নিজেকে ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ বলতে দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। যেখানেই যান বিতর্ক বাধিয়ে বসেন। কিন্তু দিনের শেষে বিতর্ক যত তৈরি করেন, দলকে তত ট্রফিও জেতান। তিনি— ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কোচ জোসে মোরিনহো।
মেসির মতো প্রতিভাকে উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর মগজাস্ত্রের দাম কোনও তারকা ফুটবলারের সমান। যেখানেই তিনি গিয়েছেন সাফল্য ও ট্রফি পিছু নিয়েছে তাঁর। তিনি— ম্যাঞ্চেস্টার সিটি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা।
ইতালির মতো দুর্বল দলকে ইউরো কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। জুভেন্তাসকে ধ্বংসের মুখ থেকে বের করে আবার ইউরোপিয়ান শক্তি বানিয়েছেন। তিনি— চেলসি কোচ আন্তোনিও কন্তে।
তিন বিশ্বমানের মগজ। যাঁদের ডিকশেনারিতে ‘হার’ বলে শব্দ নেই। এই তিন চরিত্র যদি কোনও সিনেমায় থাকে তা হলে এক সপ্তাহে একশো কোটি উঠতই। তাই তো এ বার প্রিমিয়ার লিগের মরসুমও হয়ে উঠেছে ব্লকবাস্টার। লা লিগায় যদি মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার, বেল থাকেন, তা হলে ইপিএলও এ বার গর্ব সহকারে বলতে পারবে আমাদের মোরিনহো, গুয়ার্দিওলা, কন্তে আছে। তারকা কোচের সমাগমে জমে উঠেছে ফুটবল ভুরিভোজ।
ইপিএল মানে এমনিতেই জমজমাট একটা ফুটবল প্যাকেজ। যেখানে রূপকথার গল্প আছে। শেষ দিনের নাটক আছে। ধুন্ধুমার সমস্ত ডার্বি আছে। এ বার মেন্যুতে সঙ্গে থাকল তিন কোচ। যাদের দৌলতে মাঠের থেকেও সবার আকর্ষণ বেশি মাঠের বাইরে কী হবে, তা নিয়ে।
তিন ম্যাচ হওয়ার পর রিপোর্ট কার্ড— তিন কোচেরই পয়েন্ট সমান। লিভারপুল, আর্সেনালের মতো দল যেখানে হোঁচট খেয়েছে, ‘বিগ থ্রি’ কিন্তু তিন ম্যাচেই তিনটে জিতেছে। তা হলে কি এদের মধ্যেই ট্রফি ভাগ্য ঠিক হবে ইপিএলের? মোহনবাগানের আই লিগ জয়ী কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এই তো সবে মরসুম শুরু। বাকি ৩৫টা ম্যাচে এখনও অনেক কিছু হতে পারে। তবে দুই ম্যাঞ্চেস্টার ক্লাব এ বার খুব শক্তিশালী।’’
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড সত্যিই প্রমাণ করেই দিয়েছে ফুটবলারদের সই করতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ লাগে না। বড়লোক একটা মালিক লাগে। একশোটার মতো স্পনসর লাগে। ব্যস তা হলেই পোগবার মতো ফুটবলার নাচতে নাচতে চলে আসবেন।
গুয়ার্দিওলা আবার কোনও ক্লাবে যাওয়া মানে আগেভাগেই তার জন্য তৈরি করা থাকে তারকাখচিত দল। তিনি সেই বলিউড পরিচালকের মতোই যিনি সলমন খান ছাড়া সিনেমা করতে চান না। বায়ার্নে বুন্দেশলিগা জিতলেও ইউরোপে রিবেরি, রবেনদের নিয়ে ডাহা ফ্লপ ছিলেন পেপ। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তো তার হাতে আবার আর এক দুর্দান্ত দল তুলে দিয়েছে। কেভিন দে’ব্রায়ান, সের্জিও আগেরো তো ছিলেনই। তার উপরে লেরয় সানে, ইকেই গুন্দোগান, ক্লদিও ব্র্যাভো, গ্যাব্রিয়েল জেসাস— কী সমস্ত নাম। এরপরেও গুয়ার্দিওলার দল ইউরোপে চ্যালেঞ্জ করবে না? কিন্তু এমনি এমনি তো গুয়ার্দিওলার জন্য সবাই লাইন দিয়ে থাকে না। কোনও এক তরুণ মেসিকে উইং থেকে ফলস নাইনে তো গুয়ার্দিওলাই খেলিয়েছিলেন। তাঁর দল মানেই তো সুন্দর ফুটবলের প্রতীক। অর্কেস্ট্রার মতো। যাঁরা জিতবেও। আবার দারুণ সমস্ত পাসিং মুভও তৈরি করবে।
কন্তের কাছে চ্যালেঞ্জটা অবশ্য অন্য। গত মরসুমের চেলসিকে দেখে মনে হয়েছিল তারা ফুটবল খেলাটাই ভুলে গিয়েছে। জুভেন্তাস ও ইতালির মতোই ফের চেলসিরও পুনর্জাগরণের দায়িত্ব তাঁর ওপর। কন্তে এসে দ্রুত নিজের মানসিকতা ফুটবলারদের মধ্যে ভরেও দিয়েছেন। কারণ তিনি জানেন দুই ম্যাঞ্চেস্টারের তুলনায় চেলসি ‘আন্ডারডগ’। আর আন্ডারডগের কোচ হওয়া মানে এক নয়, এগারোর উপর ভরসা রাখতে হয়।
পাঁচ বার আই লিগজয়ী কোচ আর্মান্দো কোলাসো বললেন, ‘‘কোচ জাদুকর নয়। ইতালিতে যে দল কন্তে পেয়েছে সেটা কি চেলসিতে আছে? ওকে কিন্তু সময় দিতে হবে।’’
আর স্পেশ্যাল ওয়ান? পর্তুগিজ কোচ কিন্তু সময় নষ্ট করেননি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে একদম মোরিনহোচিত দলে পরিণত করতে। ইব্রাহিমোভিচ, পোগবা, মাখিতারিয়ান, বেইলি— আগেভাগে নিজের দল গুছিয়েছেন। খেলার স্টাইলেও আর সেই লুইস ফান গলের ঘুমন্ত ফুটবল নেই। বরং মোরিনহোর লড়াকু ব্র্যান্ডের ফুটবল। মোরিনহোর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে খারাপ খেলেও দিনের দিন ঠিক জিতে বেরোবেন। সঞ্জয় সেন তাই তো এগিয়ে রাখছেন মোরিনহোকে, ‘‘গুয়ার্দিওলা দারুণ কোচ। আমায় আলাদা করে সেটা বলতে হবে না। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে কোচিং করানোর আলাদা চাপ আছে। মোরিনহো সেটা ভাল সামলাচ্ছেন। তার উপর প্রিমিয়ার লিগ সম্বন্ধেও জানেন। তাই একটু হলেও এগিয়ে থাকবেন।’’ সত্যিই তো তিন বার প্রিমিয়ার লিগজয়ী কোচ মোরিনহো। খুঁটিনাটি জানেন লিগের। তাঁর স্ট্র্যাটেজি এখনও রেজাল্ট তুলে আনতে পারে। তারকা কোচের মেলায় তাই মোরিনহো এখনও
‘স্পেশ্যাল ওয়ান’!