্ত্বেও বলছি।
তবে সব কি অসাধারণ জার্মানির? বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কি কোনও দুর্বলতা নেই? আছে। লো-র সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হতে পারে তাঁর ফর্মেশন। চারটে ম্যাচে এক ফর্মেশনে খেলালেন তিনি। ইউরোর মতো বড় মঞ্চে বিপক্ষ দলের তাবড় কোচেরা নিশ্চয় সেটা নোটবুকে লিখে রাখছেন!
শেষ আটে বেলজিয়াম
হাঙ্গেরিকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা পাকা করে নিল বেলজিয়াম। রবিবার তারা জিতল ৪-০ গোলে। দলের হয়ে চারটে গোল করেন অল্ডারউইরেল্ড, বাটসহুওয়াই, হ্যাজার্ড ও ক্যারাসকো। শুক্রবার কোয়ার্টারে বেলজিয়ামের মুখোমুখি গ্যারেথ বেলের ওয়েলস।