আইপিএলের প্রথম দিনটা যদি হয়ে থাকে ডোয়েন ব্র্যাভোর, তা হলে দ্বিতীয় দিনটা নিঃসন্দেহে কে এল রাহুলের। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে রবিবার আইপিএলের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করলেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ওপেনার। মাত্র ১৪ বলে। শেষ পর্যন্ত ১৬ বলে ৫১ রান করলেন রাহুল। তাঁর ইনিংসে রয়েছে ছ’টি বাউন্ডারি, চারটি ওভারবাউন্ডারি। দিল্লির ১৬৬ রান সাত বল বাকি থাকতে তুলে নিল পঞ্জাব। প্রীতি জিন্টার দল একাদশ আইপিএল অভিযান শুরু করল ছ’উইকেটে ম্যাচ জিতে।
এ বারে প্রায় নতুন ভাবে দল সাজিয়েছে পঞ্জাব। নিয়ে এসেছে কে এল রাহুল, করুণ নায়ার, যুবরাজ সিংহদের। রবিবারের ম্যাচে পঞ্জাবের জয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিলেন কর্নাটকের দুই ব্যাটসম্যান— রাহুল এবং নায়ার। তিন নম্বরে নেমে নায়ার করলেন ৩৩ বলে ৫০। তবে যুবরাজ সিংহ (২২ বলে ১২) একেবারেই ছন্দে ছিলেন না।
দলে ক্রিস গেল থাকলেও প্রথম ম্যাচে তিনি খেলেননি। ওপেন করেছিলেন ময়ঙ্ক অগ্রবাল এবং রাহুল। এবং শুরু থেকেই রাহুলের তাণ্ডবে উড়ে গেল দিল্লি। রাহুলের ওই বিধ্বংসী ইনিংসে পঞ্জাব ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। আপনি কি ঠিক করে নিয়েছিলেন, শুরু থেকেই ওই রকম আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করবেন? ম্যাচের পরে টিভি-তে রাহুল বলছিলেন, ‘‘সে রকম কোনও আলাদা পরিকল্পনা ছিল না। তবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আগ্রাসী ব্যাটিং তো করতেই হবে।’’
রাহুল-ঝড় যে এই ভাবে আছড়ে পড়বে, সেটা সম্ভবত ভাবতে পারেনি দিল্লি শিবির। পারিবারিক বিতর্কের পরে মাঠে ফিরেছিলেন মহম্মদ শামি। কিন্তু দু’ ওভারে দিলেন ২৬ রান। দিল্লির রান তাড়া করতে নামার সময় কী ছিল আপনাদের পরিকল্পনা? রাহুল বলছেন, ‘‘প্রথম দিকে নতুন বলে স্ট্রোক খেলা একটু সহজ হয়ে যায়। তাই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম, শুরুর দিকে চালিয়ে খেলব। যাতে পরের দিকে ওভার পিছু ৮-৯ রানের বেশি করতে না হয়।’’ সেই কৌশল যে এ ভাবে খেটে যাবে, তা সম্ভবত রাহুলও ভাবেননি।
অভিনন্দন: ম্যাচ সেরা রাহুলকে আলিঙ্গন প্রীতির। ছবি: পিটিআই
যে ব্যাটিং তিনি এই ম্যাচে করলেন, তার পরে কি প্রত্যাশার চাপটা আরও বেড়ে যাবে না? ওপেন করতে নামলেই তো এখন তাঁর থেকে এ রকম বিধ্বংসী ইনিংস আশা করবে সবাই। রাহুল বলছেন, ‘‘এই ইনিংসটা আমি ভুলে যেতে চাই। যে আত্মবিশ্বাস পেলাম এই ইনিংসটা খেলে, সেটা কাজে লাগবে। কিন্তু এই ইনিংসটা আর মাথায় রাখতে চাই না।’’
আরও একটা ব্যাপার বলে দিচ্ছেন রাহুল। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আইপিএলের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির মালিক এখন আপনি। এই রেকর্ড করে কী রকম লাগছে? রাহুল বলেন, ‘‘আমাকে অনেকেই দেখেন টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে। কিন্তু আমি যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও ব্যাটটা করতে পারি, সেটা এ দিনের পরে বোঝানো গেল। এই রেকর্ডটা করে তাই ভাল লাগছে।’’
রাহুল যে দিন এই ইনিংসটা খেললেন, সে দিন ডাগআউটে ছিলেন এমন দুই ব্যাটসম্যান, যাঁদের কাছ থেকেই এমন ইনিংস প্রত্যাশা করে এসেছে দর্শকেরা। ক্রিস গেল এবং বীরেন্দ্র সহবাগ! রাহুল শুরুটাও করেন বিধ্বংসী মেজাজে। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারে নেন ১৬ রান। মহম্মদ শামির পরের ওভার থেকে ১১ রান। এর পরে এক অমিত মিশ্রের এক ওভার থেকে ওঠে ২৪ রান। এর আগে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল সুনীল নারাইনের (১৫ বলে)।
নতুন চেহারার পঞ্জাবকে দেখার পাশাপাশি ক্রিকেট ভক্তদের আরও একটা ব্যাপার নিয়ে আগ্রহ ছিল। সেটা হল, অশ্বিন কী রকম নেতৃত্ব দেন। প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক অশ্বিন ভালই নম্বর পেয়ে গেলেন। পাওয়ার প্লে-তেই তিন স্পিনার নিয়ে আসেন তিনি। নিজে বোলিং ওপেন করেন। তার পরে নিয়ে আসেন আইপিএলে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হওয়া আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমান-কে। ১৭ বছর ১১ দিন বয়সে যার আইপিএল অভিষেক ঘটল। তরুণ রহমান চমকে দিল চার ওভারে ২৮ রানে দু’উইকেট নিয়ে।
চমকে দিয়েছেন অশ্বিনও। শুধু নেতৃত্বে নয়, বোলিংয়েও। রবিবার বেশ কয়ের বার তাঁকে লেগস্পিন বল করতে দেখা গেল। এক বার তো গৌতম গম্ভীর রীতিমতো পরাস্ত হয়ে গেলেন অশ্বিনের লেগস্পিনে। নেতৃত্ব দিয়ে কেমন লাগছে? অশ্বিনে জবাব, ‘‘ম্যাচের আগে একটু নার্ভাস তো ছিলামই। প্রথম ম্যাচের পরে এখন একটু সামলে নিয়েছি।’’
আইপিএল শুরুর আগে সহবাগ বলেছিলেন, বোলার-ক্যাপ্টেনদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রথম ম্যাচে অন্তত পঞ্জাবের মেন্টরকে সঠিক প্রমাণিত করেছেন অশ্বিন।