হাবাস মন্ত্রে জবির শাপমুক্তির স্বপ্ন

এটিকে-তে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের কোচিংয়ে নিয়মিত অনুশীলন করছেন জবি। শহর জুড়ে বিজ্ঞাপনেও তাঁর মুখ। অথচ নির্বাসনের কারণে ম্যাচ খেলা বন্ধ।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

মরিয়া: জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন জবি। ফাইল চিত্র

ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে তাঁর এটিকে-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় ফুটবলে। এত বিতর্কের পরে নতুন ক্লাবে যোগ দেওয়ার পরেও স্বস্তি ফেরেনি জবি জাস্টিনের মনে।

Advertisement

এটিকে-তে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের কোচিংয়ে নিয়মিত অনুশীলন করছেন জবি। শহর জুড়ে বিজ্ঞাপনেও তাঁর মুখ। অথচ নির্বাসনের কারণে ম্যাচ খেলা বন্ধ। আগামী শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এটিকের জার্সিতে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে গোল করেই শাপমুক্ত হতে চান জবি।

প্রিয় যুবভারতীতেই গত মরসুমে আই লিগে ইস্টবেঙ্গল বনাম আইজল এফসি ম্যাচে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন জবি। বিপক্ষের ফুটবলারদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও অভব্য আচরণের জন্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও ছ’ম্যাচ নির্বাসিত করে। কিন্তু সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের মাত্র তিনটি ম্যাচ বাকি থাকায় শাস্তি বহাল রয়েছে এই মরসুমেও। ফলে আইএসএল-এর প্রথম তিনটে ম্যাচ খেলতে পারেননি জবি। ছিটকে গিয়েছেন জাতীয় দল থেকে।

Advertisement

জবির আদর্শ ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আই এম বিজয়ন বলছিলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে থাকলে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তার উপরে কোনও ফুটবলার যদি দেখে, তাকে ছাড়াই দল জিতছে, তা হলে চাপ আরও বেড়ে যায়।’’

প্রায় ন’মাস ক্লাব ফুটবল খেলতে না পারার হতাশা গ্রাস করেছিল জবিকেও। তবে তিনি নিজেই তা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে বার করেছেন। আনন্দবাজারকে জবি বললেন, ‘‘নিজের ভুলের জন্যই শাস্তি পেয়েছি আমি। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার দায়িত্ব এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।’’ জবি যোগ করলেন, ‘‘নিজেকে বলতাম, গত মরসুমে তুমি দারুণ খেলেছ। এ বার এটিকে-র জার্সিতেও সফল হবে। অতীত নিয়ে ভেবো না। আইএসএলেও নিজেকে প্রমাণ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাকে ভাল খেলতেই হবে।’’

জবির যন্ত্রণা হাবাসকেও অস্থির করে তুলেছিল। প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকারকে উজ্জীবিত করার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন প্রথম আইএসএলে এটিকে-কে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ। অভিভূত জবির কথায়, ‘‘ম্যাচে কী দল খেলাবেন তা সাধারণত অনুশীলনেই স্পষ্ট করে দেন হাবাস স্যর। আমি নির্বাসনের কারণে প্রথম তিনটি ম্যাচ খেলতে পারব না জানা সত্ত্বেও আমাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দলে রাখতেন। বলতেন, আমার ভাবনায় তুমি ভীষণ ভাবেই আছ। যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু মন দিয়ে অনুশীলন করে যাও।’’

হাবাসের পরামর্শেই দুঃসময়ে নিজেকে অনুশীলনে ডুবিয়ে রেখেছিলেন জবি। দল যখন কলকাতার বাইরে খেলতে গিয়েছে, তখন একা একা অনুশীলন করেছেন। ফিট থাকার জন্য নিউ টাউনের রাস্তায় সাইকেল চালিয়েছেন। সাঁতার কেটেছেন। জিমে ট্রেনিং করেছেন।

আইএসএলের প্রথম ম্যাচে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে এগিয়ে গিয়েও জয় হাতছাড়া করেছে এটিকে। যুবভারতীতে পরের ম্যাচেই হায়দরাবাদ এফসি-কে ৫-০ চূর্ণ করে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রয় কৃষ্ণেরা। তৃতীয় ম্যাচে চেন্নাইয়িন সিটি এফসি-কে হারিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে উঠেছিল এটিকে। এই মুহূর্তে অবশ্য তিন ম্যাচে ছ’পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে দু’বারের চ্যাম্পিয়নেরা। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে সাত পয়েন্ট নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই এটিকে-কে টপকে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে জামশেদপুর এফসি। অসাধারণ খেলে সুনীল ছেত্রীদের জয়ের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দেন গোলরক্ষক সুব্রত পাল। শনিবার যুবভারতীতে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ এটিকে-র। জবি অবশ্য জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বললেন, ‘‘টানা দু’টো ম্যাচ জিতে এই মুহূর্তে আমাদের দল দারুণ ছন্দে রয়েছে। আশা করছি, এই ম্যাচটাও জিততে সমস্যা হবে না।’’

প্রশ্ন উঠছে, জবির জন্য কি ছন্দে থাকা এটিকে দলে পরিবর্তন করার ঝুঁকি আদৌ নেবেন হাবাস? আত্মবিশ্বাসী এটিকে স্ট্রাইকার বলছেন, ‘‘আশা করছি, জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে দলে আমি থাকব। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

নেবেন কোচ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন