বার্লিনে আজ লাতিন শিল্প বনাম ইউরোপের প্রাচীর

পুরনো যন্ত্রণার প্রতিশোধই বারুদ সেই ‘ওল্ড লেডি’র

কালসিওপোলি বিতর্ক এখনও সময়ে-সময়ে রক্তাক্ত করে টিমটাকে। সাল, ২০০৬। রেফারিদের ‘হাত করে’ ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে জুভেন্তাস অভিযুক্ত। যে বছর চতুর্থ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইতালি, সে বছরই তার ক্লাব ফুটবলের অন্যতম প্রাচীন টিম ডুবে গিয়েছিল মহা-অসম্মানে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

কালসিওপোলি বিতর্ক এখনও সময়ে-সময়ে রক্তাক্ত করে টিমটাকে।

Advertisement

সাল, ২০০৬। রেফারিদের ‘হাত করে’ ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে জুভেন্তাস অভিযুক্ত। যে বছর চতুর্থ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইতালি, সে বছরই তার ক্লাব ফুটবলের অন্যতম প্রাচীন টিম ডুবে গিয়েছিল মহা-অসম্মানে।

আজও যার প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি ইতালীয় ফুটবল। যে সেরি ‘এ’ এক সময় ফুটবলের মহাতারকাদের দাপটের মঞ্চ ছিল, আজ সেই লিগ যেন মরুভূমি। মহাতারকাদের আগমন দূরের বস্তু। সমর্থকরাও সে ভাবে খেলা দেখতে আসেন না মাঠে। দীর্ঘ ন’বছর কেটে গিয়েছে। পরিস্থিতি খুব না বদলালেও দিন বদলেছে, সময় বদলেছে। এবং ইতিহাস আবার কলঙ্কের জুভেন্তাসকে সুযোগ করে দিয়েছে, কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত করার। কিছুটা হলেও ইতালীয় মহাশক্তিদের ম্লান হওয়া আধিপত্য ফিরিয়ে দেওয়ার।

Advertisement

শনিবার বার্লিনে ইউরোপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে মাঠে নামছে ইতালীয় ফুটবলের ‘ওল্ড লেডি’ জুভেন্তাস। যে লড়াই বুফোঁর মতে ন’বছর আগের যন্ত্রণা ভোলানোর লড়াই। ‘‘ক্লাবের সঙ্গে অনেক কঠিন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। আবার পুরনো দাপট ফিরিয়ে দিতে চাই। সেরি এ টানা জেতায় কিছুটা হলেও যন্ত্রণার রেশ কেটেছে,’’ বলছেন বুফোঁ। আন্দ্রে পির্লো আবার মনে করছেন কালসিওপোলি বিতর্কের জেরে ইতালীয় ফুটবল ছেড়ে চলে গেলে হয়তো এই মুহূর্ত উপভোগ করতে পারতেন না। ‘‘আমি তখন এসি মিলানে ছিলাম। ওরাও বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল। অনেক ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েও মিলান ছাড়িনি। আজ জুভেন্তাসে খেলতে পেরে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’’

দলের দুই মহাতারকা যাই বলুন না কেন, জার্মান কিংবদন্তি ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার মনে করছেন জুভেন্তাস চ্যাম্পিয়ন হলেও ইতালীয় ফুটবলের কোনও উন্নতি হবে না। ‘‘আমার মনে হয় লা লিগাই বিশ্বের সেরা লিগ। তার পর আসবে বুন্দেশলিগা আর প্রিমিয়ার লিগ। তার পরে হয়তো সেরি এ। জুভেন্তাস সফল হলেও ইতালীয় লিগের দুর্বলতা ঢাকতে পারবে না।’’

বলা হচ্ছে, জুভেন্তাসকে ফাইনালে তোলার পিছনে আসল হাত ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের। জুভেন্তাসকে ফাইনালে তোলার পিছনে অন্যতম দুই কারিগর কার্লোস তেভেজ আর পল পোগবা। যাঁদের এক সময় বাতিল করে দিয়েছিলেন স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন। পির্লো যেমন আজও কারণ খুঁজে পান না কী করে পোগবার মতো তারকাকে বিক্রি করে দিল ম্যান ইউ। পির্লোর সঙ্গে একমত প্রাক্তন ম্যান ইউ ডিফেন্ডার রিও ফার্দিনান্দ। যাঁর মতে ম্যান ইউর বাতিল হওয়া তারকা হয়ে উঠবেন আগামী দিনের মহাতারকা। ‘‘যদি খুব বেশি চোট না পায়, পোগবা তা হলে এক দিন রোনাল্ডোর মতোই হয়ে উঠবে। আমি তো চেয়েছিলাম ও থাকুক ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে,’’ বলছেন ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ফুটবলার।

ঠিক তেমনই জাভিয়ের মাসচেরানো জানেন, একত্রিশের কার্লোস তেভেজ এখনও কতটা দরকারে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। কেরিয়ারের শুরুতে একসঙ্গে খেলতেন মাসচেরানো-তেভেজ। পরে দু’জনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেলেও একে অন্যের প্রতি সম্মান কমেনি। বার্লিনে জুভেন্তাস যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে নামবে, তার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান তেভেজের। একাই সাত গোল করে যিনি টিমকে ফাইনালে তুলে দিয়েছেন। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে ঘরোয়া যুদ্ধের আগে তাই বার্সেলোনাকে এক প্রকার সতর্ক করে দিচ্ছেন মাসচেরানো। ‘‘তেভেজ বড় মাপের ফুটবলার। জিততে হলে ওকে শান্ত রাখতে হবে।’’ ম্যাচের আগে আবার জিওর্জিও কিয়েলিনির চোট মাথাব্যথা বাড়িয়েছে জুভেন্তাস কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির।

বার্লিন মহাযুদ্ধ দেখতে আবার অভিনব ভাবেই হাঁটতে হাঁটতে বার্লিন রওনা দিয়েছেন এক জুভেন্তাস সমর্থক। নিকোলো দে মারচি নামক সমর্থক তুরিন থেকে হেঁটেই বার্লিন পৌঁছতে চান। যাঁকে জুভেন্তাস মালিক কথা দিয়েছেন, সময় মতো বার্লিন পৌঁছতে পারলে তার জন্য একটা টিকিট রাখা থাকবে। গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৭০০ মাইলের সফরে রওনা দেন দে মারচি। যাঁর একটাই বার্তা, ‘‘মোরাতার গোল দেখতে আমি পাঁচশো মাইল হেঁটে তার পর ফের পাঁচশো মাইল হাঁটতে রাজি।’’

জুভে সমর্থকের পাগলামিকে টিম কতটা সার্থক করে, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন